কুমিল্লায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে খুন করে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র !
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: কুমিল্লার ব্রিটেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাহজাদা ইসলাম হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড মডেল কলেজের অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী জড়িত বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই কিশোর গত শনিবার সন্ধ্যায় সাত-আটজন লোক নিয়ে নগরের নজরুল অ্যাভিনিউ এলাকায় হত্যাকাণ্ডটি ঘটিয়েছে বলে প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশসহ একাধিক সূত্র জানিয়েছে।
শাহজাদা হত্যার ঘটনায় সাত ব্যক্তির নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও তিন-চারজনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। গতকাল বিকেল পাঁচটায় শাহজাদার বাবা সহিদ মিয়া বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলার দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতদের গতকাল বিকেলেই কুমিল্লার আমলি আদালতে হাজির করা হয়। আদালতের বিচারক তাদের কারাগারের কিশোর সংশোধনকেন্দ্রে রাখার নির্দেশ দেন।
পুলিশের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, অষ্টম শ্রেণিতে পড়লেও তার বয়স অন্তত ১৬ বছর। সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগে কুমিল্লার একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাকে টিসি (ট্রান্সফার সার্টিফিকেট) দিয়ে বের করে দেয়। সর্বশেষ চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয় সে। এই বয়সেই নিজ নামে সে গড়ে তুলেছে একটি বাহিনী। কিশোর ওই বাহিনীকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতা।
এদিকে ওই কিশোর সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করার জন্য কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড মডেল কলেজ (এই কলেজে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদান চলে) কর্তৃপক্ষ গতকাল সোমবার তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটিকে আগামী তিন কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
জানতে চাইলে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড মডেল কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম এমদাদুল হক বলেন, ওই কিশোর তাঁদের প্রতিষ্ঠানে চলতি বছর ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। নতুন এই ছাত্র সম্পর্কে তাঁদের তেমন কোনো ধারণা নেই। ওর কিশোর অপরাধের কাহিনি শুনে তাঁরাও বিস্মিত।
পুলিশের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানিয়েছে, নিহত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী শাহজাদা ইসলাম এবং ওই কিশোর ছাত্রলীগের কর্মী ছিলেন। তাঁরা কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের এক নেতার অনুসারী ছিলেন। নজরুল অ্যাভিনিউ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে শাহজাদা ও ওই কিশোরের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। সেই দ্বন্দ্ব দীর্ঘদিন ধরে চলছিল। এই বিষয়টি সামনে রেখেই পুলিশের তদন্তকাজ এগোচ্ছে।
ঘটনার দিন নজরুল অ্যাভিনিউ এলাকায় মোটরসাইকেলে চালকের আসনে বসা ছিলেন শাহজাদা, মাঝে ধর্মপুর এলাকার জনি ও পেছনে নেসার উদ্দিন ভূঁইয়া রোমান। নেসার উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, মোটরসাইকেল থামানোর পর কিছু বুঝে ওঠার আগেই চাপাতি দিয়ে শাহজাদার ঘাড়ে ও মাথায় কোপ দেয় ওই কিশোর। তাঁকেও কোপ দেওয়ার চেষ্টা করে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের ওই নেতার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু সালাম মিয়া বলেন, পূর্বশত্রুতা ও আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে ওই হত্যাকাণ্ড ঘটে।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ওই কিশোরের বাড়ি লাকসাম পৌরসভায়। সে ওই এলাকার এক প্রবাসীর ছেলে। মাকে নিয়ে সে কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড়ে একটি ভাড়া বাসায় থাকে। ২০১৬ সালে এক সহপাঠীকে কুমিল্লার ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজে মারধর করার কারণে তাকে বের করে দেওয়া হয়। নগরের ঠাকুরপাড়া এলাকার কিবরিয়া ও রাব্বী গ্রুপ মিলে তাকে কুমিল্লা টাওয়ারের সামনে কয়েক মাস আগে চাপাতি দিয়ে কোপায়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তথ্য গোপন করে সে লাকসাম আইডিয়েল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে সপ্তম শ্রেণি পাসের সনদ আনে। এরপর ভর্তি পরীক্ষায় ওই সনদ দেখিয়ে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড মডেল কলেজে ভর্তি হয়। ভর্তি হওয়ার পর গত চার মাসে নগরের নজরুল অ্যাভিনিউ থেকে মডার্ন স্কুল, মনোহরপুর ও রামঘাট এলাকায় স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে সে বিকেল ও সন্ধ্যায় মহড়া দিত। এতে ওই এলাকার বাসিন্দারা অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওই কিশোরের মা কোনো মন্তব্য করেননি। নগরের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সৈয়দ মো. সোহেল বলেন, ওই কিশোর অপরাধী গ্রেপ্তার হলেই এ হত্যাকাণ্ডের আদ্যোপান্ত বেরিয়ে আসবে।
কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘নৈতিক শিক্ষার অভাব ও জেদের বশবর্তী হয়ে ওই কিশোর ভয়ংকর অপরাধী হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক সমর্থন প্রত্যাহার ও সামাজিকভাবে ওই কিশোরদের সৎপথে ফিরিয়ে আনতে হবে। অন্যথায় একের পর এক তারা অপরাধ করে যাবে।’