কর্মবিরতিতে কয়েকটি মেডিকেলের ইন্টার্নরা
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: চার ইন্টার্ন চিকিৎসককে দেওয়া শাস্তির প্রতিবাদে এবং নিজ কর্মস্থলে সব চিকিৎসকের নিরাপত্তার দাবিতে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এখনো কর্মবিরতি পালন করছেন ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। তাঁদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে আরও কয়েকটি সরকারি ও বেসরকারি মেডিকেল হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কর্মবিরতি শুরু করেছেন।
চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর স্বজনের সঙ্গে অপ্রীতিকর ঘটনার জেরে গত বৃহস্পতিবার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চারজনের ইন্টার্নশিপ ছয় মাস স্থগিত এবং অন্যত্র বদলির নির্দেশ জারি করে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের ওই শাস্তির পর থেকেই ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কাজে বিরত রয়েছেন। আজ শনিবার তাঁরা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়ে কর্মবিরতি শুরু করেন।
হাসপাতালের মূল ফটকে বেলা ১১টা থেকে ঘণ্টাব্যাপী ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা মানববন্ধন, সমাবেশ ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। সেখানে তাঁদের মুখপাত্র ও শাস্তি পাওয়া ইন্টার্ন চিকিৎসক কুতুবউদ্দিন বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের ওপর স্থগিতাদেশ এবং বদলির নির্দেশ প্রত্যাহারসহ পূর্বঘোষিত সাত দফা দাবি দ্রুত মেনে নিতে হবে। দাবি না মানা পর্যন্ত আন্দোলন চলছে, চলবে।
এই সাত দফা দাবি হলো, সর্বস্তরের চিকিৎসকদের নিরাপদ কর্মস্থল নিশ্চিতকরণ, ইন্টার্ন চিকিৎসক লাঞ্ছনাকারী রোগীর স্বজনদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, হাসপাতালে নিরাপত্তা বাড়ানো ও অতিরিক্ত আনসার মোতায়েন, হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ হিসেবে ন্যূনতম একজন উপপরিদর্শক নিয়োগ, দর্শনার্থীর প্রবেশ সীমিতকরণ এবং কোনো চিকিৎসক আক্রান্ত হলে হাসপাতাল-প্রশাসন কর্তৃক নিজ উদ্যোগে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ।
এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মাসুদ আহসান তাঁর কার্যালয়ে হাসপাতালের সব বিভাগীয় প্রধান ও রেজিস্ট্রারকে নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। এই ধর্মঘটের কারণে চিকিৎসাসেবা যাতে কোনোভাবেই বিঘ্নিত না হয়, সে জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন।
শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অর্থোপেডিক বিভাগের প্রধান রেজাউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে, এখনো সেবায় কোনো প্রভাব পড়েনি।’
সকাল নয়টা থেকে দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৪৭ জন ইন্টার্ন চিকিৎসক জরুরি বিভাগ ছাড়া আর কোনো ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেননি। এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) দিনাজপুর শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা শরিফুল ইসলাম।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা সকালে মানববন্ধন করেছেন। শাস্তি প্রত্যাহারের দাবিতে তাঁরা দুপুর ১২টা থেকে আলটিমেটাম দিয়ে ৭২ ঘণ্টার কর্মবিরতিতে গেছেন। এর মধ্যে দাবি না মানলে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে যাওয়ার হুমকি দেন তাঁরা।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ এফ এম রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা সকাল থেকেই অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করছে। আমরা চেষ্টা করছি সেবার মান ঠিক রাখার।’
কর্মবিরতির পাশাপাশি সকাল সাড়ে ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা কলেজের শহীদ মিনারের পাদদেশে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কাজে যোগ না দেওয়ার ঘোষণা দেন তাঁরা। দুপুরে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক আনন্দ মোহন সাহা বলেন, এই কর্মবিরতির কারণে চিকিৎসাসেবা এখন পর্যন্ত ব্যাহত হয়নি।
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজসহ বেসরকারি তিনটি মেডিকেল কলেজ নর্থ ইস্ট, জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া এবং সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা দুপুরে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে মানববন্ধন করেন। কর্মসূচিতে তাঁরা বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজের চার ইন্টার্ন চিকিৎসকের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার ও কর্মক্ষেত্রে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানান। পাশাপাশি দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা কর্মবিরতি অব্যাহতি রাখার ঘোষণা দেন।
সকাল আটটা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি শুরু করেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। একই সঙ্গে তাঁরা হাসপাতালের সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। হাসপাতালের উপপরিচালক শফিকুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসা কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে জরুরি চিকিৎসক দল কাজ করছে। সেই সঙ্গে চিকিৎসকেরা অতিরিক্ত সময় দিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করছেন।
সকাল থেকে কর্মবিরতি শুরু করেছেন ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা। হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন, দাবি মানা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।