নিজের বাড়িতেই আস্তানা বানাচ্ছে জঙ্গিরা
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: জঙ্গিরা এখন নিজেদের সদস্যদের বাড়িতেই আস্তানা বানাচ্ছে। আস্তানা বানানোর জন্য জমি কিনে বাড়ি বানানোর পরিকল্পনার কথাও জানা গেছে সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া কয়েকজন জঙ্গির কাছ থেকে। সম্প্রতি ঝিনাইদহ, রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের অন্তত সাতটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের পর এমন প্রবণতার কথা জানিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের কর্মকর্তারা।
কর্মকর্তারা মনে করছেন, পুলিশের দেশব্যাপী ব্যাপক প্রচারণার ফলে বাড়ির মালিকেরা যাচাই করে ভাড়াটে তুলছেন। ফলে খুব বিশ্বস্ত লোক ছাড়া আস্তানা গড়ার মতো জায়গা খুঁজে পাচ্ছে না তারা। তাই ভাড়া বাড়ি ছেড়ে তারা নিজেদের বাড়িতে আস্তানা গাড়তে বাধ্য হচ্ছে। তবে বেশির ভাগ আস্তানাই তাঁরা গাড়ছে সীমান্ত অঞ্চলগুলোতে।
গত ২২ এপ্রিল সকালে ঝিনাইদহের সদর উপজেলার পোড়াহাটিতে ধর্মান্তরিত মুসলিম আবদুল্লাহর বাড়িতে অভিযান চালায়। বাড়িটিতে কাউকে না পাওয়া গেলেও বিপুল পরিমাণে বিস্ফোরক ও বোমা তৈরির সরঞ্জাম মেলে। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম গত ২৯ এপ্রিল সাংবাদিকদের বলেন, নব্য জেএমবির সদস্য আবদুল্লাহ সংগঠনের টাকায় ওই বাড়িটি কিনে আস্তানা তৈরি করেন। সেটি ছিল বিস্ফোরকের একটি কারখানার (ল্যাবরেটরি) মতো।
এরপর ২৬ এপ্রিল আবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের যে বাড়িটিতে অভিযান চালায়, সেটিতে রফিকুল ইসলাম আবু নামে নব্য জেএমবির এক সদস্য পরিবার নিয়ে বাস করছিলেন। ওই বাড়িতেই তিনি জঙ্গি সংগঠনের অন্য সদস্যদের আশ্রয় দিয়ে আস্তানা বানিয়েছিলেন। পুলিশ জানিয়েছেন, স্থানীয় ওক ব্যক্তি রফিকুলকে বিনা ভাড়ায় ওই বাড়িটিতে থাকতে দেন। ওই বাড়িতে পুলিশের অভিযানে রফিকুলসহ চারজন নিহত হন। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে এই বাড়িটির অবস্থান। জঙ্গিরা এই বাড়িটিকে সীমান্তের ওপার চোরাইপথে আনা অস্ত্র ও বিস্ফোরকের গুদাম হিসেবে ব্যবহারের পরিকল্পনা করছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এর এক সপ্তাহ পরেই ৭ মে ঝিনাইদহের সীমান্তসংলগ্ন মহেশপুরের একটি বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। মহেশপুরের ওই বাড়িটির মালিক স্থানীয় খাবার ব্যবসায়ী জহুরুল ইসলাম। এই জহুরুল তাঁর দুই ছেলে জসিম উদ্দিন ও আলমগীর হোসেনসহ জঙ্গিবাদে যুক্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছ পুলিশ। এর আগে ৫ মে ঝিনাইদহ সদর উপজেলার লেবুতলা গ্রামে শামীমের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে সেখান থেকে আটটি তাজা বোমা, একটি পিস্তলসহ বোমা তৈরির বেশ কিছু সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। এর তথ্যের ভিত্তিতে ৭ মে মহেশপুরের জহুরুল ইসলামের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়।
৮ মে কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গিদের বাসা ভাড়া পেতে ইদানীং সমস্যা হচ্ছে। তাই জঙ্গিরা এখন নিজেদের সদস্যদের বাড়িতেই আস্তানা গাড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা যাচ্ছে, বাড়ির মালিক নিজেই জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ। তিনিই তাঁর বাড়িতে অস্ত্র ও গোলাবারুদ জমা করছেন এবং বহিরাগত ব্যক্তিদের আশ্রয় দিচ্ছেন। কৌশলগত কারণে সীমান্তবর্তী এলাকায় জঙ্গিদের উপস্থিতি বেশি। কারণ সীমান্ত এলাকা থেকে বিস্ফোরক সংগ্রহ এবং ঘটনা ঘটিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সুযোগ বেশি।
সর্বশেষ আজ বৃহস্পতিবার রাজশাহীর সীমান্তবর্তী গোদাগাড়ীতে যে বাড়িটিতে অভিযান চালানো হয়, সেটি একেবারে ধানখেতের ওপরে ফাঁকা জায়গায়। পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, বাড়ির মালিক কাপড় ব্যবসায়ী সাজ্জাদ নিজেই মেয়ের জামাইয়ের প্ররোচনায় জঙ্গিবাদে যুক্ত হয়েছেন। ধানখেতের ওপর মাস দেড়েক আগে গড়ে তোলা মাটি-টিনের বাড়িটিতে তিনিই জঙ্গিদের আস্তানা গাড়তে দিয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ ছাড়া বৃহস্পতিবার সকাল থেকে পুলিশ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের কানসাট ইউনিয়নের শিবনগর কাইঠাপাড়া ও রাঘবপুরের যে তিনটি বাড়িতে অভিযান শুরু করেছে, এর কোনোটিই ভাড়া বাড়ি নয়।