পদত্যাগের চাপে থেরেসা মে
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: নির্বাচনে প্রত্যাশিত ফলাফল অর্জনে ব্যর্থ হওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করতে প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়েছেন থেরেসা মে। বিবিসি জানাচ্ছে, থেরেসা মের পদত্যাগের সম্ভাবনা ‘আধাআধি’।
আসন বাড়াতে গিয়ে উল্টো সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছেন থেরেসা মে। বিপরীতে বিরোধী দল লেবার পার্টিকে করে দিয়েছেন আরও শক্তিশালী।
ক্যামেরন লেবার দলের সঙ্গে এক শ আসনের যে ব্যবধান রেখে গিয়েছিলেন, থেরেসা তা অর্ধেকে নামিয়ে এনেছেন। সরকারে না গেলেও প্রত্যাশার চেয়ে বেশ ভালো করেছে লেবার পার্টি।
যুক্তরাজ্যের পরবর্তী নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল ২০২০ সালে। ৩৩০ আসন নিয়ে সংসদে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল কনজারভেটিভ পার্টির। নির্বাচনের কোনো প্রয়োজন না থাকলেও প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে ইচ্ছামাফিক ব্রেক্সিট বাস্তবায়নে (ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাজ্যের বিচ্ছেদ) নিজের ক্ষমতাকে আরও নিরঙ্কুশ করতে হুট করে মধ্যবর্তী নির্বাচন দেন। মে শতাধিক আসনের সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় ফিরবেন বলে মনে করা হচ্ছিলে। কিন্তু নতুন করে আসন জেতা দূরের কথা, উল্টে তিনি ১১টি আসন হারিয়েছেন। যে কারণে ঝুলে গেছে দলটির একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা। এককভাবে সরকার গঠন করতে প্রয়োজন ৩২৬ আসন।
ঘোষিত ৬৪৩টি আসনের ফলাফলে কনজারভেটিভ পেয়েছে ৩১৩ আসন। লেবার দল পেয়েছে ২৬০ আসন, যা আগের চাইতে ২৯টি বেশি। স্কটিশ জাতীয়তাবাদী দল ৩৫টি, লিবারেল ডেমোক্র্যাটস দল ১২ ও নর্দান আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিইউপি) পেয়েছে ১০টি আসন।
কনজারভেটিভ দল থেকেই দাবি উঠেছে, থেরেসা যেন নেতৃত্ব থেকে সরে যান। দলটির নেতারা গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে এখনো কিছু না বললেও মের পদত্যাগের পক্ষে অভিমত তুলে ধরছেন। দলটির কয়েকজন শীর্ষ নেতা গোপন বৈঠকে বসেছেন বলেও গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়।
কনজারভেটিভ দলীয় সাবেক মন্ত্রী অ্যানা সোবরি অবশ্য প্রকাশ্যেই বলেছেন যে, থেরেসা মে ‘শক্তিশালী ও স্থিতিশীল’ নেতৃত্বের জন্য এই নির্বাচন দিয়েছেন। কিন্তু তিনি তা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই তাঁর সরে যাওয়া উচিত।
লেবার দলের নেতা জেরেমি করবিন তাঁর ইজলিংটন নর্থ আসনে বিজয়ী ভাষণ দিতে গিয়ে বলেন, প্রধানমন্ত্রী থেরেসা তাঁর নেতৃত্ব শক্তিশালী করতে জনরায় চেয়েছেন। কিন্তু আসন হারিয়েছেন। ভোট হারিয়েছেন। সমর্থন হারিয়েছেন। তিনি যে জনরায় পেয়েছেন, তা তাঁর সরে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।
জনগণের প্রত্যাশিত সরকার গঠনে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য থেরেসার বিদায় নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন করবিন।
অর্জিত ফলাফলে সন্তোষ প্রকাশ করে করবিন বলেন, কৃচ্ছ্রসাধনের রাজনীতি ব্যর্থ হয়েছে। রাজনীতি বদলে গেছে। এটা আর পুরোনো অবস্থায় ফিরে যাবে না।
কনজারভেটিভ দল এককভাবে সরকার গঠন করতে না পারায় ব্রেক্সিট সমঝোতার বিষয়টি নিয়ে নতুন করে অনিশ্চয়তা তৈরি হলো। কেননা একমাত্র নর্দান আয়ারল্যান্ডের ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নিস্ট পার্টি (ডিইউপি) সরকার গঠনে কনজারভেটিভ দলকে সমর্থন দিতে রাজি। কিন্তু ওই দল ব্রেক্সিটের গুরুতর বিরোধী। ফলে ব্রেক্সিট বাস্তবায়ন প্রশ্নে দুই দলের একমত হওয়ার সমীকরণ অত্যন্ত জটিল।
মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে এটি যুক্তরাজ্যে তৃতীয় জাতীয় নির্বাচন। ২০১৫ সালে ডেভিড ক্যামেরনের নেতৃত্বে কনজারভেটিভ দল ৩৩০টি আসন পেয়ে এককভাবে ক্ষমতায় ফেরে। এরপর ২০১৬ সালের জুনে ব্রেক্সিট প্রশ্নে অনুষ্ঠিত হয় গণভোট। ওই গণভোটে প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ইইউতে থাকার পক্ষে ছিলেন। জনগণ বিচ্ছেদের পক্ষে রায় দিলে ক্যামেরন পরাজয় মেনে পদত্যাগ করেন। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী হন থেরেসা মে।
গণভোটের রায় বাস্তবায়নে নিজের অবস্থান আরও শক্তিশালী করতে থেরেসা মের ইচ্ছায় এই মধ্যবর্তী নির্বাচন হয়। আর এই নির্বাচনে প্রত্যাশিত জয় না পাওয়ায় থেরেসার বিদায় অনেকটা নিশ্চিত। ব্রেক্সিট ইস্যু যুক্তরাজ্যের আরেকজন প্রধানমন্ত্রীর বিদায় ঘণ্টা বাজাচ্ছে।