আসামির সঙ্গে আলাপচারিতা প্রকাশ করলেন বাদী
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: রাজধানীর বনানী থানায় ধর্ষণ মামলার বাদী বিষয়টি নিয়ে আগেই মুখ খুলতে চেয়েছিলেন। মুখ খুললে আরও সমস্যা হতে পারে বলে মামলার তিন নম্বর আসামি সাদমান সাকিফ তাঁকে সতর্ক করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাদী ও সাদমান সাকিফের কথোপকথনের স্ক্রিনশট থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
ওই ধর্ষণ মামলার এক নম্বর আসামি আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে শাফাত আহমেদ। দুই নম্বর আসামি নাঈম আশরাফ। গত ২৮ মার্চ জন্মদিনের পার্টিতে দাওয়াত দিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রীকে ধর্ষণ করা হয় বলে মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে। গত ৩১ মার্চ সাদমান সাকিফের সঙ্গে এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথোপকথন হয় বলে বাদী দাবি করেছেন। মামলার বাদী তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোন থেকে এই প্রতিবেদকের কাছে স্ক্রিনশটটি পাঠান।
ওই স্ক্রিনশটে দেখা যায়, সাদমান মামলার বাদী বোঝানোর চেষ্টা করছেন। সাদমান সাকিফ বলছেন, ‘এসব কথা বলে আর কী হবে।’ জবাবে বাদী বলেন, ‘আমি তো বের হচ্ছিলাম। আমাদের তো আসতে দিচ্ছিল না। আমার বন্ধুর গাড়ির চাবি আটকে রেখেছে তোমার সামনে।’ পরে সাদমান বলেন, ‘সবার আরও সমস্যা হবে।’ তখন বাদী বলেন, ‘তুমি নিজের চোখে দেখেছ। সবার সমস্যা হোক। কিন্তু ওর শাস্তি পেতে হবে। আমি যদি চুপ করে থাকি, তাহলে হবে না। ওরা আমাদের সঙ্গে এটা করেছে। এমন অনেক মেয়ের সঙ্গে করতে পারে।’ সাদমান বাদীকে বলেন, ‘তোমার কি মনে হয় না উনি আরও খারাপ কিছু করবে। এই সব বলে তাকে খ্যাপালে।’ বাদী বলেন, ‘খারাপ কিছু আর কী করবে আমার। যা করার করছে। আমি চুপ করে থাকব না।’ সাদমান বলেন, ‘আমি আর বোঝাতে পারব না।’
গত শনিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বনানী থানার পুলিশ ওই ধর্ষণের মামলা নেয়। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা প্রভাবশালী হওয়ায় মামলা করতে দুই ছাত্রীকে টানা ৪৮ ঘণ্টা যুদ্ধ করতে হয়। হয়রানি বাড়াতে মেডিকেল পরীক্ষার নামে দুই ছাত্রীকে দীর্ঘ সময় থানায় বসিয়ে রাখা হয়। রাত ১০টার দিকে তাঁদের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠানো হয়।
এজাহার থেকে জানা যায়, ওই মামলার আসামিরা হলেন শাফাত আহমেদ, নাঈম আশরাফ, সাদমান সাকিফ, শাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও অজ্ঞাতনামা দেহরক্ষী। মামলার প্রধান আসামি শাফাত।
শনিবার মামলার বাদী বলেন, তাঁদের পুরোনো এক বন্ধু প্রধান আসামির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলেন। পরিচয়ের সপ্তাহ দুয়েক পর গত ২৮ মার্চ তাঁদের দুজনকে ওই আসামি তাঁর জন্মদিনের পার্টিতে দাওয়াত করেন। অনেক অনুরোধের পর তাঁরা ওই পার্টিতে যান। পার্টি ছিল বনানীর একটি চার তারকা হোটেল ও রেস্তোরাঁয়। পার্টিতে ওই দুই শিক্ষার্থীর পুরোনো বন্ধুও ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে তাঁদের ফেলে ওই বন্ধু চলে যান। আসামিরা তখন তাঁদের হোটেলের দুটি কক্ষে আটকে ফেলেন। সে সময় আসামিদের সঙ্গে দেহরক্ষী ও গাড়িচালক ছিলেন। প্রধান আসামি ও তাঁর এক বন্ধু ওই দুই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেন। অভিযোগকারী শিক্ষার্থী দাবি করেন, তাঁদের ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করেন আসামির গাড়িচালক।
এক মাসের বেশি সময় পর কেন মামলা করলেন, জানতে চাইলে অভিযোগকারী বলেন, লোকলজ্জার ভয়ে তাঁরা বিষয়টি চেপে গিয়েছিলেন। ধর্ষণের পর আসামি তাঁকে (বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্রী) প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছিলেন। বেশ কিছুদিন ধরে প্রধান আসামির দেহরক্ষী তাঁকে অনুসরণ করছিলেন। তাঁদের বাসায় গিয়েও নানান কিছু জিজ্ঞাসা করছিলেন। আসামি ভিডিও আপলোড করারও হুমকি দিচ্ছিলেন। সে কারণে তাঁরা থানায় যান।