বিচার চেয়ে সোচ্চার ফেসবুক
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: রাজধানীর বনানীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে চেয়েছিলেন প্রভাবশালী আসামিরা। এই পরিস্থিতিতে ফেসবুক ব্যবহারকারীরা সোচ্চার হন। মূলধারার গণমাধ্যমেও নিয়মিত খবর আসতে থাকে। চাপে পড়ে পুলিশ। দুই আসামি গ্রেপ্তার হন। ধর্ষণের বিরুদ্ধে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের জোরালো অবস্থান এখনো অব্যাহত আছে।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তপন মাহমুদ ধর্ষণ নিয়ে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। নিবন্ধের অংশবিশেষ তুলে দিয়েছেন স্ট্যাটাসে: ‘ধর্ষণ নামের অসুখটি আসলে পুরুষতান্ত্রিক অহমিকা বা ক্ষমতা কাঠামোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, বলা যায় উপজাত (বাই-প্রোডাক্ট)। ধর্ষণ মনস্তত্ত্ব তৈরিকারী পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধেও আমাদের কথা বলতে হবে। না হলে শুধু আইন বা বিচার দিয়ে একে ঠেকানো যাবে না।’
ধর্ষণ মামলার দুই আসামি শাফাত আহমেদ ও তাঁর বন্ধু সাদমান সাকিফ গত বৃহস্পতিবার সিলেটে গ্রেপ্তার হন। এ নিয়ে স্ট্যাটাস দেন সাজেদুর রহমান নামে একজন। তিনি লেখেন, ‘পুলিশ চাইলে পারে না, এমন কোনো কাজ নেই।’
সাজেদুরের স্ট্যাটাসে সাফি ইমাম সিনহা লিখেছেন, ‘সমস্যাটা হলো পুলিশ যে চায় না।’
জবাবে সাজেদুরের মন্তব্য, ‘অর্ডার পাইলে ওরাও চায়…।’
শাফাত-সাদমানের গ্রেপ্তারের খবরে মোহাম্মদ আবু নাসিম তাঁর স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘এ কথা অবশ্যই বলতে হবে যে সামাজিক মাধ্যম দিন দিন শক্তিশালী হচ্ছে।’
দুই আসামি গ্রেপ্তার হওয়ায় পর কী হবে, তা নিয়ে সন্দিহান সুপ্রিয় ভৌমিক। তিনি তাঁর স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘গ্রেপ্তার তো হলো…দেখা যাক, ঘটনা গড়ায় কোন দিকে। মন্তব্য তারপর করব।’
সুপ্রিয় ভৌমিকের স্ট্যাটাসে লিমন নামের একজনের মন্তব্য, ‘বাপের টাকা আছে, ফুড়ুত করে উড়াল দেবে খাঁচা থেকে। জনগণকে দেখানো গ্রেপ্তার আমরা চাই না…।’
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, স্পিকার নারী, আরও অনেক উঁচু পদে নারীরা আছেন উল্লেখ করে নীরব হোসেন তাঁর স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘দেখা যাক, দেশে নারী নির্যাতনের বিচার কী রকমের হয়। আমার আকুল আবেদন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে, এই ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড দিয়ে কার্যকর করা হোক তাঁদের শাস্তি…।’
ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পর অনেকে আপন জুয়েলার্স বর্জনের ডাক দেন। আসামিদের ছবি প্রকাশ করে ঘৃণা জানান ফেসবুক ব্যবহারকারীরা। ধর্ষণের খবর সংগ্রহ ও উপস্থাপন নিয়ে সাংবাদিকদের ভূমিকারও সমালোচনা হয়। কেউ কেউ বনানীর ঘটনাকে ‘পিংক’ সিনেমার বাস্তব রূপায়ণ বলে বর্ণনা করেন।
জাকিয়া সুলতানা তাঁর স্ট্যাটাস লেখেন, ‘…তনু আপুর বেলায় প্রমাণ ছিল না, ধর্ষকের পরিচয় জানা ছিল না, তাই ভালুকের ওপর দোষ দেওয়া হয়েছে। এবার কী হয়, দেখার অপেক্ষায় রইলাম…।’
জাকিয়ার স্ট্যাটাসে সাইফুদ্দিন সাগরের মন্তব্য করেন, ‘কিছুই হবে না…হয়তো-বা কদিন মিডিয়ায় লেখালেখি হবে…এটা নিয়ে কেউ বা টক শোতে এসে বড় বড় কথা বলবেন…এর বেশি আর কিছুই না…যারা এই ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত, তারাও ভালুকের চেয়ে কম না…।’
[ফেসবুক ব্যবহারকারীদের মন্তব্যে বানান, ব্যাকরণ ও ভাষারীতিগত পরিমার্জন আনা হয়েছে।]
গ্রন্থনা: সাইফুল সামিন ( প্রথম আলো )