চালের দাম বাড়ার পেছনে ব্যবসায়িক কারসাজি
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে ফরিদপুরের চালের বাজার। গত ১৫ দিনে এ অঞ্চলে চালের দাম কেজিতে দুই টাকা থেকে শুরু করে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। কয়েক দফায় এই দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে।
দাম বৃদ্ধির কারণে চালের বাজারে একটা অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, তা স্বীকার করছেন ক্ষুদ্র চাল বিক্রেতা, পাইকারি বিক্রেতা এবং জেলা বাজার কর্মকর্তাও। তবে এ দাম বৃদ্ধির কারণ নিয়ে পাইকারি বিক্রেতাদের সঙ্গে একমত নন খুচরা বিক্রেতারা। খুচরা বিক্রেতারা দাবি করছেন, অতি বৃষ্টি ও হাওর এলাকায় বন্যার অজুহাত দেখিয়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে চালের। মূলত ব্যবসায়িক ফায়দা লাভের জন্য কৃত্রিম এই সংকট সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁদের।
আজ বৃহস্পতিবার ফরিদপুর শহরের চকবাজার, শরীয়তুল্লাহ বাজার ও তিতুমীর বাজারের পাইকারি এবং খুচরা চালের দোকান সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেল, ১৫ দিনের ব্যবধানেই বেশ চড়া বাজার।
১৫ দিন আগে যেখানে ১ কেজি বাঁশমতি চালের দাম ছিল ৫০ টাকা, আজকে বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬০ টাকায়।
মিনিকেট চালের দামও ছয় টাকার মতো বেড়েছে, বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৫৪ টাকা দরে।
৪২ টাকা কেজির কাজললতা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
৩৮ টাকার কেজি স্বর্ণা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
ইরি-২৮ প্রতি কেজি ৪২ টাকা থেকে বেড়ে ৪৫ টাকা হয়েছে।
শহরের চকবাজার এলাকার পাইকারি চাল বিক্রেতা নির্মল খাদ্যভান্ডারের অনিল কুমার সাহা বলেন, ‘ফরিদপুর, যশোর, সাতক্ষীরাসহ উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন জেলা থেকে চাল আনা হয়। কিন্তু সম্প্রতি অতিবৃষ্টি ও হাওর এলাকায় বন্যার কারণে ধান ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে। অন্যান্য বছর হাওর এলাকা থেকে প্রতিদিন শত শত ট্রাক ধান উত্তর বঙ্গের বিভিন্ন মিলে যেত। কিন্তু এবার উত্তর বঙ্গ থেকে হাওর এলাকায় ধান-চাল যাচ্ছে। ফলে আমরা বড় বড় চালের মিল থেকে চাহিদা অনুযায়ী চাল পাচ্ছি না।’
দাম বাড়ার ব্যাপারে অনিল কুমার সাহা বলেন, গত বছর এই সময়ে সাতক্ষীরা এলাকায় ধানের দাম ছিল প্রতি মণ ৭০০ টাকা। কিন্তু এ বছর সেখানে এক হাজার টাকা মণ দরে ধান বিক্রি হচ্ছে। উত্তর বঙ্গে বাংলামনি ধান গত বছর ৬৫০ টাকা মণ বিক্রি হলেও এ বছর বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ টাকায়। প্রতি মণ ধানের দাম বেড়েছে তিন শ থেকে সাড়ে তিন শ টাকা।
চকবাজার বণিক সমিতির সভাপতি ও পাইকারি চাল বিক্রেতা জয় গোবিন্দ সাহা বলেন, ‘ধানের দাম বেশি হওয়ায় আমাদের মিলারদের কাছ থেকে বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে।’ তিনি বলেন, পুরান চাল শেষ হয়ে আসছে, অপর দিকে নতুন চালের আমদানিও কম, কিন্তু বাজারে চাহিদা বেশি, তাই দাম বাড়ছে।
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চকবাজার, শরীয়তুল্লা বাজার ও তিতুমীর বাজারের তিন খুচরা চাল বিক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, ফরিদপুরের পাইকারি চাল বিক্রেতাদের কাছে যে পরিমাণ চাল মজুত আছে, তাতে আগামী দুই মাসের মধ্যে চালের দাম বৃদ্ধি বা চালের সংকট হওয়ার কথা নয়। কিন্তু পাইকারি ব্যবসায়ীরা ব্যবসায়িক স্বার্থে কৃত্রিমভাবে চালের সংকট সৃষ্টি করে রেখেছেন। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বাজারের গুদামে চাল না রেখে শহরের আশপাশে তাদের বিভিন্ন গুদামে চাল রেখে বিক্রি করছেন। আমরা ৫০ বস্তা চাল কিনতে গেলে চালের সংকটের কথা বলে দেওয়া হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ বস্তা চাল।
খুচরা বিক্রেতাদের এ অভিযোগ একদম অস্বীকার করছেন না জেলা বাজার কর্মকর্তা সাহাদাত হোসেনও। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিনিয়ত পাইকারি বাজার পর্যবেক্ষণ করি। তারপরও কোনো কোনো পাইকারি ব্যবসায়ী আড়ালে আবডালে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির এ জাতীয় ঘটনা ঘটাতে পারেন।’
পাশাপাশি তিনি চালের দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে আমদানি শুল্কের বিষয়টি আনেন সাহাদাত হোসেন। তিনি বলেন, এক বছর আগে সরকার চাল আমদানির ওপর শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করেছিল। এ কারণে দেশের বাইরে থেকে চাল আমদানি কমে যায়।
এ ছাড়া নতুন চালের মৌসুম শুরু হলেও বাজারে চাল আসছে ধীরগতিতে, যার প্রভাব পড়েছে বাজারে। সরকার চালের ক্রয়মূল্য এক টাকা করে বাড়িয়ে ৩৪ টাকা করেছে এবং সরকারি উদ্যোগে খোলাবাজারে (ওপেন মার্কেট সেল) চাল বিক্রি গত পাঁচ থেকে ছয় মাস ধরে বন্ধ থাকায় সামগ্রিকভাবে ফরিদপুরে চালের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে বলে মনে করছেন সাহাদাত হোসেন। তবে এই সংকট ক্ষণস্থায়ী এবং কেটে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।