সিসি ক্যামেরায় মিল্কির হত্যাকারীর ছবি
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক মিল্কিকে হত্যার সময়কার ছবি ধরা পড়েছে গুলশানের একটি বিপণি বিতানের ক্লোজসার্কিট ক্যামেরায়।
আর তাতে যাকে গুলি ছুড়তে দেখা গেছে, সেই ব্যক্তি যুবলীগেরই নেতা এইচ এম জাহিদ সিদ্দিক তারেক বলে র্যাব নিশ্চিত হয়েছে।
ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিল্কি হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে যুগ্ম সম্পাদক তারেককে এরই মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার ভোররাতে গুলশানে শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন মিল্কি।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক কিসমৎ হায়াত এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, “র্যাব এ পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে মূল হত্যাকারী তারেক রয়েছে।”
শপার্স ওয়ার্ল্ডের সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা চিত্রে দেখা যায়, প্রাইভেকার থেকে মিল্কি নামার পর সাদা পাজামা-পাঞ্জাবি ও টুপি পরা এক যুবক বাম কানে মোবাইলে কথা বলতে বলতে মিল্কির সামনে এসে ডান হাতে ছোট আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে প্রথমে একটি গুলি ছোড়ে।
গুলিবিদ্ধ মিল্কি বাম দিকে হেলে মাটিতে পড়ে হামাগুঁড়ি দিতে থাকেন। এসময় ওই যুবক মিল্কিকে লক্ষ্য করে সাত/আটটি গুলি ছোড়েন। এরপর পেছন থেকে এক যুবক মোটর সাইকেল চালিয়ে এলে গুলিবর্ষণকারী যুবক ওই মোটর সাইকেলের পেছনে বসে চলে যায়। ওই সময় আরেক যুবককেও গুলি ছুড়তে দেখা যায়।
র্যাব কর্মকর্তা কিসমৎ বলেন, “সাদা পাঞ্জাবি পরা যে যুবকটিকে গুলি ছুড়তে দেখা যায়, সেই তারেক।”
তারেককে মঙ্গলবার ভোরে উত্তরার একটি হাসপাতাল থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাবের গোয়েন্দা শাখার প্রধান জিয়াউল আহসান বলেন, “তারেক তার সহযোগীর ছোড়া গুলিতে আহত হন।”
মিল্কির মা জাহানারা এরশাদ এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, সোমবার রাত ১০টার দিকে মোহাম্মদপুরের বাড়িতে ফেরেন তার ছেলে।
“আর বাইরে যাবে না বলে নিজের গাড়িচালক বেলাল হোসেনকেও বিদায় দেয় সে। তারপরই একটি ফোন এল, এরপর সে বেরিয়ে গেল।”
রাতে ঘনিষ্ঠ সহযোগী মারুফ রেজা সাগরের সঙ্গে তার গাড়িতে করে বেরিয়েছিলেন মিল্কি। সাগর যুবলীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা হলেও ছিলেন মিল্কির আস্থাভাজন।
মিল্কির বাসা মোহাম্মদপুর এলাকায় হলেও এক সময়ে পরিবারের সঙ্গে তিনি থাকতেন মতিঝিলে। তার রাজনৈতিক তৎপরতাও ছিল মতিঝিলকেন্দ্রিক।
হত্যার চেষ্টা অনেক দিন ধরে
মিল্কিকে হত্যার চেষ্টা অনেকদিন ধরেই চলছিল এবং এতে সংগঠনেরই একটি পক্ষ জড়িত ছিল বলে তার সমর্থকদের দাবি।
মতিঝিলের যুবলীগ নেতা সানি এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, “বহুবার ভাইকে (মিল্কি) হত্যার চেষ্টার পর এবার ষড়যন্ত্রকারীরা সফল হয়েছে।”
যুবলীগ নেতাদের বক্তব্যের সত্যতা মেলে র্যাব কর্মকর্তাদের কথায়ও।
র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক জিয়াউল আহসান এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, “মিল্কিকে দীর্ঘদিন ধরে হত্যার চেষ্টা চলছিল বলে র্যাব জানতে পেরেছে।”
কয়েক মাস আগে নতুন কমিটি গঠনের পর থেকে সংগঠনে কর্তৃত্ব নিয়ে সরকার সমর্থক যুব সংগঠনটির ঢাকার এই শাখার নেতাদের মধ্যে বিভেদ দেখা দেয় বলে কর্মীরা জানিয়েছেন।
এক পক্ষের নেতৃত্বে সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের সঙ্গে ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক মিল্কি। অন্যপক্ষে সাধারণ সম্পাদক ওয়াহিদুল ইসলাম আরিফ ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তারেক।
সংগঠনটির স্থানীয় পর্যায়ের নেতারা বলেন, সম্রাট সম্প্রতি অসুস্থ হয়ে পড়লে মিল্কির একক আধিপত্য প্রতিষ্ঠা পেতে যাচ্ছে বলে প্রতিপক্ষ মনে করছিল।
মিল্কি হত্যাকাণ্ডের জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার তারেক এক সময় মিল্কির ঘনিষ্ঠ ছিলেন বলে যুবলীগ নেতারা জানান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নেতা এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, “গুলশান-বাড্ডা এলাকা নিয়ন্ত্রণ করে সাখাওয়াত হোসেন চঞ্চল, সে এখন তারেকের ঘনিষ্ঠ। মিল্কি রাতে ওই এলাকায় ঢুকেছে বলে খবর পাওয়ার পরপরই প্রতিপক্ষ তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়।”
রাত প্রায় আড়াইটার দিকে গুলশানের ১২৩ নম্বর সড়কের শপার্স ওয়ার্ল্ডের সামনে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে মিল্কিকে হত্যা করা হয়।
র্যাব তারেক ছাড়াও আর যাদের গ্রেপ্তার করেছে, তারা হলেন- তুহিনুর রহমান (২৫), সৈয়দ মোস্তফা আলী রুমি (৩৩), মোহাম্মদ রাশেদ মাহামুদ (২৫), সাইদুল ইসলাম ওরফে নুরুজ্জামান (২২) ও মোহাম্মদ সুজন হাওরাদারকে (২২)।
তবে যে যুবকটির মোটর সাইকেলে খুনি পালায়, তাকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি বলে র্যাব-১ এর অধিনায়ক কিসমৎ জানিয়েছেন।