বেগুন গবেষণা প্রতিবেদন চেয়েছে হাই কোর্ট
রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ জিন বদলে উৎপাদিত বেগুনবীজ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর কি-না, সে সম্পর্কিত গবেষণা প্রতিবেদন চেয়েছে হাই কোর্ট।
দুটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানিতে বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের বেঞ্চ মঙ্গলবার মৌখিকভাবে এই আদেশ দেয়।
শিক্ষা ও স্বাস্থ্য উন্নয়ন কার্যক্রমের নির্বাহী পরিচালক সাকিউল মিল্লাত মোরসেদ এবং নয়াকৃষি আন্দোলনের সংগঠক ফরিদা আকতারসহ অন্য পাঁচজন গত ২৮ জুলাই এ দুটি রিট আবেদন করেন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিত রায়।
ফরিদা আকতারদের রিটের পক্ষে অ্যাডভোকেট মো. রুহুল আমিন ভূঁইয়া ও আদিলুর রহমান খান এবং অপর রিটকারী মোরসেদের পক্ষে আইনজীবী মো. শহিদুল ইসলাম শুনানি করেন।
জিনপ্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি বেগুনবীজ স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয় বলে শুনানিতে যুক্তি দেখায় রাষ্ট্রপক্ষ।
অন্যদিকে এর ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরেন আবেদনকারীদের আইনজীবীরা।
এরপর আদালত আইনজীবীদের কাছে তাদের যুক্তির সমর্থনে গবেষণা প্রতিবেদন থাকলে তা জমা দিতে বলেন।
আদালত মৌখিকভাবে ওই আদেশ দিয়েছে বলে উভয়পক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন।
রিটগুলোর শুনানি সুপ্রিম কোর্টের বার্ষিক অবকাশ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মুলতবি করেছে আদালত। অবকাশের পর আগামী ১৫ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্ট খুলবে।
নয়াকৃষি আন্দোলনের সংগঠন ফরিদা আকতারের সঙ্গে রিটে বাদি হিসাবে রয়েছেন একই সংগঠনের গবেষক ও সংগঠক রবিউল ইসলাম চুন্নু, পাবনার কৃষক মারিয়াম খাতুন, টাঙ্গাইলের কৃষক মো. আক্কাস আলী মিয়া ও রিনা বেগম।
এই রিটে কৃষি সচিব, পরিবেশ সচিব, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি সচিব, বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের নির্বাহী চেয়ারম্যানকে বিবাদি করা হয়েছে।
বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বিটি বেগুনবীজ বাজারজাত করার অনুমতি দিতে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ ও সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে রুল চাওয়া হয়েছে এই রিটে।
অনুমোদন দেয়ার আগে একটি স্বাধীন তদন্ত করতে বিবাদিদের প্রতি নির্দেশনা চেয়েছেন রিটকারী। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত ওই বীজ বাণিজ্যিক ভিত্তিতে বাজারজাত করার অনুমতি না দিতেও নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
অন্যদিকে সাকিউল মিল্লাত মোরসেদের রিটেও রুলের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চাওয়া হয়েছে।
রিটে বলা হয়, বাংলাদেশ ১৯৯২ সালের জীব বৈচিত্র বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষরকারী দেশ। বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে-এমন কয়েকটি কনভেনশন অনুসারে জৈব-নিরাপত্তা বিষয়ক আইন প্রণয়নে বাংলাদেশ অঙ্গীকারাবদ্ধ। কিন্তু সে অঙ্গীকার বাস্তবায়ন হয়নি।
“বিবাদীরা জিন বদলে তৈরি বেগুনের ক্ষতিকর প্রভাব নিরুপণে ব্যর্থ হয়েছেন। এরপর এই বেগুন বাজারে উন্মুক্ত করার মাধ্যমে তারা জনস্বাস্থ্য ও জনজীবনের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছেন।”
রিটকারীর আইনজীবী শহিদুল ইসলাম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, বাংলাদেশে প্রায় ৩০ প্রজাতির বেগুন রয়েছে। এর একটি প্রজাতির বেগুনের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে ব্যাসিলাস থারিনভেনসিস (bacillus thurinviensis) নামের একটি ব্যাকটেরিয়া ঢুকিয়ে দিয়ে বিটি বেগুন করা হয়।
“এই বেগুনকে পোকানিরোধী বেগুন বলে বাজারজাত করা হচ্ছে। আসলেই ওই বেগুনে পোকা ধরে না। কারণ এই বেগুন খেলে পরিপাকতন্ত্র নষ্ট হয়ে মারা যায়। বায়োপেসটিসাইডের মাধ্যমে বেগুনের পোকা সাফল্যজনকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা
সম্ভব।”
শহিদুল ইসলাম এবিসি নিউজ বিডিকে বলেন, আমেরিকান কোম্পানি মোনসানটো ভারতের মহারাষ্ট্রে এই বেগুন বাজারজাত করতে চেয়েও পারেনি। প্রতিরোধের মুখে তাদের ওই পরিকল্পনা বাদ দিতে হয়েছে। ফিলিপাইনেও তাদের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।
তাছাড়া এই বেগুনের বীজ কৃষকরা উৎপাদন করতে পারবে না। কোম্পানি থেকে প্রতিবছর বীজ কিনতে হবে, যাতে কৃষকের ‘বীজ স্বাধীনতা’ খর্ব হবে বলে মন্তব্য করেন এই আইনজীবী।