হাওরে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: বন্যায় ফসল হারিয়ে সুনামগঞ্জের হাওর এলাকার মানুষ এমনিই দিশেহারা। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে কালবৈশাখী।
গতকাল রোববার রাতে ঝড়ে সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় তিন হাজার ঘরবাড়ি ও স্থাপনার ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের পর থেকে পুরো জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সুনামগঞ্জে বিদ্যুৎ সরবরাহ কবে স্বাভাবিক হবে, সেটি নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না সংশ্লিষ্টরা।
রাত সাড়ে ১১টার দিকে সুনামগঞ্জের ওপর দিয়ে প্রচণ্ড বেগে ঝড় বয়ে যায়। প্রায় আধা ঘণ্টা স্থায়ী ঝড়ে মানুষের ঘরবাড়ি, বিভিন্ন স্থাপনা, গাছপালা, বিদ্যুতের লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়।
সকালে সদর উপজেলার কালীপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, দুই শতাধিক ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রামের বিল্লাল মিয়া জানান, ছয় মাস আগে তিনি টিনের নতুন একটি ঘর করেছিলেন। সেটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে।
গ্রামের বাসিন্দা জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কমান্ডার নুরুল মোমেন বলেন, তাঁদের গ্রামের শুধু ঘরবাড়ি নয়, গাছপালা, বিদ্যুতের লাইনের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। মাজেদা বেগম (৩৩) বলেন, ‘আমরা যে বাঁচছি, এইটাই বড় কথা। ইলা তুফান (ঝড়) আমি আমার জীবনে দেখছি না। ঘর ভাঙ্গি গিছে। এখন থাকার জায়গা নাই।’
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন জানান, তাঁর উপজেলার সব ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনো ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তথ্য তিনি পাননি। তবে হাজারেরও বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে আশঙ্কা করছেন।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ জানান, তাঁর উপজেলায় ২০০ ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত এবং ৫০০ ঘরবাড়িতে আংশিক ক্ষতি হয়েছে। এলাকার রাস্তাঘাটে গাছপালা ভেঙে পড়ে আছে।
ছাতক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অলিউর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘আমার এলাকায় মনে হচ্ছে ক্ষতি বেশি হয়েছে। চারদিক থেকে মানুষ ক্ষয়ক্ষতির কথা জানাচ্ছে। আমরা ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে খোঁজ নিচ্ছি।’
তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান জানিয়েছেন, ‘মানুষজন এমনিতেই ফসল হারিয়ে দিশেহারা। এখন ঝড়ে অনেক ঘরবাড়ি ভেঙে পড়েছে। বুঝতে পারছি না। মানুষ এত বিপদ মোকাবিলা করছে কীভাবে।’ তিনি আরও জানান, তাৎক্ষণিকভাবে তিনি যে খবর পেয়েছেন, তাতে ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ির সংখ্যা পাঁচ শতাধিক হবে।
একইভাবে জেলার সব উপজেলায় কমবেশি ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। স্থানীয় লোকজন ও জনপ্রতিনিধিদের দেওয়া প্রাথমিক তথ্যে প্রায় তিন হাজার ঘরবাড়ি ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সেলিম জানান, ছাতক-সুনামগঞ্জের ৩৩ কেভি লাইনের কয়েকটি খুঁটি ভেঙে পড়েছে। এসব স্থানে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে গেছে। শহরের ভেতরের অবস্থা আরও খারাপ। কখন বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তা এই মুহূর্তে বলা মুশকিল।
জেলা প্রশাসক শেখ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিটি উপজেলা থেকেই ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতির কথা আমাদের জানানো হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় প্রশাসনের লোকজন কাজ করছেন। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। পূর্ণাঙ্গ চিত্র পেতে সময় লাগবে।’