জবাব দেবেন সাকিব ?
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: লন্ডনে পড়তে আসা বাংলাদেশি তরুণ ভীষণ উত্তেজিত। ‘বাংলাদেশ এটা কী টিম নামাল? মাত্র তিনজন বোলার!’
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে মেহেদী হাসান মিরাজকে না খেলিয়ে একজন বাড়তি ব্যাটসম্যান খেলানোয় অনেক কথা হচ্ছে। তবে তিনজন কোথায়, তারপরও তো দলে চারজন বোলার ছিল। ভুলটা ধরিয়ে দেওয়ায় ওই তরুণ অবলীলায় বলে ফেললেন, ‘আপনি সাকিবকেও ধরছেন? সাকিব আর বোলার আছে নাকি!’
প্রায় ১১ বছর আগে বাংলাদেশ দলে যখন প্রথম এসেছিলেন, সাকিবের মূল পরিচয় ছিল ব্যাটসম্যান। ব্যাটসম্যান, যে বোলিংও করতে পারে। সেই সময়ে কেউ বোলার সাকিবকে নিয়ে প্রশ্ন তুললেও তুলে থাকতে পারে। কিন্তু এখন এই প্রশ্ন! যখন সাকিব টেস্ট-ওয়ানডে দুটিতেই বাংলাদেশের সফলতম বোলার। সেই কবে থেকে বয়ে আসছেন দলের বোলিং আক্রমণের ভার।
মোস্তাফিজুর রহমানের আগমনের আগ পর্যন্ত ‘বোলিংয়ে কে ম্যাচ জেতাতে পারে’ প্রশ্নের উত্তরে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত হয়ে এসেছে যাঁর নাম।
শুরুতে যদি প্রশ্ন উঠেও থাকে, সেটি মুছে দিতে একদমই সময় নেননি সাকিব। উল্টো দ্রুতই অন্য একটা প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন—ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি বেশি ভালো না বোলার হিসেবে?
শুধু আদর্শ অলরাউন্ডারদের নিয়েই এমন সংশয় থাকে—ব্যাটিং ভালো না বোলিং ভালো! ব্যাটসম্যানের ভূমিকায় দলে জায়গা পেতে পারেন, আবার বোলারের ভূমিকায়ও—আদর্শ অলরাউন্ডারের এই পূর্বশর্তও সাকিবের মতো খুব কমজনই পূরণ করতে পেরেছেন। বছর আটেক আগে ওয়ানডে অলরাউন্ডারের র্যাঙ্কিংয়ে শীর্ষে ওঠার পর বলতে গেলে সেটিকে বানিয়ে ফেলেছেন নিজের সম্পত্তি। সেই সাকিব কি এখন ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে?
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চ্যাম্পিয়নস ট্রফির প্রথম ম্যাচটির পর প্রশ্নটা আরও বড় হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের স্কোরটা যে আরও বড় হয়নি, সেটির দায় নিতে হচ্ছে সাকিবকে। অথচ ঝড় তোলার জন্য কী দারুণ একটা মঞ্চই না তাঁকে তৈরি করে দিয়েছিলেন তামিম আর মুশফিক! ৪৫তম ওভারে স্কোর ৩ উইকেটে ২৬১—পাঁচ নম্বরে নামা কোনো ব্যাটসম্যানের জন্য রীতিমতো স্বপ্নের চাওয়া। অথচ সাকিব করতে পারলেন মাত্র ১০ রান। বোলিংয়ে এর চেয়েও বড় হতাশা। ৮ ওভারে ৬২ রান দিয়ে কোনো উইকেট নেই।
এক ম্যাচের পারফরম্যান্সের কারণেই সাকিবের মতো ক্রিকেটারকে নিয়ে ‘হায়-হায়’ রব তোলাটা অবশ্যই বাড়াবাড়ি। তারপরও তা উঠে যাওয়ার কারণ হতে পারে, ইংল্যান্ড ম্যাচ ছাড়িয়ে দৃষ্টিটা আরেকটু পেছনে ছড়িয়ে দিলেও সাকিবের পারফরম্যান্স ঠিক সাকিবসুলভ নয়। বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশিবার ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন। তবে সর্বশেষটি সেই ২০১৬ সালের ২৫ সেপ্টেম্বরে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সেই ম্যাচে ব্যাটিংয়ে ৪৮ রান করার পর বোলিংয়ে ২ উইকেট। ওই সিরিজেরই পরের ম্যাচে ৪৭ রানে ৪ উইকেট নিয়েছিলেন। এরপর যে ১৪টি ম্যাচে বোলিং করেছেন, তাতে মাত্র ১২ উইকেট। ক্যারিয়ার বোলিং গড় যেখানে ২৯.০১, এই ১৪ ম্যাচে তা ৫৬.৭৫। ওয়ানডেতে উইকেটই সব নয়, মিতব্যয়ী বোলিংয়েরও এখানে বড় মূল্য। সেখানেও চিত্রটা খুব সুখকর নয়। ক্যারিয়ারে ওভারপ্রতি রান দিয়েছেন ৪.৪০। এই ১৪ ম্যাচে ৫.৫৮। এর অনেকগুলোতেই সাকিবকে পুরো ১০ ওভার বোলিং করানো হয়নি।
সাম্প্রতিক ব্যাটিং ফর্মও খুব একটা ভালো নয়। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজের তিন ইনিংসে সর্বোচ্চ রান ১৯। দাঁড়ান, দাঁড়ান, শ্রীলঙ্কা সফরে ঠিক আগের দুটি ইনিংসেই সাকিবের হাফ সেঞ্চুরি আছে না! সেটি দেখছি কারও মনেই নেই! ‘পাবলিক মেমোরি ইজ ভেরি শর্ট’ কথাটা তো আর এমনিই বলা হয় না। মানুষ বড় তাড়াতাড়ি সব ভুলে যায়। এই প্রবণতার সঙ্গে আগেও পরিচয় হয়েছে সাকিবের। এবার হচ্ছে আরও বেশি করে। এর আগে যতবারই এমন হয়েছে, প্রশ্ন উঠেছে সাকিবকে নিয়ে, ব্যাটে-বলেই তার জবাব দিয়েছেন। এখন যেমন বোলিং নিয়ে উঠছে, মাঝখানে তেমনি রব উঠেছিল তাঁর ব্যাটিং নিয়ে। সাকিব যেটির জবাব দিলেন নিউজিল্যান্ডে ডাবল সেঞ্চুরি করে। ওয়ানডের দ্বিতীয় সেরা আসরে ওয়ানডের সেরা অলরাউন্ডার কি আবারও তেমন কিছুই করতে যাচ্ছেন?
ব্রেন্ডন ম্যাককালামের এমনই বিশ্বাস। সাবেক নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে কমেন্ট্রি করছেন। স্কাই স্পোর্টসের সঙ্গে চুক্তির বাধ্যবাধকতার কারণে সাক্ষাৎকার দিতে পারবেন না বলে দুঃখ প্রকাশ করলেন। তবে পূর্বপরিচিত বাংলাদেশের সাংবাদিকের কাছ থেকে আইপিএলে একসময়কার কেকেআর সতীর্থের খোঁজখবর নিতে তো আর সমস্যা নেই। সাকিবের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে শুনে মৃদু হেসে বললেন, ‘আমি নিশ্চিত, ও তাড়াতাড়িই স্বরূপে ফিরে আসবে।’
সেটি কি আগামীকাল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ম্যাচেই ?