সুপ্রিম কোর্টের ভাস্কর্য সরানো হল
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: ধর্মীয় সংগঠনগুলোর দাবির মুখে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে সরিয়ে নেওয়া হল ন্যায়বিচারের প্রতীক হিসেবে স্থাপিত ভাস্কর্যটি।
আলোচিত এ ভাস্কর্য সরানোর কাজ শুরু হয় বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের বন্ধ ফটকের বাইরে থেকে বেশ কয়েকজন শ্রমিককে ভাস্কর্যটি অপসারণের কাজে নিয়োজিত দেখা যায়।
ভাস্কর্যটির শিল্পী মৃণাল হকও এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
তিনি সাংবাদিকদের বলেন, চাপের মুখে পড়ে এই ভাস্কর্য অপসারণ করা হচ্ছে। অপসারণে যাতে ভাস্কর্যটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য এর তদারক করেন তিনি।
কাদের তত্ত্বাবধানে ভাস্কর্যটি অপসারণ করা হয় সে বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট হওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে কথা বলতে সুপ্রিম কোর্টের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার মোবাইল ফোনে কল করা হলেও সেগুলো বন্ধ পাওয়া যায়। কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
রোমান যুগের ন্যায়বিচারের প্রতীক ‘লেডি জাস্টিস’র আদলে একটি ভাস্কর্য কয়েক মাস আগে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয়।
এরপর থেকে হেফাজতসহ কয়েকটি ইসলামী সংগঠন তার বিরোধিতায় নামে। হেফাজত এই ভাস্কর্য সরানোর দাবি জানিয়ে সরকারকে ৫ মে মতিঝিলে ফের সমাবেশের হুমকি দেয়। ওলামা লীগও তা অপসারণের দাবি জানায়।
গত ১১ এপ্রিল হেফাজতের আমির শাহ আহমদ শফী নেতৃত্বাধীন এক দল ওলামার সঙ্গে গণভবনে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাস্কর্যটি সরাতে পদক্ষেপ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
রোজা শুরুর আগে এই ভাস্কর্য অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছিল ইসলামী সংগঠনগুলো।
ভাস্কর্য অপসারণের পক্ষে যুক্তি হিসেবে এর নান্দনিক ‘ত্রুটির’ পাশাপাশি জাতীয় ঈদগাহের কাছে অবস্থানের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
তবে তার এই সিদ্ধান্তের সমালোচনাকারীরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে মৌলবাদীদের সঙ্গে আপস করছে সরকার এবং এতে ধর্মীয় মৌলবাদ আপস করছে সরকার এবং এতে ধর্মীয় মৌলবাদ আরও উৎসাহিত হবে।
ভাস্কর্য অপসারণের খবর প্রকাশের পর রাত ২টার দিকে সুপ্রিম কোর্টের সামনের রাস্তায় সমবেত হয়ে বিক্ষোভ করেন গণজাগরণ মঞ্চের একদল কর্মী। পরে ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্টের নেতাকর্মীরা তাদের সঙ্গে যোগ দেন।
ন্যায়বিচারের প্রতীক এই ভাস্কর্য আদালত প্রাঙ্গন থেকে অপসারণের প্রতিবাদ জানান তারা। এক পর্যায়ে তারা সুপ্রিম কোর্টের ফটকে ধাক্কাধাক্কি শুরু করলে রাত ৩টার দিকে ভাস্কর্য সরানোর কাজ কিছুক্ষণ বন্ধ রেখে আশপাশের বাতিগুলো নিভিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর ভোররাত ৪টার দিকে ভাস্কর্যটি ক্রেনের সাহায্যে পিকআপ ভ্যানে তুলে নেওয়া হয়।
ভাস্কর্যটি হাই কোর্টের এনেক্স ভবনের সামনে পুনঃস্থাপন করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন ভাস্কর মৃণাল হক।
ভাস্কর্য অপসারণের প্রতিক্রিয়ায় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, কারও সন্তান হারালে যেমন লাগে তারও তেমন লাগছে।
এর আগে কয়েকটি ইসলামি দলের দাবির মুখে সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলে বিমানবন্দরের সামনে থেকে লালনের ভাস্কর্য অপসারণের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, এরপর হয়তো অপরাজেয় বাংলা, রাজু ভাস্কর্য ও শেরাটনের সামনের ঘোড়ার গাড়ির ভাস্কর্য সরানোর নির্দেশ আসবে।
ভাস্কর্য অপসারণের প্রতিবাদে বিক্ষোভরতদের একজন তানভীর রুসমত বলেন, “এই ভাস্কর্য ন্যায়বিচারের প্রতীক। মৌলবাদীদের দাবির মুখে এটা সরানো যায় না।”