হার্টের স্টেন্ট নিয়ে একাধিক চক্র বাণিজ্য করছে

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: একাধিক চক্র হৃদ্‌রোগের স্টেন্ট (রিং) বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। নীতি–নৈতিকতার মধ্যে থেকে তাদের ওই ব্যবসা থেকে সরে আসতে হবে। তাহলেই হৃদ্‌রোগীরা মানসম্মত চিকিৎসা পাবেন।

আজ শনিবার রাজধানীর পান্থপথে একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশ নিয়ে বক্তারা এ কথা বলেন। ‘চিকিৎসাসেবায় মেডিকেল ডিভাইসের মূল্য নির্ধারণ : বর্তমান প্রেক্ষাপট ও করণীয়’ নিয়ে পান্থপথের এসইএল সেন্টারে এই গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে হেলথ কনজ্যুমার রাইটস ফোরাম। অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করে নয়টি বেসরকারি সংস্থা।

গোলটেবিল বৈঠকে জীবন রক্ষাকারী সব ওষুধ ও মেডিকেল ডিভাইসের আদর্শ মূল্য নির্ধারণের লক্ষ্যে সরকারের কাছে সাত দফা সুপারিশ তুলে ধরা হয়।

গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন কনজ্যুমার রাইটস ফোরামের আহ্বায়ক ইবনুল সাঈদ। একই ফোরামের উপদেষ্টা (অনারারি) রফিকুল ইসলাম মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন। এতে বলা হয়, দেশে করোনারি স্টেন্ট ৫০ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকায় বিক্রি হলেও ভারতে এই স্টেন্টের সর্বোচ্চ মূল্য ৩৬ হাজার ৮০৪ টাকা এবং সর্বনিম্ন মূল্য ৮ হাজার ৯২৯ টাকা। দেশে বছরে প্রায় ১৮ হাজার স্টেন্টের চাহিদা আছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে একটি চক্র রোগীদের জিম্মি করে ২০০ কোটি টাকার বাণিজ্য করছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, স্টেন্ট সরবরাহকারী ২৭টি প্রতিষ্ঠানসহ একটি চক্র এই বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে। দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হলেই স্টেন্ট বেচাকেনা হয়। স্টেন্ট পরানোর জন্য রোগীর কাছ থেকে ১০ থেকে ৫০ হাজার টাকা করে কমিশনও নেওয়া হয়। অতিরিক্ত দাম নেওয়ায় অসংখ্য গরিব রোগী কমিশন–বাণিজ্যের শিকার হচ্ছেন। অথচ গত বছর জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ৫৪ লাখ টাকা দামের স্টেন্ট কিনলেও নির্ধারিত সময়ে তা রোগীদের দেওয়া হয়নি। এ কারণে তা মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়। এ থেকেই বোঝা যায়, শুধু বাণিজ্য করার কারণেই বিনা মূল্যের ওই স্টেন্ট দরিদ্র রোগীদের দেওয়া হয়নি।

প্রবন্ধে বলা হয়, সম্প্রতি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর ৪৭ প্রকার স্টেন্টের মধ্যে ৩৪টির খুচরা মূল্য বেঁধে দিলেও তা যথেষ্ট নয়।

হেলথ কনজ্যুমার রাইটস ফোরাম সরকারের কাছে সাত দফা সুপারিশ তুলে ধরেছে। এর মধ্যে আছে জীবন রক্ষাকারী সব ওষুধ ও মেডিকেল ডিভাইসের আদর্শ মূল্য নির্ধারণের লক্ষ্যে অবিলম্বে ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যালস অ্যান্ড মেডিকেল প্রাইসিং অথরিটি গঠন করতে হবে। অনৈতিক স্টেন্ট–বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত ২১টি প্রতিষ্ঠানসহ জড়িত চক্রকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। স্টেন্ট–বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। রোগীদের কাছ থেকে আত্মসাৎকৃত হাজার কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় স্টেন্ট আমদানি করে ভর্তুকি দিয়ে সরবরাহ করতে হবে। মূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য পর্যাপ্ত তদারকির ব্যবস্থা করতে হবে। গণমাধ্যমে নির্ধারিত মূল্য–সংক্রান্ত বিষয়ে ব্যাপক প্রচার করতে হবে।

গোলটেবিল বৈঠকে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট) শাহাদত হোসেন বলেন, চিকিৎসা নিতে গিয়ে আর কেউ প্রতারিত হবে না, সবাইকে এই অঙ্গীকার করতে হবে। গুটি কয়েক ব্যক্তি রোগীর সঙ্গে প্রতারণা করেছে। চিকিৎসা করাতে গিয়ে কেউ প্রতারিত হলে নির্দিষ্ট ফরম, ফ্যাক্স বা ডাকযোগে অধিদপ্তরকে জানাতে বলেন তিনি। অভিযোগ পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ এশিয়ার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোজাহেরুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসাব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে চাইলে এর সঙ্গে জড়িতদের নীতি–নৈতিকতার মধ্যে থেকে ওই ব্যবসা থেকে সরে আসতে হবে। স্টেন্ট পরাতে কমিশন নেওয়াসহ অনৈতিক বিষয়গুলো চিহ্নিত করে সমস্যার সমাধান করতে হবে। আইন করে এর নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।

থিওলজিক্যাল সোসাইটির সভাপতি আলমাছুর রহমান বলেন, আইন করে স্টেন্টের দাম ঠিক করতে হবে।

গোলটেবিল বৈঠকে আলোচনায় আরও অংশ নেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ