জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে বিতর্ক অহেতুক

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধির হার নিয়ে প্রতিবছরের বিতর্ককে অহেতুক ও নিরর্থক বলে মনে করেন বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, প্রবৃদ্ধির হার দিয়ে অর্থনীতির হালচাল বোঝা যায় না। আর ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জনের কথা যে বলা হয়, সেটা মেনে নিলে অত গতিশীল মনে হয় না দেশের অর্থনীতির অন্য সূচকগুলোকে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে আজ রোববার প্রথম আলোর অতিথি হিসেবে সংবাদকর্মীদের উদ্দেশে এক বিশেষ বক্তব্যে ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এসব কথা বলেন।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, সৌভাগ্য বলি আর অনুকূল পরিস্থিতিই বলি, গত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের পর দেশে বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হয়নি, কৃষি উৎপাদনও ব্যাহত হয়নি। এ সময়ে বিশ্ববাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের অবস্থান যেমন পোক্ত হয়েছে, প্রবাসী আয়ও (রেমিট্যান্স) দাঁড়িয়েছে গড়ে জিডিপির ১০ শতাংশের মতো।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, বৈদেশিক বাণিজ্যের লেনদেনের ভারসাম্য বজায় রাখতে অন্য দেশগুলোকে যেমন টানাপোড়েনে থাকতে হয়, পোশাক রপ্তানি ও প্রবাসী আয়ের যৌথ অবদানে তা থেকেও মুক্ত বাংলাদেশ। তার ওপর বাড়তি সুবিধা হচ্ছে ভালো বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
এত কিছুর পরও অর্থনীতির বড় দুর্বলতাগুলো এই জিডিপির প্রবৃদ্ধির আড়ালে ঢাকা পড়ে আছে বলে মনে করেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। তিনি বলেন, দুর্বলতাগুলোর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে আর্থিক খাতে অব্যবস্থাপনা। রাষ্ট্র খাতের ব্যাংকগুলোতে যেসব সমস্যা আছে, সেগুলো সংক্রমিত হচ্ছে বেসরকারি খাতের ব্যাংকেও। অথচ ব্যাংক খাতই হচ্ছে আর্থিক খাতের হৃৎপিণ্ড। হল-মার্কের লোকেরা কত টাকা নিয়ে গেল এবং এই টাকা জিডিপির তুলনায় কত কম টাকা বা বেশি টাকা, সেই পরিমাণটা বড় বিষয় নয়। বিষয় হচ্ছে এসবের মাধ্যমে পুরো আর্থিক খাতই প্রচণ্ডভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের মতে দ্বিতীয় দুর্বলতা হচ্ছে মূল্যায়নহীন বড় অবকাঠামো নির্মাণ। তিনি বলেন, বড় অবকাঠামো লাগবেই। তবে এগুলোর মূল্যায়নের কাজটিও দরকার এবং প্রকল্পের ভেতরেই এ ব্যবস্থা থাকা উচিত। পদ্মা সেতু নিজেরা করে ফেললাম ভালো কথা, তার মানে এই নয়, একবার বললাম মেট্রোরেল করব, আবার বললাম কর্ণফুলীতে টানেল হবে ইত্যাদি। অর্থাৎ বাস্তবায়নের একটা পরিকল্পনা থাকা দরকার, যার খুব অভাব রয়েছে।
বিনিয়োগের পরিবেশ ভালো না থাকাটাকে তৃতীয় দুর্বলতা বলে মনে করেন ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। বলেন, এ ক্ষেত্রে বড় ব্যাপার হচ্ছে আস্থার অভাব। অর্ধেক জীবন কানাডা বা যুক্তরাষ্ট্রে, বাকি অর্ধেক বাংলাদেশে—এ রকম বহু লোক আছে। ফিলিপাইন ও থাইল্যান্ডের উদাহরণ যদি দেওয়া যায়, ফিলিপাইন অনেক সম্ভাবনাময় থাকলেও এগোতে পারেনি। কারণ, ফিলিপাইনের লোকেরা সম্পদ জমা রাখত যুক্তরাষ্ট্রে। আর থাইল্যান্ডের শিল্পপতিরা কখনোই সম্পদ বিদেশে নিয়ে যাননি। দেশটি এগিয়েছে নিজের শক্তিতে। সম্পদ পাচার রোধে দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা না নিলে বাংলাদেশকেও একসময় খেসারত দিতে হবে।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, ব্যাংক খাত থেকে লুটপাটের পাঁচ হাজার কোটি টাকা কোথা থেকে কোথায় গেছে—ব্যাংক চ্যানেলের মাধ্যমেই তা বের করা যায়। দুর্নীতি দমন কমিশন যে প্রাগৈতিহাসিক পদ্ধতিতে জেলগেটে দাঁড় করিয়ে জিজ্ঞাসা করছে, এত টাকা গেল কই, এর কোনো মানে নেই।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ