ধরা পড়ল দুই শতাধিক সাপ

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: ‘ঘরের মাইধ্যে সাপ আর সাপ, সেই সাপ দেখতো আইয়ে হাজার হাজার মানুষ।’ কথাগুলো বললেন ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের পল্লিচিকিৎসক আমির হোসাইন (৩৮)। এই ইউনিয়নের একটি গ্রামের নাম কন্দ্রকপুর। সেই গ্রামের বাসিন্দা মোতাহার হোসেন বয়াতি (৬৫)। পেশায় জেলে। তাঁর ঘরে গতকাল শনিবার পর্যন্ত দুই শতাধিক সাপ ও সাপের ডিম পাওয়া গেছে।
মোতাহার হোসেন বয়াতির ছেলে মো. ইব্রাহীম বয়াতি বলেন, গত মঙ্গলবার রাত ১১টায় কুপির আলোয় দেখেন, ঘরের মধ্যে একটি গর্ত দিয়ে এক-দেড় হাত লম্বা একটি সাপ বের হয়ে আসছে। ধাওয়া করলে ফণা তুলে দাঁড়িয়ে যায়, আবার ওই গর্তে ঢুকে যায়। রাতে গর্তের মুখ বন্ধ করে দেন। রাতে ঘুম হয় না। বুধবার রামদাশপুর থেকে আসেন আবু ওঝা। তিনি এসে গর্তের মুখ খুলে দেন, বেরিয়ে আসে ১৫টি বাচ্চা সাপ। সেগুলো মেরে বাড়িতে ধুল পড়া ছিটিয়ে দেন। টাকা নেন দুই হাজার। এরপর তিনি অপারগতা জানিয়ে চলে যান। পরের দিন আবার আসেন ওঝা আমেনা বেগম। তিনিসহ গ্রামবাসী আরও ৫০টির মতো সাপ মারতে সক্ষম হন। এভাবে গতকাল পর্যন্ত ১৮০টি সাপ ও ৬০টি ডিম উদ্ধার করা হয়েছে। ইব্রাহীম বলেন, সাপুড়ে ও ওঝার ভাষ্যমতে এখনো অনেক সাপ আছে। এগুলো বিষধর সাপ। সাপ নিয়ন্ত্রণে ঘরের চারপাশে তাঁরা জাল টেনে দিয়েছেন। ধূপ-ধুলা পড়াসহ তাবিজ-তুমার দিয়েছেন।
ইব্রাহীম আরও বলেন, তাঁরা সাপের ঘরে নিদ্রাহীন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। বৃহস্পতিবার রাতের বেলা পাঁচ-ছয় হাত লম্বা একটি বিষধর সাপ ঘরের মধ্যে প্রবেশ করার চেষ্টা করে। ধাওয়া করলে পাশের বাঁশবাগানের একটি গর্তে লুকিয়ে যায়।
শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙনকবলিত মোতাহারের বাড়িতে দুটি ঘর। একটি রান্নাঘর, অন্যটি বসতঘর। বসতঘরেই চার ছেলে, ছেলেদের বউ, নাতি-নাতনিসহ ১৫ জন বাসিন্দা। আশপাশের গ্রাম ও ইউনিয়ন থেকে কয়েক শ লোক বাড়িতে ভিড় করেছেন। বেশ কিছু সাপের বাচ্চা মাটি চাপা দেওয়া হয়েছে। আর যে গর্ত থেকে সাপ বের হচ্ছে, তার মুখ মাটি দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছে। তার ওপর বসানো হয়েছে একটি পিতলের কলসি। সেখানে সিঁদুর মাখানো মোমবাতি জ্বলছে। লোকেরা সাপ ধরার খরচ হিসাবে বাটিতে ৫ থেকে ১০০ টাকা করে সাহায্য করে যাচ্ছেন।
প্রতিবেশী আবদুল কাদের ফকির এ সময় জানান, সাপের আতঙ্কে মঙ্গলবার রাত থেকে ওই পরিবার ও আশপাশের মানুষের ঘুম নেই। গ্রামের আবুল বয়াতি, জামালউদ্দিন ফকির, আনিসুর রহমানসহ সবার মুখে একটাই কথা, এই বাড়িতে ভয়াবহ বিষধর একাধিক সাপ আছে। সেটা টের পেয়ে ২২ হাজার টাকা খরচ করলেও সাপুড়ে আসছেন না।
ভোলা সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. কামাল বলেন, সাপ সাধারণত নিরাপদ স্থানে ডিম পেড়ে চলে যায়। ডিম পাহারা দেওয়ার দায়িত্ববোধ তাদের নেই। পরে এমনিতেই বাচ্চা ফোটে ও সেগুলো নিজে নিজে অন্যত্র চলে যায়। তিনি আরও বলেন, একটি সাপ ৮ থেকে ১৫টি ডিম দিতে পারে। সে হিসাবে বোঝা যাচ্ছে, ঘরের মধ্যে একাধিক সাপ ডিম দিয়েছে। এ সময় সাধারণত গোখরা সাপ ডিম দেয়।
ভোলার সিভিল সার্জন রথীন্দ্রনাথ মজুমদার বলেন, কার্বলিক অ্যাসিড ব্যবহার করলে ওই বাড়িতে থাকা সাপ অন্যত্র চলে যাবে। তবে সেটা গ্রামবাসীর জন্য বিপজ্জনক। তাই সাপুড়েদের খবর দিলে ভালো হয়।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ