সাইবার হামলায় বাংলাদেশের ক্ষতি হয়নি
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: বিশ্বজুড়ে সাইবার হামলার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯৯টি দেশ আক্রান্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা। এ তালিকায় বাংলাদেশের থাকার ঝুঁকি রয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো কম্পিউটারে ম্যালওয়্যার আক্রমণের খবর পাওয়া যায়নি। জাতীয় ডেটাসেন্টারসহ সরকারি সব ওয়েবসাইট নিরাপদে আছে বলে জানিয়েছেন ন্যাশনাল ডেটা সেন্টারের পরিচালক তারেক বরকতউল্লাহ। এ ছাড়া এখন সহজে ধরা যাচ্ছে আক্রমণকারী ম্যালওয়্যারটি। গড়ে উঠছে প্রতিরোধব্যবস্থা।
গতকাল শুক্রবার বিশ্বজুড়ে একযোগে বড় ধরনের সাইবার হামলার ঘটনা ঘটে। বিভিন্ন দেশের কম্পিউটার ব্যবস্থায় হানা দেয় হ্যাকাররা। হ্যাকিংয়ের শিকার দেশগুলোর তালিকায় আছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, রাশিয়া, স্পেন, ইতালি ও তাইওয়ানের মতো উন্নত প্রযুক্তির রাষ্ট্রও। এই তালিকায় বাংলাদেশের নাম থাকতে পারে বলে মনে করছেন দেশের বিশিষ্ট তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ এবং বিডিনগ বোর্ড অব ট্রাস্টির চেয়ারম্যান সুমন আহমেদ সাবির।
তারেক বরকতউল্লাহ বলেন, ‘সাইবার হামলার ঘটনার ওপর চোখ রাখা হচ্ছে। হামলায় যে ম্যালওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে, তা উইন্ডোজের নিরাপত্তা ত্রুটি কাজে লাগিয়ে করা হয়েছে। সরকারি সব সেবার ক্ষেত্রে উইন্ডোজের পরিবর্তে লিনাক্স ব্যবহার করা হয়। আমাদের সাইবার ইমারজেন্সি রেসপন্স টিম (সার্ট) পরীক্ষা করে দেখেছে আমরা নিরাপদে আছি। তবে বেসরকারি পর্যায়ে বা ব্যক্তিগত পর্যায়ে কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না, তা দেখা সম্ভব হয়নি। কোনো ঘটনা ঘটলে আগামী দুই-তিন দিনের মধ্যে বের হবে।’
সুমন আহমেদ বলেন, ‘সাইবার হামলায় আক্রান্ত দেশগুলোর পুরো তালিকা প্রকাশিত হয়নি। তবে নিরাপত্তাবিষয়ক ওয়েবসাইটগুলোয় প্রকাশিত যে ম্যাপ দেখাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশ আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টিও দেখা যাচ্ছে। আজ ও আগামীকাল বিষয়টি আরও পরিষ্কারভাবে বোঝা যাবে। তবে শুক্রবার এই সাইবার হামলা হওয়ায় আমরা অনেকটাই বেঁচে গেছি। শুক্রবার আমাদের দেশে ছুটি হওয়ায় বেশির ভাগ অফিস বা কম্পিউটার সিস্টেম বন্ধ থাকে। তবে উইন্ডোজচালিত পিসি সিস্টেম যাঁদের চালু ছিল, তাদের ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।’
সাইবার নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের রাইটটাইম লিমিটেডের তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঠিক আক্রান্ত নই, কিন্তু ঝুঁকির মধ্যে। ম্যালওয়্যারের মাধ্যমে ছড়ানো আক্রমণটিতে ৯৯টি দেশ আক্রান্ত হয়েছে। এটা সিস্টেমে বিষ থাকার মতো। যেখানে নেটওয়ার্ক পাবে ছড়াবে। ম্যালওয়্যারটি র্যানসমওয়্যারের মধ্যে পড়ে। যাদের পুরোসময় অনলাইনে থাকতে হয় বা অনলাইনভিত্তিক অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে, তাদের ঝুঁকি বেশি।’
বিশেষজ্ঞরা জানান, র্যানসমওয়্যার হচ্ছে পরিচিত ম্যালওয়্যার বা ক্ষতিকর সফটওয়্যার প্রোগ্রাম। কম্পিউটার বা মুঠোফোনের মতো যন্ত্রের মধ্যে এই সফটওয়্যার ঢুকিয়ে দিতে পারলে যন্ত্রটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেওয়া যায়। এ কাজ করে তা থেকে মুক্তির জন্য অর্থ দাবি করে হ্যাকাররা।
তৌহিদুর রহমান বলেন, মাইক্রোসফটের উইন্ডোজ সফটওয়্যারের নিরাপত্তা ত্রুটি কাজে লাগিয়ে এ আক্রমণ করা হয়েছে। যাদের সিস্টেম হালনাগাদ করা নেই, তারা ঝুঁকিতে রয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে, ইতিমধ্যে ম্যালওয়্যারটি শনাক্ত করা গেছে। কোনো সিস্টেমে আক্রমণ করলে আর অর্থ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ৫ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা এটা মুছে ফেলতে পারবেন। অ্যান্টিভাইরাসেও এটি ধরা পড়বে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, যাঁরা এ ধরনের আক্রমণের শিকার হবেন, তাঁরা অর্থ খরচ করবেন না। ব্যক্তিগত পর্যায়ে খুব প্রয়োজনীয় তথ্য না থাকলে পিসি ফরম্যাট দিলেই কাজ হবে। র্যানসমওয়্যারসহ যেকোনো ফিশিং (প্রতারণামূলক বা প্রলুব্ধ করা করা) আক্রমণ সাধারণত অনলাইনে বোকামির কারণে হতে পারে। অপরিচিত উৎস থেকে পাঠানো কোনো ফাইল ক্লিক করা থেকে সাবধান থাকুন। না জেনে অপরিচিত সফটওয়্যার বা প্রোগ্রাম ইনস্টল করবেন না। লাইসেন্স সফটওয়্যারের সর্বশেষ সংস্করণ ব্যবহার করুন। নিরাপত্তা প্যাচ হালনাগাদ করুন। মাইক্রোসফট বলেছে, Ransom: Win 32. WannaCrypt নামের ম্যালওয়্যারটি শনাক্ত করা এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন মাইক্রোসফটের প্রকৌশলীরা। তাই কোনো করপোরেট নেটওয়ার্ক আক্রমণের ঝুঁকিতে থাকলে তাতে লগইন করার আগে হালনাগাদ অ্যান্টিভাইরাস বা উইন্ডোজ ডিফেন্ডার চালু করে নিন।