দালালদের দাপটে অসহায় রোগী
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: প্রসবব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন আকলিমা খাতুন। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও চিকিৎসা পাচ্ছিলেন না। হঠাৎ এক ব্যক্তি এসে জানান, পাশের এক বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে ভালো ব্যবস্থা আছে। চিকিৎসক না হয়েও স্বাভাবিক প্রসবের নিশ্চয়তা দেন। ওই ব্যক্তির কথামতো আকলিমা খাতুনের স্বজনেরা পাশের বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে তাঁকে ভর্তি করান। পরে সেখানে সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে আকলিমার সন্তান হয়। এর জন্য তাঁকে ব্যয় করতে হয়েছিল ১০ হাজার টাকা।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতাল ঘুরে এমন দালাল চক্রের দাপট চোখে পড়ে। সেই সঙ্গে দেখা যায়, রোগীদের অসহায়ত্ব। হাসপাতালে বিভিন্ন অব্যবস্থাপনার কথা তুলে ধরে তারা হাসপাতালে আসা রোগীদের বিভিন্ন ক্লিনিকে নিয়ে যায়। যে চিকিৎসা অল্প কিছু টাকায় করা সম্ভব, সেই চিকিৎসা রোগীদের তিন-চার গুণ ব্যয়ে ক্লিনিক থেকে নিতে বাধ্য করা হয়। এ নিয়ে ভুক্তভোগীরা একাধিকবার অভিযোগ করলেও কোনো লাভ হয়নি।
মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে দালাল চক্রের হাতে জিম্মি রোগী। হাসপাতাল সড়কের পাশে গড়ে ওঠা চিকিৎসকদের চেম্বারকে ঘিরে এখানে দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় হয়ে উঠেছে অন্তত ৩০টির মতো দালাল চক্র। মাঝেমধ্যে জেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে দালাল ধরে জেল-জরিমানা করেছে। তারপরও থেমে নেই চক্রটি। হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে রোগীরা চিকিৎসা নিতে যেতে পারছেন না এসব দালালের বাধা টপকিয়ে। হাসপাতালে গেলেই চোখে পড়ে দালালদের রোগী নিয়ে টানাটানির দৃশ্য। এমনকি বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষার জন্য দালাল চক্রটি একেবারে নিম্নমানের প্যাথলজিতে নিয়ে যাচ্ছে রোগীদের।
দেখা গেছে, হাসপাতালে প্রবেশের মূল ফটকে ৮টি ওষুধের দোকানসহ পান-বিড়ির ৪টি অবৈধ দোকান রয়েছে। এসব দোকানে দালাল চক্রটি বসে রোগীদের জন্য অপেক্ষা করে। রোগীরা ঢোকা মাত্র দালাল চক্রের সদস্যরা সক্রিয় হয়ে ওঠেন।
অনেক সময় চিকিৎসকেরা দালাল চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গেলে তাদের রোষানলে পড়তে হয় বলে জানা যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের এক চিকিৎসক বলেন, প্রভাবশালী মহল দালাল চক্রটি নিয়ন্ত্রণ করে। চাইলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের আশপাশে কয়েকটি বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্র গড়ে উঠেছে। হাসপাতালের চিকিৎসকেরাই সেগুলোতে ৩০০-৫০০ টাকা ফি নিয়ে রোগী দেখেন। সেসব চিকিৎসাকেন্দ্রে বেশ কয়েকজন রোগীকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে দেখা গেছে। তেমন একজন রোগীর স্বজন আহমদ হোসেন বলেন, সরকারি হাসপাতালের চেয়ে ভালো সেবা পাওয়ার কথা বলে এক লোক তাঁদের এখানে নিয়ে এসেছে। ওই লোক জানিয়েছে, হাসপাতালের যন্ত্রপাতি বেশির ভাগই খারাপ। সেগুলোতে পরীক্ষা করলে নির্ভুল ফল পাওয়া যায় না।
বেশ কয়েকজন রোগী অভিযোগ করেন, বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরীক্ষা করা হয়। টাকার জন্য যেসব পরীক্ষার প্রয়োজন নেই, সেগুলোও করানো হয়।
মেহেরপুর সদরের গোভিপুর গ্রামের মিনহাজ আলী নামের এক রোগী জানান, বেশ কিছুদিন আগে বুকে ব্যথা নিয়ে তিনি মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে এক দালালের প্ররোচনায় ভর্তি হন বেসরকারি চিকিৎসাকেন্দ্রে। তিনি অভিযোগ করেন, অযথাই তাঁকে বেশি পরীক্ষা করার প্রয়োজনের কথা জানানো হয়। বিভিন্ন ধরনের সাতটি পরীক্ষা করানোর পর পেটে গ্যাস হয়েছে বলে ব্যবস্থাপত্র দেওয়া হয়। সাতটি পরীক্ষায় তাঁর খরচ হয়েছিল ৪ হাজার ৩০০ টাকা।
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মো. মিজানুর রহমান বলেন, এখানে দালাল চক্রের উৎপাত রয়েছে, এটি ঠিক। বিভিন্ন সময়ে প্রশাসনের সহযোগিতায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল-জরিমানা করা হয়েছে। তারপরও দালালদের উৎপাত বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। তাঁর মতে, হাসপাতালটি ক্লোজড সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার আওতায় আনা হলে কারা রোগীদের প্রতারণা করছে, তা দেখা সম্ভব হতো।