শবে বরাতের রাতে ঢাকা
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: তিন শিশুই পবিত্র শবে বরাতের রাতে নামাজ আদায় করতে এসেছিল জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে। তাদের মধ্যে মাহফুজুর রহমান দশম শ্রেণি, পারভেজ মোশাররফ অষ্টম আর মোস্তাকিম হোসেন পড়ে সপ্তম শ্রেণিতে। জানাল পরীক্ষায় যাতে ভালো ফল হয় আল্লাহর কাছে সেই দোয়া করেছে তারা।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বায়তুল মোকাররমের গেটে কথা হয় তিনজনের সঙ্গে। তাদের সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল তখন বহু মুসল্লি নামাজ আদায় করে মসজিদ থেকে বের হচ্ছিলেন। নতুন করে আসছিলেন আরও অনেকে।
অবশ্য কেবল বায়তুল মোকাররমই নয়। ঢাকার অন্য মসজিদগুলোর চিত্রও এমনি ছিল। ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মহান আল্লাহর রহমত ও নৈকট্য লাভের আশায় নফল নামাজ আদায়, কোরআন তিলাওয়াত, জিকির, ওয়াজ, মিলাদ মাহফিলসহ নানা ইবাদত-বন্দেগি ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে শবে বরাতের রাতটি কাটিয়েছেন। ফজরের নামাজ আদায় করে ঘরে ফিরেছেন।
শবে বরাত উপলক্ষে বায়তুল মোকাররমের মসজিদের গেটে নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। প্রতিটি প্রবেশপথে ছিল আর্চওয়ে। প্রত্যেককে এর ভেতর দিয়ে প্রবেশ করতে হয়েছে মসজিদে।
নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিদের ভিড় মসজিদ ছাড়িয়ে বাইরের সিঁড়িতেও ছড়িয়ে পড়ে।
রামপুরা থেকে আসা আইপিএস কোম্পানির চাকরিজীবী মোহাম্মদ খোকন বলেন, ‘বাবা মারা গেছে কিছুদিন আগে। আজ রাতে বাবার জন্য দোয়া চাইলাম। পাশাপাশি বছরটা যেন ভালো যায়, সেই দোয়াও করলাম।’
পুরানা পল্টন থেকে নামাজ আদায় করতে এসেছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী মোহাম্মদ রানা। তিনি বললেন, ‘আল্লাহর কাছে অনেক কিছু তো চাইলাম। নিজের জন্য। আরও অনেকের জন্য। আল্লাহ সবাইকে ভালো রাখুন’।
আরামবাগ থেকে আসা ব্যবসায়ী আবু সিদ্দিক বললেন, ‘আল্লাহর কাছে ভুলের জন্য ক্ষমা চাইলাম। ব্যবসা যেন ভালো হয়, সেই দোয়াও চাইলাম’।
সবাই যখন মসজিদে নামাজ আদায় করতে যাচ্ছেন বা আসছেন তখনো গেটে দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছেন পুলিশ সদস্যরা। তাঁদেরই একজন মুরসালিন হোসেন। নওগাঁয় বাড়ি। আলাপকালে বললেন, দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে তিনি ছোটবেলার শবে বরাতের কথা ভাবছিলেন।
কেবল বায়তুল মোকাররম নয়, ঢাকার সব মসজিদেই ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা নামাজ আদায় করেছেন।
নামাজ আদায় করা ছাড়াও এদিন অনেকে মা-বাবার কবর জিয়ারত করেছেন। তাঁদেরই একজন মোহাম্মদ শাকিল। পুরান ঢাকার দয়াগঞ্জে কথা হয় তাঁর সঙ্গে।
শবে বরাতের রাতে পুরান ঢাকার লোকজনের ঘোরাঘুরি অনেক দিন ধরেই চলছে। অবশ্য এই দলে শিশু-কিশোরেরাই বেশি। অনেকে হাঁটছে অনেকে আবার ভ্যান নিয়ে ঘুরছে।
শবে বরাতে গতকাল সকাল থেকে রাত পর্যন্ত পুরান ঢাকার ওয়ারী, নারিন্দা, গেন্ডারিয়া, সূত্রাপুরসহ বিভিন্ন এলাকার রাস্তার মোড়ে মোড়ে বড় বড় রুটি বিক্রি করতে দেখা গেছে। বাহারি সব রুটি। নানা ধরনের আকার। এগুলোর নাম জানতে চাইলে কেউ কেউ বলেন, বনরুটি। কেউ আবার বলেন, ঢাকার ভাষায় নাকি এগুলোকে টাপ্পা বল বলে।