মহাসড়কে ইট-বালির জোড়াতালি
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ঢাকা-টাঙ্গাইল ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় সৃষ্ট খানা-খন্দ ইট-বালু দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। এতে ঈদে ঘরমুখো মানুষের চলাচল নির্বিঘ্ন হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
টানা বৃষ্টিতে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে গেছে, কোথাও কোথাও ফুলে উঠেছে কার্পেটিং। আবার কোথাও দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা।
এ পরিস্থিতিতে সাময়িকভাবে সড়ক যান চলাচল উপযোগী করতে সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষকে মহাসড়কের খানা-খন্দে ইট বালি ফেলতে দেখা যায়।
সোমবার সকালে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ঘুরে দেখা যায়, গাজীপুরের টঙ্গী থেকে শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তা পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির পানি জমে রয়েছে। গাজীপুর সদর উপজেলার ভোগাড়া, চান্দানা চৌরাস্তা, শালনা ও শ্রীপুরের মাওনা এলাকায় কার্পেটিং উঠে গেছে। অনেক এলাকায় কার্পেটিং ফুলে উঠেছে।
এ কারণে যানবাহন স্বাভাবিক গতিতে চলতে না পারায় এসব এলাকায় প্রতিদিনই দীর্ঘ যানজট হচ্ছে বলে এলাকাবাসী জানান।
মাওনা মহাসড়ক থানার ওসি সানোয়ার হোসেন বলেন, মাওনা-চৌরাস্তার দুই দিকে আধা কিলোমিটার, নয়নপুর-চৌরাস্তা, ভরাডোবা, নাসির গ্লাস কারখানার সামনে, স্কয়ার মাস্টারবাড়ি, সিডস্টোর, মল্লিকবাড়ি প্রভৃতি এলাকায় মহাসড়কে ইট-বালি সরে গিয়ে খানা-খন্দ সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া ভালুকা বাসস্ট্যান্ডের একপাশে ফোরলেনের কাজ চলায় অন্যপাশের পুরনো রাস্তার এক কিলোমিটার এলাকায় গর্ত তৈরি হয়েছে।
এতে যানবাহন চলাচলে বিঘ্নিত হচ্ছে।
চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার ব্যবসায়ী মো. মাসুদ বলেন, যোগাযোগমন্ত্রী প্রায়ই গাজীপুরে সড়ক পরিদর্শনে আসেন। মন্ত্রী আসার আগেই দ্রুত রাস্তা ঠিক করতে দেখা যায়। কিন্তু পরে আর কোনো খবর থাকে না।
“এখনই দ্রুত সড়ক মেরামত করা না হলে ঈদের আগে রাস্তা আরো খরাপ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।”
চান্দনা এলাকার ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সামনে সড়কের দুই পাশেই কার্পেটিং উঠে গেছে। সব সময় পানি জমে থাকে। এ কারণে ওই এলাকায় প্রতিদিনই যানজট হয়।
তিনি বলেন, ঢাকা-বাইপাস সড়কের ভোগড়া থেকে মীরের বাজার এলাকা পর্যন্ত সড়কে কার্পেটিং উঠে গিয়ে ফুলে গেছে।
একই অবস্থা দেখা যায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কেও। সম্প্রতি এই মহাসড়কের গাজীপুর সদর উপজেলার ভাগড়া, কাড্ডা, কোনাবাড়ি, মৌচাক, সফিপুর, চন্দ্রা মোড় ও কালিয়াকৈর এলাকায় খানা-খন্দ সৃষ্টি হয়েছে।ইট ও বালু ফেলে এগুলো মেরামত করছে সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ।
কোনাবাড়ি কলেজের শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমান বলেন, কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়ক চার লেন করায় সেখান থেকে পুরনো কার্পেটিং রাস্তার পাশে ফেলে দেয়া হয়। এখন ওইগুলো উঠিয়ে এনে চন্দ্রা এলাকার খানা-খন্দ মেরামত করা হচ্ছে।
“এটা কেমন টেকসই হবে সেটা তো বুঝাই যাচ্ছে।”
সকালে ঘুরে দেখা যায়, কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা তিন রাস্তার মোড় এলাকার খানা-খন্দগুলি মেরামত করা হচ্ছে। কালিয়াকৈর-নবীনগর সড়ক থেকে ফেলে দেয়া কার্পেটিংয়ের গুড়া গর্তে ফেলে চলছে মেরামত কাজ। সড়কের গর্তে ফেলার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আবার সেগুলো উঠে যেতে দেখা যায়।
গাজীপুর সদর উপজেলার কোনাবাড়ি বাজার এলাকায় প্রায় তিন থেকে চারশ’ ফুট এলাকাজুড়ে সড়কের দুই পাশে পানি জমে আছে। ওই সব এলাকায় অর্ধশতাধিক খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়েছে। সকালে কয়েকজন শ্রমিককে ইট ও বালি ফেলতে দেখা যায় সেখানে।
সড়কে জমে থাকা পানি সরানোর ব্যবস্থা না করে পানির মধ্যেই ইট আর বালি দিয়ে সড়ক মেরামত চলছে।
এভাবে সড়ক মেরামত করা হলে দুই- একদিনের বেশি তা টিকবে না বলে এলাকাবাসী দাবি করেন। আবার টানা বৃষ্টি হলে সড়কের বেহাল অবস্থা হবে বলেও মনে করেন তারা।
এ বিষয়ে গাজীপুর সড়ক ও জনপথের উপ সহকারী প্রকৌশলী সুমন সিনহা বলেন, বৃষ্টি হলো কার্পেটিংয়ের শত্রু। বৃষ্টি হলে কার্পেটিং উঠবেই। সড়কে পানি জমে থাকায় এখন কার্পেটিং করে লাভ নেই। তাই ইট ও বালি দিয়ে খানা-খন্দগুলো ভরাট করা হচ্ছে।
গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় বলেন, ঈদে ঘরমুখো মানুষ যাতে যানজটের বিড়ম্বনা ছাড়াই বাড়ি ফিরতে পারে সেজন্য বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে সড়কে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদ, শাখা সড়কগুলো রিকশা মুক্ত রাখা এবং সেগুলোতে যানবাহন চলাচলে নিয়ন্ত্রণ রাখার কাজ চলছে।