আজান প্রসঙ্গে সনুকে হত্যার হুমকি দিলেন নবাব

প্রতিবেদক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা:

বাংলার নবাব স্যার সলিমূল্লাহ’র নাতি, নবাব আলী হাসান আসকারী ভারতীয় ক্লাসিক শিল্পী সনু নিগামের আজান সম্পর্কে করা এক টুইটের প্রতিবাদ করেন। সনু নিগাম যদি সমগ্র মুসলমানদের কাছে ক্ষমা না চান তাহলে নবাবের সাথে দেখাহওয়া মাএই হত্যা করা হবে বলে জানিয়েছেন নবাব আলী হাসান আসকারী ।

২২ এপ্রিল (শনিবার) আলী হাসান আসকারী তার নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ৭মিনিট ১৮ সেকেন্ডের এক ভিডিও বার্তার মাধ্যমে এ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি ঐ শিল্পীর নাম উল্লেখ্য করে বলেন, তার উক্তিতে ইতি মধ্যে আমরা যারা সচেতন জনগণ আছি, সচেতন মুসলমান আছি সবাই অত্যন্ত কষ্ট পেয়েছি। আমরা আশা করিনি সনু নিগামের মত লোকের মুখে এমন কথা শুনব ! তিনি আশা প্রকাশ করেন, তার এই ভিডিও বার্তাটি সনু নিগাম পর্যন্ত যাবে এবং তিনি বিশ্বাস করেন সনু নিগাম তার এই বার্তাটি দেখবেন ।

আলী হাসান আসকারী সনু নিগামকে অনুরোধ করেছেন, যত দ্রুত সম্ভাব দিল্লীর জামে মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছে যেয়ে জাতির উদ্দেশ্যে ক্ষমা প্রার্থনা করার। তিনি আরো বলেন, যদি দিল্লী যাওয়া সম্ভাব না হয় তা হলে নবাবের নিজস্ব ব্যাবস্থাপনায় আজমীর শরীফে দেওয়ানজীর মাধ্যমে ভারতবর্ষ তথা সমগ্র মুসলিম জাতির কাছে ক্ষমা চেয়ে নিতে।, তিনি বিশ্বাস করেন তার এই ক্ষমা চাওয়ার মাধ্যমে মুসলমানরাও সনু নিগামকে ক্ষমা করে দিবেন।

নবাব তার এই ভিডিও বার্তায় এ পর্যায়ে কঠোর হুশিয়ারি উচ্চরন করে বলেন, যদি ঐ শিল্পী ক্ষমা না চান ! “আমি কসম করে বলছি, যিনি আমাকে সৃস্টি করেছেন” । “জনাব সনু নিগাম আপনি আজানকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন … আপনি গোটা বিশ্বের যেখানে যেই দিন যেই মূহুর্তে আমার সামনে পড়বেন সেই দিন সেই মূহুর্তই হবে আপনার জীবনের শেষ মূহুর্ত।

এছাড়াও নবাব আলী হাসান আসকারী বাংলাদেশের সকল ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের কাছে জানিয়ে দিয়েছেন বাংলার মাটিতে সনু নিগাম যাতে কোনদিন না আসে। যদি আপনাদের কারো সাথে পূর্বের কোন চুক্তি থাকে, সেই চুক্তি বাতিলের জন্যও সাফ জনিয়ে দেন।

নবাব তার এই ভিডিও বার্তায় কঠিন ভাষায় আরো স্পষ্ট ভাবে জানিয়েছেন, “যদি কেউ সনু নিগাম কে শান্তি প্রিয় বাংলার মাটিতে আনার মত ভুল করেন ! তা হলে শুধু সনু নিগামকে নয় আপনাদেরও হত্যা করা হবে” ।

উল্লেখ্য, নবাব আলী হাসান আসকারীর দাদা নবাব সলিমুল্লাহ (জন্ম ১৮৭১ সালের ৭ ই জুন,-মৃত্যু: ১৬ জানুয়ারি ১৯১৫) ঢাকার নবাব ছিলেন। তার পিতা নবাব খাজা আহসানউল্লাহ ও দাদা নবাব খাজা আব্দুল গনি তিনি নিখিল ভারত মুসলিম লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠা। নবাব সলিমুল্লাহ তার মাএ ৪৪ বছরের জীবদ্দশায় বাংলার মানুষের জন্য অসামান্য অবদান রেখে গেছেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই ছিলেন অত্যন্ত ধর্মপ্রিয়। ফলে অভিজাত পরিবারের সন্তান হয়েও তিনি সাধারণ মানুষের কাছাকাছি অবস্থান করতেন। সাধারণ মানুষের দুঃখকে তিনি নিজের দুঃখ মনে করতেন।তিনি আকাতরে দান-খয়রাত করতেন।

তিনিই সর্বপ্রথম পানীয় জল, ইলেকট্রিসিটি এবং টেলিফোন ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে আধুনিক ঢাকার জন্ম দেন। তার জীবনের প্রথম দিকে জনগণের কথা চিন্তা করে নবাবীর লোভ না করে মোমেনশাহীর ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। নবাব সলিমূল্লাহ যিনি ১৯০৩ সালে বড় লাট লর্ড কার্জন ঢাকায় সফরে এলে তার নিকট পূর্ব বাংলার সমস্যাগুলো তুলে ধরেন এবং ১৯১১ সালের ২৯ আগস্ট ঢাকার কার্জন হলে ল্যান্সলট হেয়ারের বিদায় এবং চার্লস বেইলির যোগদান উপলক্ষে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নওয়াব আলী চৌধুরীকে নিয়ে পৃথক দুটি মানপত্র নিয়ে ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছিলেন।

একই সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ঢাকার রমনা এলাকায় নিজ জমি দান করেন, বাবার নামে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলও (বর্তমানে বুয়েট) প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলার এই নবাব সলিমূল্লাহ যিনি ১৯০৬ সালে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদী ও তাদের দোশরদের ক্রমাগত আক্রমন থেকে নিজস্ব ইতিহাস ঐতিহ্য এবং ধর্ম রক্ষায় প্রায় ছয় মাসের প্রচেষ্টায় পাক-ভারত উপমহাদেশে ‘অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ’ গঠন করেছ।

পরবর্তীতে তার আন্দোলনের ফলে ব্রিটিশ সরকার কর্তৃক শিক্ষা বিভাগে মুসলমানদের জন্য সহকারী পরিদর্শক ও বিশেষ সাব ইন্সপেক্টরের পদ সৃষ্টি করেন। নবাব সলিমূল্লাহ বর্ণবাদী-ব্রাহ্মণ্যবাদী চক্রান্তে বিট্রিশ সামাজ্যবাদে শত বছরের অধিক চাষাভূষা, কচোয়ান-দাঁরোয়ান ও গোলাম বানিয়ে রাখা মুসলিমদের কথা ভেবে প্রথম জেগে উঠেন তারপর মুসলিমদের সংগঠিত করার কাজ শুরু করেন। ১৯০৫ সালে বঙ্গদেশকে দুই ভাগে ভাগ করে, ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও আসাম নিয়ে ঢাকাকে রাজধানী করে পূর্ববঙ্গ গঠন করেন।

তিনি বেঁচে থাকতে সুদূর তুরস্কের ভূমিকম্পে মানুষের কষ্টের কথা শুনে সাহায্যের জন্য টাকা-পয়সা পাঠিয়েছিলেন। যিনি মানুষকে তার সকল সম্পদ অকাতরে বিলিয়ে দিয়ে ঋণীও হয়েছিলেন। সোনালী ব্যাংক সদরঘাট শাখায় এখনও তার বন্ধক রাখা সিন্ধুক “দরিয়ায়ে নূর” রক্ষিত আছে।

ঢাকার নবাব সলিমুল্লাহর পূর্ব পুরুষ ইংরেজদের দালালি করলেও নবাব সলিমুল্লাহ তিনি ছিলেন ব্যতিক্রম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা নিয়ে ততকালীন হিন্দু সমাজ এবং লাটের সাথে তার বিরোধিতা সৃষ্টি হয়। ফলশ্রুতিতে মাত্র ৪৪ বছর বয়সে ১৯১৫ সালের ১৬ জানুয়ারি কলকাতায় এই ব্রিটিশদের ষড়যন্ত্রে তাকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয় বলেই ধারনা করা হয়। মৃত্যুর পর নদীপথে নবাবের লাশ সদরঘাটে আনা হলেও কাউকে দেখতে দেওয়া হয়নি।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ