ঢালাও পাস করলে মান বাড়ে না

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: এবারের এসএসসি পরীক্ষায় একটি বিষয় প্রমাণিত হয়েছে যে আমাদের মূল্যায়ন পদ্ধতির নিবিড় সংস্কার দরকার। এবারে পরীক্ষামূলকভাবে মূল্যায়নে নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে। এর ফলে পাসের হার কিছুটা কমেছে। এটাকে কেউ যদি ফলাফল বিপর্যয় বলেন, তবে এটা আমি অন্তত মানব না। ঢালাওভাবে পাস করলে যে মান বাড়ে, তা মোটেও সত্যি নয়। আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তন। এবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেই কাজটি করেছে। তাই তাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই।

উত্তরপত্র মূল্যায়নের পদ্ধতিতে আরও কীভাবে পরিবর্তন আনা যায়, আরও বৈজ্ঞানিক করা যায়, সেদিকে এখন নজর দিতে হবে।
এবারের ফলাফলে আরও একটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, আমাদের শিক্ষায় বিনিয়োগ আরও বাড়ানো দরকার। ফলাফলে দেখা গেছে, যেখানে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগের চেয়ে পারিবারিক বিনিয়োগ অনেক বেশি সেখানে সাফল্যও বেশি। প্রাথমিকে যে শিক্ষার্থী সাফল্য পায়, মাধ্যমিকে সেই সাফল্য ধরে রাখা যায় না। এর কারণ, প্রাথমিকে অনেক বেশি সরকারি বিনিয়োগ আছে। তবে মাধ্যমিকে উচ্চবিত্ত, মধ্যবিত্ত বা নিম্নমধ্যবিত্তের পারিবারিক বিনিয়োগ বেশি হওয়ার কারণেই এখানে সাফল্য আসছে। এখানে দরিদ্র বা নিম্ন আয়ের মানুষের সাফল্য কোথায়? মাধ্যমিকেও ক্যাডেট কলেজের মতো যেখানে রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বেশি বা তথাকথিত নামীদামি স্কুলে যেখানে ব্যাপক পারিবারিক বিনিয়োগ, সাফল্যের মাত্রাও সেখানে বেশি। শিক্ষায় রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ যে অনেক বাড়াতে হবে, এই ফলাফল তা আবার আমাদের স্মরণ করিয়ে দিল।
এখনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাইরে কোচিং সেন্টার বা গাইড বইয়ের ওপর নির্ভরতা যাচ্ছে না। এই বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসার পথ খুঁজতে হবে। এর জন্য পরীক্ষাপদ্ধতির সংস্কার জরুরি।
বিনিয়োগের ফলে যে সাফল্য মেলে, মেয়েদের পাসের বেশি হারকে সেই বাস্তবতার একটা উদাহরণ। মেয়েদের উপবৃত্তির একটি সুফল আমরা পেয়েছি।
এবারের পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগে পাসের হার বেড়ে যাওয়া একটি শুভ ইঙ্গিত। বিজ্ঞানের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়ছে এটা আশার কথা।
আমাদের মনে রাখা দরকার, শিক্ষার্থীরা ভালো করতে চায়। তবে তাদের সেই চেষ্টার সেই ফল যেন ভালো হয়, তারা যেন ভালো মূল্যায়ন পায়, সেটা দেখার দায়িত্ব আমাদের নিতে হবে।
এসএসসির ফলাফলে বা যেকোনো পরীক্ষার ফলাফলে একজন শিক্ষার্থীর কেবল একাডেমিক মূল্যায়নটাই হয়। তবে সংগীত, খেলাধুলা, শিল্পসহ অন্যান্য সৃজনশীল কাজে একজন শিক্ষার্থীর যথাযথ মূল্যায়নেরও ব্যবস্থা থাকা উচিত। আর এসব করতে পারলেই আমরা যে আলোকিত মানুষ তৈরির কথা বলি, তা সম্ভব হবে। আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে শুধু এটুকু প্রত্যাশা করতে পারি না যে তারা শুধু মুখ গুঁজে লেখাপড়া করবে। এসব সৃজনশীল কাজে তাদের নিয়োজিত করতে হবে।

রাশেদা কে চৌধূরী: নির্বাহী পরিচালক, গণসাক্ষরতা অভিযান।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ