প্রধানমন্ত্রী হাওরের ভয়াবহতা উপলব্ধি করেননি: খালেদা
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: হাওর অঞ্চলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাকে আগামী ছয় মাসের জন্য ‘দুর্গত অঞ্চল’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তাঁর দাবি, প্রধানমন্ত্রী পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করেননি বা স্বীকার করতে চাননি।
আজ রোববার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন। তিনি হাওরাঞ্চলে বিপর্যয়ের জন্য প্রকৃতির বিরূপ আচরণের পাশাপাশি ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতি ও ব্যর্থতাকে দায়ী করেন।
হাওর অঞ্চলের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে খালেদা জিয়া বলেন, মানুষ আশা করেছিল, প্রধানমন্ত্রী হাওর এলাকা পরিদর্শন শেষে ওই এলাকাকে দুর্গত এলাকা ঘোষণা করা হবে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর ‘গতানুগতিক’ তৎপরতা দেখে ও বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে, তিনি পরিস্থিতির ভয়াবহতা উপলব্ধি করেননি বা স্বীকার করতে চাননি।
আজ রোববার হাওর এলাকা পরিদর্শনে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিএনপির মহাসচিব এর আগে ওই এলাকা পরিদর্শনে গেলেও দলের প্রধান খালেদা জিয়া এখনো যাননি।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে বর্তমান সরকারের সর্বোচ্চ সম্পর্ক স্থাপনের কথা প্রচার করা হয়। তা সত্ত্বেও পাহাড়ি ঢলের তথ্য যথাসময়ে কেন পাওয়া গেল না এবং সে অনুযায়ী হাওরবাসী ও সরকারি প্রশাসনকে কেন আগাম সতর্ক ও প্রস্তুত করা হলো না, সে প্রশ্ন আজ সংগতভাবেই উঠেছে।’
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা কেন একযোগে বিদেশ সফরে গেলেন এবং এ ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তা সরকারের কাছে দেশবাসী জানতে চায়। হাওর অঞ্চলে বাঁধ নির্মাণে ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতির বেশ আগে থেকেই প্রকাশিত হচ্ছিল। সবার আশা ছিল, ক্ষতিগ্রস্ত অঞ্চলে প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগেই তাঁদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তার বদলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তৃতায় ‘প্রমাণ হলে ব্যবস্থা নেওয়ার’ গতানুগতিক আশ্বাস মানুষকে হতাশ করেছে।
খালেদা জিয়া বলেন, হাওরের শস্য, মৎস্যসম্পদ, গবাদিপশু ও অন্যান্য জলজ প্রাণীর যে বিপুল হানি ঘটেছে, তা জাতীয় বিপর্যয়ের শামিল। এই ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তিনি জাতীয় পর্যায়ে পরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানান। তিনি নতুন ফসল না আসা পর্যন্ত হাওরের ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের খাদ্যসহায়তা দেওয়া, সরকারি কৃষিঋণের সুদ সম্পূর্ণ মওকুফ, সরকারি-বেসরকারি সব ঋণের কিস্তি আদায় স্থগিত করা, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ ও বিনা সুদে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ দেওয়া, এক বছরের জন্য জলমহালের ইজারা বাতিল করে উন্মুক্ত জলাশয়ে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহের সুযোগ দেওয়া এবং ত্রাণ, পুনর্বাসন ও চিকিৎসার উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান।
বিএনপির প্রধান বলেন, এত বড় মহাদুর্যোগের পরেও ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় সরকারি উদ্যোগে দুর্গতের চিহ্নিত করা এবং ত্রাণ ও পুনর্বাসনকাজে ব্যাপক দুর্নীতি, অনিয়ম, অব্যবস্থা ও সংকীর্ণ দলীয়করণের অভিযোগ উঠছে। তিনি এসবের প্রতিকার এবং মানুষের দুর্গতি নিয়ে কোনো রাজনীতি না করার আহ্বান জানান।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘দুঃখের সঙ্গে লক্ষ করেছি যে প্রতিবেশী দেশের সীমান্তবর্তী খনি থেকে ইউরেনিয়াম মিশ্রিত পানির দূষণে জলজ প্রাণীর মৃত্যুর ব্যাপারে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবরকে খণ্ডন করাই একসময় ক্ষমতাসীনদের কাছে ত্রাণতৎপরতার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। মানুষের চরম দুর্যোগ ও দুর্ভোগের সময়ে এ নিয়ে তারা মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর হাসি-ঠাট্টায় মেতে ওঠেন মর্মে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়, তাতে আমরা দেশবাসীর সঙ্গে সমভাবে ব্যথিত হয়েছি।’