অনুমোদনহীন রেইনট্রিকে রূপালী ব্যাংকের ঋণ

আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক হোটেলের নামে ঋণ দেওয়ার নিয়ম নেই। ঋণের টাকা পেতে হলে আবাসিক পরিকল্পনার পরিবর্তে বাণিজ্যিক পরিকল্পনা অনুমোদন দাখিল করতে হবে—ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ প্রথমে এমন শর্ত দিলেও তা মানা হয়নি। ৩০ কোটি টাকা অনুমোদন করে রেইনট্রিকে ১৫ কোটি টাকা দিয়েও দেয় রূপালী ব্যাংক।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) থেকে বাণিজ্যিক অনুমোদন এনে দেওয়ার ব্যক্তিগত নিশ্চয়তা দেন বি এইচ হারুন। আর এ নিশ্চয়তার ওপর ভরসা করেই ঋণ ছাড় করে রূপালী ব্যাংক। হোটেলটির পরিচালকেরা হলেন বি এইচ হারুনের স্ত্রী মনিরা আক্তার ওরফে মনিরা হারুন; তিন ছেলে শাহ মোহাম্মদ নাহিয়ান হারুন, শাহ মোহাম্মদ আদনান হারুন ও মাহির হারুন এবং মেয়ে হোমায়ারা হারুন।

রেইনট্রি হোটেল এখনো বাণিজ্যিক অনুমোদন পায়নি এবং পাওয়ার কোনো সুযোগও নেই বলে জানান রাজউক চেয়ারম্যান বজলুল করিম চৌধুরী।

যোগাযোগ করা হলে বি এইচ হারুন নিশ্চয়তা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘অনুমোদন পেতে রাজউকে আবেদন করেছি, আশা করি অনুমোদন হয়ে যাবে। বলা যায় বিষয়টা প্রক্রিয়াধীন।’ বি এইচ হারুনের দাবি, হোটেলটি যে সড়কে, সেই সড়কে বাণিজ্যিক ভবন করার সুযোগ আছে রাজউকের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী। আর রাজউকের অনুমোদন পেলে পুরো ঋণ পাওয়া যাবে। অনুমোদন পেতে একজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর সুপারিশ রয়েছে বলেও তিনি জানান। তবে রাজউকে খোঁজ নিয়ে বি এইচ হারুনের এ বক্তব্যের সত্যতা পাওয়া যায়নি।

রাজউক চেয়ারম্যান বলেন, ওই সড়ককে বাণিজ্যিক করার কোনো পরিকল্পনা নেই। আর নির্দিষ্ট কোনো স্থাপনাকে বাণিজ্যিক করাও যাবে না।

রাজধানীর বনানীর ২৭ নম্বর সড়কের ৪৯ নম্বর প্লটেই আলোচিত এ হোটেলটিতে জমির পরিমাণ ৯ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ। বেআইনিভাবে পরিচালিত হওয়ায় গত ১৫ এপ্রিল হোটেলটি সিলগালা করে দিয়েছিলেন রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

রেইনট্রি হোটেলের এমডি ব্যাংকটির গুলশান করপোরেট শাখায় ঋণের আবেদন করেন ২০১৬ সালের ২৫ জানুয়ারি। আবেদনে তিনি বলেন, ১০ তলাবিশিষ্ট পাঁচতারকা মানের হোটেলটি নির্মাণে ৬৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা ব্যয় হবে। এই আবাসিক হোটেল ও রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করতে ৩৫ কোটি টাকা ঋণ প্রয়োজন।

ব্যাংক সূত্র জানায়, রেইনট্রির আবেদনের পর দ্রুত ফাইল প্রস্তুত করা হয়। এ জন্য ছিল প্রধান কার্যালয়ের বিশেষ চাপ। এরপর গত বছরের ২৩ মার্চ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৯৯৪তম সভায় ৩০ কোটি টাকা ঋণ অনুমোদন হয়। এ সময়ে তৈরি ব্যাংকটির পর্ষদের স্মারকে বলা হয়েছে, ‘ঋণ তথ্য ব্যুরোর হিসাবে হোটেলটির পরিচালক মাহির হারুনের প্রিমিয়ার ব্যাংকে খেলাপি ঋণ রয়েছে। পরে প্রিমিয়ার ব্যাংক চিঠিতে জানায়, ঋণটি নিয়মিত করা হয়েছে।’

তবে রূপালী ব্যাংক থেকে ঋণ পেতেই মাহির হারুনের নামে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ঋণ নিয়মিত দেখানো হয় বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, বি এইচ হারুন ও তাঁর ছেলে শাহ মোহাম্মদ নাহিয়ান হারুন প্রিমিয়ার ব্যাংকের পরিচালক।

ঋণ অনুমোদনের পর গত বছরের ৭ এপ্রিল রূপালী ব্যাংকের গুলশান শাখাকে প্রধান কার্যালয় জানায়, ৩০ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন হয়েছে। প্রধান কার্যালয় ঋণ অনুমোদন কার্যকরে ১৩টি শর্ত দেয়। শর্তে বলা হয়, ঋণের বিপরীতে জামানত হিসেবে প্রস্তাবিত জমি বন্ধক দিতে হবে। আবাসিক পরিকল্পনার পরিবর্তে রাজউক থেকে বাণিজ্যিক পরিকল্পনা অনুমোদন পাওয়ার পর টাকা ছাড় করা হবে। তবে বাণিজ্যিক অনুমোদন না হলেও ঋণ পায় রেইনট্রি।

সূত্র জানায়, গ্রাহকের পাশাপাশি প্রধান কার্যালয় থেকেও ঋণ বিতরণের জন্য চাপ আসে। নির্দেশনা না মানায় গত বছরের মার্চে শাখার ব্যবস্থাপক শাহেদুর রহমানকে সরিয়ে নোয়াখালীতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ব্যাংকটির সাবেক এমডি এম ফরিদউদ্দিন এ ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করেন।

ফরিদউদ্দিন বলেন, পর্ষদে ঋণ অনুমোদন হয়েছে, এরপরই বিতরণ হয়েছে। ব্যাংক নিয়ে কথা বলতে আগ্রহী নন বলে তিনি জানান।

প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে ২০১৬ সালে তিন দফায় ১৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা ঋণ ছাড় করে গুলশান শাখা। বর্তমানে সুদসহ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৫ কোটি ৩০ লাখ টাকা। হোটেলটির বাণিজ্যিক ব্যবহার অনিশ্চিত হয়ে পড়ায় এখন বিপাকে পড়েছে ব্যাংকটি।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ