নকিয়া কেন মরিয়া ?
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: এই নকিয়া সেই নকিয়া কি না, প্রশ্ন উঠতে পারে। কারণ, নকিয়ার ব্র্যান্ড লাইসেন্স কিনে নতুন ফোন তৈরি ও বিক্রি করছে ফিনল্যান্ডের প্রতিষ্ঠান এইচএমডি গ্লোবাল। নকিয়া একসময় বিশ্বের শীর্ষ মোবাইল ফোন নির্মাতার স্থানে ছিল। সেই পুরোনো গৌরব ফিরে পেতে নকিয়া ব্র্যান্ড নিয়ে এইচএমডি এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে। নকিয়াকে জনপ্রিয় করতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। যেমন: ১৭ বছর আগের পুরোনো সেই ব্রিক বা ফিচার ফোন ৩৩১০ মডেলটিকে নতুন করে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। কিন্তু এতে কি সফলতা আসবে? এইচএমডি আত্মবিশ্বাসী। যদি ব্যর্থতাও আসেও, তার জন্যও ছক কষে রেখেছে প্রতিষ্ঠানটি।
১৭ বছর আগে আইকনিক ৩৩১০ মডেলটি তখন বাজারে ছেড়েছিল ফিনল্যান্ডের প্রতিষ্ঠানটি। ওই ফোনটিতে সে সময়ের আধুনিক সব ফিচার ছিল। কাস্টম রিংটোন, জনপ্রিয় স্নেক টু গেম, বড় এসএমএস সমর্থন প্রভৃতি। সবচেয়ে দরকারি ফিচার ২৬০ ঘণ্টা স্ট্যান্ডবাই ব্যাটারি সুবিধাও ছিল এতে। রোমান যুগের কংক্রিক্টের মতো শক্তিশালী ফোন বলে মনে করা হতো ৩৩১০ মডেলটিকে। ১২ কোটি ৬০ লাখ ইউনিট বিক্রি হয়েছিল এটি। এর প্রতি মানুষের একধরনের আবেগ তৈরি হয়েছিল। নকিয়ার প্রতি মানুষের সেই আবেগকে আবারও কাজে লাগাতে এখন চাইছে এইচএমডি গ্লোবাল। তাই এ বছর আবার ৩৩১০ মডেলটিকে নতুন করে হাজির করেছে নকিয়া।
বাংলাদেশের গ্রাহক বা ক্রেতাদের কাছেও জনপ্রিয় হয়েছিল নকিয়ার ক্ল্যাসিক ওই ফোন। বাংলাদেশের গ্রাহকদের কথা মাথায় রেখে ২৪ মে ৩৩১০ মডেলের নতুন সংস্করণ বাংলাদেশের বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে এইচএমডি গ্লোবাল। এ ছাড়া তিনটি অ্যান্ড্রয়েডচালিত স্মার্টফোন বাজারে ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
এইচএমডির কর্মকর্তারা বলেন, নকিয়ার কাছ থেকে শুধু ব্র্যান্ড লাইসেন্স কিনেছেন তাঁরা। এ ছাড়া ফোনের নকশা থেকে শুরু করে সবদিক তাঁরাই দেখেছেন। নকিয়ার ক্ল্যাসিক ফোনটি বাংলাদেশের গ্রাহকেরা পছন্দ করবেন। নতুন সংস্করণের নকিয়া ৩৩১০ মডেলের ফোনটি মূলত ক্ল্যাসিক সেই পুরোনো ফোনের নতুন রূপ।
কী আছে নতুন ফোনটিতে? এতে ব্যাটারি লাইফ স্ট্যান্ডবাই হিসেবে তিন গুণ বাড়ানো হয়েছে, টকটাইম করা হয়েছে ২২ ঘণ্টা। রঙিন স্ক্রিনে স্নেক গেমের নতুন সংস্করণ খেলা যায়। এতে মানানসই ডিজিটাল ক্যামেরা যুক্ত হয়েছে। ভাবটাই এমন যে এটি স্মার্টফোনের মতো ফিচার ফোন, যাতে কিছু ফাংশন প্রি-ইনস্টল করা হচ্ছে। কিন্তু অ্যাপ স্টোর থেকে অ্যাপ নামানোর সুযোগ নেই। কম রেজল্যুশনের স্ক্রিন রঙিন দেখালেও এতে টাচ স্ক্রিন-সুবিধা নেই। অবশ্য নিয়ন্ত্রণ করার জন্য উন্নত কিপ্যাড বসেছে এতে। এতে ওয়াই-ফাই ব্যবহারের সুযোগ নেই কিন্তু টুজি বা ২.৫ জি নেটওয়ার্ক ওয়েব ব্রাউজার আছে। ক্ল্যাসিক এ ফোনকে হালকা-পাতলা ও রঙিন করে তুলেছে নকিয়া। চারটি রঙে বাজারে আসছে নকিয়া ৩৩১০। বাংলাদেশে এ ফোনের বিক্রি শুরু হতে যাচ্ছে জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে।
ফোনটির পর্যালোচকেরা একে পুরোনো নকিয়া ফোনের নতুন হালনাগাদ রূপ বলছেন। তবে এর কাঠামোকে ঠিক আগের মতো শক্ত-সামর্থ্য বলতে নারাজ। কারণ, ৪ হাজার ২৫০ টাকা দামের ফোনটি আগের চেয়ে এখন অনেক পাতলা।
নকিয়ার এই ফোন বাংলাদেশের সব নেটওয়ার্ক সমর্থন করবে। ফোনটি যুক্তরাজ্য ও ভারতের বাজারেও বিক্রি করবে এইচএমডি গ্লোবাল। সাশ্রয়ী দামের ফোন হিসেবে এবং নকিয়ার পুরোনো সুনামের কারণে অনেকেই এটি কিনবেন বলে মনে করছেন এইচএমডির কর্মকর্তারা।
এইচএমডির সাউথইস্ট এশিয়ার ইমার্জিং মার্কেটসের প্রধান বিপণন কর্মকর্তা আরিফ ইফতেখার জানান, বাংলাদেশে একসময় শীর্ষ মোবাইল ব্র্যান্ড ছিল নকিয়া। এখনো ৯৫ শতাংশ মানুষ মোবাইল ব্র্যান্ড হিসেবে নকিয়াকে চেনেন। নকিয়ার জন্য বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ বাজার। সবার আগে তাই চারটি মডেলের ফোন একসঙ্গে বাংলাদেশে উদ্বোধনের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে এইচএমডির লক্ষ্য স্মার্টফোন ব্যবসা। নকিয়া ৩৩১০-কে স্মার্টফোনের পাশাপাশি ফিচার ফোন হিসেবে ছাড়া হয়েছে। সব শ্রেণির মানুষ, বিশেষ করে নকিয়াপ্রেমী ও নতুন ব্যবহারকারীদের আকর্ষণ করবে ৩৩১০। এতে ঐতিহ্য আর নতুন ফিচার হিসেবে ক্যামেরা মতো বিষয়গুলো সমন্বয় করা হয়েছে।
পুরোনো যুগের নকিয়া
নকিয়া নিজে আর কোনো ফোন তৈরি করে না। ২০১৩ সালে নেটওয়ার্ক যন্ত্রপাতি ব্যবসায় মনোযোগ বাড়াতে মোবাইল ফোন বিভাগটি বিক্রি করে দেয় নকিয়া। কিন্তু নকিয়ার সাবেক কিছু কর্মী এইচএমডি গ্লোবাল নামে নতুন একটি কোম্পানি খুলে বসেন। তাঁরাই নকিয়ার কাছ থেকে ব্র্যান্ড লাইসেন্স কিনে নেন। নতুন প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয় ফিনল্যান্ডের নকিয়ার কার্যালয়ের অদূরেই। এখানকার কর্মীরা নকিয়াতে কাজ করতেন। নকিয়ার কর্মকর্তারাই এইচএমডির পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হয়েছেন। তাই এটা ঠিক নকিয়া নয়, কিন্তু নকিয়ার মতোই। এইচএমডি গ্লোবালের কাছ থেকে কয়েকটি মডেলের অ্যান্ড্রয়েডনির্ভর স্মার্টফোনের ঘোষণাও এসেছে। গত ফেব্রুয়ারিতে স্পেনের বার্সেলোনায় নতুন স্মার্টফোনগুলোর ঘোষণার পাশাপাশি নকিয়ার ক্ল্যাসিক ফোনটিকে ফিরিয়ে আনার ঘোষণা আসে।
অবশ্য নকিয়ার এই ফিরে আসার পেছনে বড় ধরনের ব্যবসা পরিকল্পনা আছে। এইচএমডি গ্লোবাল খরচ-সচেতন, কিন্তু টেকসই ফোনের ক্রেতাদের ধরতে চায়। নকিয়ার অতীত ঐতিহ্যকে কাজে লাগিয়ে এইচএমডি গ্লোবালের স্মার্টফোনগুলোকে জনপ্রিয় করতে চাইছে প্রতিষ্ঠানটি।
এইচএমডির ৩৩১০ মডেলটির সফলতা নকিয়াও চাইছে। কারণ, এটি জনপ্রিয় হলে রয়্যালটির অর্থ তারাও পাবে। তবে সফলতার পাশাপাশি ব্যর্থতার আশঙ্কাও আছে।
নকিয়ার মতোই নানা উদ্যোগে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছিল কানাডার ব্ল্যাকবেরি। কিন্তু ব্ল্যাকবেরির ফোন জনপ্রিয় হয়নি। এখন শুধু সফটওয়্যারের দিকে ঝুঁকেছে তারা। কিন্তু নকিয়া মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের এ চেষ্টা যদি সফল হয়, তবে আবার সাফল্যের চূড়ায় দেখা যাবে নকিয়াকে।