আবুর স্ত্রী-সন্তান উদ্ধার
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলায় ‘জঙ্গি আস্তানা’ থেকে এক নারী ও শিশুকে উদ্ধার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই নারী বাড়িটিতে থাকা জঙ্গি সংগঠন পুরনো জেএমবির সদস্য আবুর স্ত্রী এবং শিশুটি এই দম্পতির সন্তান বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। আবুর স্ত্রী ও সন্তানকে উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার পুলিশ সুপার টি এম মোজাহিদুল ইসলাম। এ আস্তানায় অভিযান চলার সময় বিকেল পাঁচটার দিকে ওই নারী এবং এর আধা ঘণ্টা পর শিশুটিকে উদ্ধার করা হয়।
এর আগে বিকেল সোয়া চারটার দিকে জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করতে আহ্বান জানায় পুলিশ। সে সময় এ আহ্বানে কেউ সাড়া দেয়নি। ওই আহ্বানের পর একপর্যায়ে ‘জঙ্গি আস্তানা’ থেকে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। এরপর বিকেল পাঁচটার দিকে ওই নারীকে উদ্ধার করা হয়। পুলিশ সুপার টি এম মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ওই বাড়ি থেকে আবুর স্ত্রী ও এক সন্তানকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ দুজনকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
শিবগঞ্জের মোবারকপুর ইউনিয়নের ত্রিমোহিনী শিবনগর গ্রামে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়িতে আজ বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালাচ্ছে পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনী সোয়াট। আজ সকালে ফের ‘ইগল হান্ট’ নামের অভিযান শুরু হয়।
পুলিশ কর্মকর্তা ও এলাকাবাসী জানান, জঙ্গি আস্তানা হিসেবে যে বাড়িতে অভিযান চালানো হচ্ছে, সেটি সাইদুর রহমান ওরফে জেন্টু বিশ্বাসের। একটি আমবাগানে বাড়িটির অবস্থান। বাড়িটিতে একই গ্রামের বাসিন্দা আবু (৩০) স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। গতকাল সোয়াটের পক্ষ থেকে এই আবুকে পুরোনো জেএমবির সদস্য বলে জানানো হয়। আবুর পরিবার ছাড়াও বাড়িতে আরও দুজন থাকতে পারেন বলে পুলিশের ধারণা।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বাড়িটি থেকে গত রাতে ও আজ ভোরে কয়েক দফা গুলির শব্দ ভেসে আসে। সকাল নয়টার পর সেখান থেকে মুহুর্মুহু গুলির শব্দ আসে। অভিযান চালাকালে দিনভর থেমে থেমে গুলির শব্দ শোনা যায়।
পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের এক কর্মকর্তা বলেন, গতকাল বুধবার রাত নয়টার দিকে এ অভিযান স্থগিত করা হয়েছিল। আজ সকালে ফের অভিযান শুরু করা হয়।
ঘটনাস্থলে সকালেই বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল আসে। সেখানে আছে সিআইডির ক্রাইমসিন ইউনিট ও ফায়ার সার্ভিস। এ ছাড়া হরিজন সম্প্রদায়ের কয়েকজন পরিচ্ছন্নতাকর্মীকে ঘটনাস্থলে ডাকা হয়েছে।
দুপুর ১২টার দিকে সন্দেহভাজন জঙ্গিদের আত্মসমর্পণ করতে মাইকে মিনিট পাঁচেক ধরে আহ্বান জানায় পুলিশ। কিন্তু এ আহ্বানে কেউ সাড়া দেয়নি।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ‘জঙ্গি আস্তানা’র স্থান থেকে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ ভেসে আসে। সেখান থেকে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উড়তে দেখা যায়। এরপরই বাড়িটির দিকে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যদের যেতে দেখা যায়।
জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে গতকাল ভোর থেকে বাড়িটি ঘিরে রাখে জেলা পুলিশ ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট।
সাধারণ মানুষের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে গতকাল ভোর থেকে ঘটনাস্থলের আশপাশে ১৪৪ ধারা জারি করে উপজেলা প্রশাসন। পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত তা বজায় থাকবে বলে মাইকিং করে জানানো হয়েছে।
গতকাল সন্ধ্যার দিকে বাড়িটিতে জঙ্গিবিরোধী অভিযান শুরু করে সোয়াট। গতকাল সেখান থেকে মুহুর্মুহু গুলি ও কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। রাত নয়টার দিকে অভিযান স্থগিত করা হয়। আজ ভোরে ফের অভিযান চালানোর কথা জানানো হয়।
শিবগঞ্জের যে বাড়িতে অভিযান চলছে, তার প্রায় আধা কিলোমিটার দূরেই আবুর নিজের বাড়ি। পরিবারের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় গত ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি সাইদুরের মালিকানাধীন বাড়িতে বসবাস করছেন বলে জানা যায়।
আবু ত্রিমোহিনী আলিয়া মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছেন। স্থানীয় ৮-১০ জনের সঙ্গে চলাফেরা করতেন তিনি।
সূত্র বলেছে, আবুর সঙ্গীদের মধ্যে মাহফুজুর রহমান ওরফে মোহন (২৮) ও আবদুস সালাম (৩৫) নামের দুজনকে গত মঙ্গলবার রাতে শিবনগর থেকে আটক করে পুলিশ। তবে তাঁদের আটক করার বিষয়ে পুলিশ কিছু বলেনি।