যৌতুকের দাবিতে পিটিয়ে ও ছ্যাঁকা দিয়ে নির্যাতন
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: জামালপুরে সেলিনা বেগম (২২) নামের এক গৃহবধূকে হাত-পা বেঁধে পিটিয়ে ও লোহার খুন্তি গরম করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দিয়ে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। যৌতুকের দাবিতে তাঁর স্বামী রফিকুল ইসলাম এই নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শুক্রবার সেলিনাকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
সেলিনার বাবার বাড়ি বকশীগঞ্জ উপজেলার মেরুরচর ইউনিয়নের মাদারেরচর ঘুগরাকান্দি গ্রামে। বাবার নাম আবদুল খালেক। স্বামী রফিকুল ইসলামের বাড়ি একই উপজেলার বাট্টাজোড় এলাকার পানাতিয়াপাড়া গ্রামে। তাঁর শ্বশুর জলিল মিয়া। ঘটনার পর থেকে রফিকুল পলাতক।
বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) নাদের হোসেন বলেন, সেলিনা বেগম বর্তমানে শঙ্কামুক্ত। তবে তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশে লোহাজাতীয় কোনো বস্তু দিয়ে গরম ছ্যাঁকা ও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাঁকে সব ধরনের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নির্যাতনের কারণে ওই গৃহবধূ অনেকটাই মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন। কারও সঙ্গে তেমন একটা কথা বলেন না। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরতে কিছু সময় লাগবে।
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দেড় বছর আগে সেলিনার সঙ্গে রফিকুলের বিয়ে হয়। বিয়ের প্রথম কয়েক মাস পরেই রফিকুল চার লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। যৌতুকের জন্য সেলিনার ওপর শারীরিক নির্যাতন শুরু হয়। কিন্তু দরিদ্র কৃষক বাবা আবদুল খালেকের পক্ষে এত টাকা দেওয়া সম্ভব ছিল না। এ নিয়ে একাধিকবার গ্রাম্য সালিস বৈঠকও হয়। তিন মাস আগে তাঁর বাবা বাধ্য হয়ে জমি বিক্রি করে দুই লাখ টাকা জামাতা রফিকুলের হাতে তুলে দেন। গত মাসে সেলিনাকে রফিকুল কর্মস্থল গাজীপুরের টঙ্গী বোর্ড বাজার এলাকায় নিয়ে যান। সেখানে নিয়ে আরও দুই লাখ টাকার জন্য শুরু করেন পাশবিক নির্যাতন।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে ওই টাকার জন্য প্রথম তাঁদের মধ্যে ঝগড়া বাধে। ঝগড়ার একপর্যায়ে রফিকুল সেলিনার মুখ ও হাত-পা বেঁধে লোহার রড দিয়ে পেটান। এতেও তিনি ক্ষান্ত হননি। লোহার একটি খুন্তি গরম করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দেন। নির্যাতনের একপর্যায়ে সেলিনা অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এরপর তাঁকে ঘরে রেখে বাইরে থেকে তালা দিয়ে রফিকুল চলে যান। ওই বাড়ির মালিক বিষয়টি বুঝতে পেরে তালা ভেঙে তাঁর গ্রামের বাড়িতে খবর দেন। পরিবারের লোকজন গতকাল সেখান থেকে তাঁকে উদ্ধার করে বকশীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ব্যাপারে সেলিনার চাচা সুজাত আলী বলেন, ‘একজন স্বামী তাঁর স্ত্রীকে ঘরে আটকে রেখে এমন নির্দয়ভাবে নির্যাতন করতে পারেন, আমার জানা ছিল না। দুই লাখ টাকা দেওয়ার পর আমরা ভেবেছিলাম, মেয়েটি এখন শান্তিতে সংসার করতে পারেন। কিন্তু সেটি আর হলো না। আরও দুই লাখ টাকার জন্য শুরু করে নির্যাতন। সারা শরীরের বিভিন্ন স্থানে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছে। মেয়েটি একটু সুস্থ হয়ে উঠলে নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।’
বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম হোসেন বলেন, ‘ওই গৃহবধূকে খুব নির্মমভাবে নির্যাতন করা হয়েছে। সারা শরীরের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাঁকে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার সকালে তাঁকে দেখতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। ঘটনাস্থল গাজীপুর হওয়ার কারণে মামলা ওই থানায় করতে হবে। ওই খানে মামলা দায়েরর জন্য দরিদ্র পরিবারটিকে সব ধরনের সহায়তা করা হবে।’