জুয়েলারি দোকানের কার্ড থেকে খুনির খোঁজ
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: ঘরে পড়ে আছে এক নারীর লাশ। পাশেই একটি নবজাতক। প্রায় নিথর শরীর। রাজধানীর ফকিরাপুলের এক আবাসিক হোটেলের একটি কক্ষে ঢুকে পুলিশ এই দৃশ্যটিই দেখতে পায় গত ২২ মে। শিশুটি তখনো বেঁচে আছে, হাতের আঙুল নড়ছে। এরপরই তাকে নেওয়া হয় ঢাকা মেডিকেলে।
নিহত নারীর কোনো পরিচয় পাওয়া যাচ্ছিল না। পাওয়া যায় একটি জুয়েলারি দোকানের কার্ড। সেখান থেকেই মেলে খুনির খোঁজ। এরপর সেই সন্দেহভাজন হত্যাকারীকে গতকাল গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহত নারীর নাম রিনা আক্তার (২০), বাড়ি লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে। জীবিত উদ্ধার হওয়া নবজাতকটি তাঁরই মেয়ে। গ্রেপ্তার হওয়া টিপু সুলতান (২৫) এই শিশুটির বাবা। বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়ায়। তিনি চট্টগ্রাম নগরে একটি দোকানে কাজ করেন, আর তাঁর স্ত্রী রিনা চট্টগ্রামে একটি পোশাক কারখানায় কাজ করতেন। গোপনে পোশাককর্মী রিনাকে বিয়ে করেন টিপু। পরিবার সেই বিয়ে মেনে নেয়নি। তাই স্ত্রীকে হত্যা করে নবজাতককে রেখে পালিয়ে যান।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে ২১ মে রাত প্রায় সাড়ে তিনটার দিকে এই দম্পতি হোটেলে আসেন। তাঁদের কোলের নবজাতকটি তখন কাঁদছিল। হোটেলের খাতায় নাম-ধাম লিখে দ্রুত কক্ষে চলে চান। হোটেলের কর্মচারীরা দেখতে পান এ কক্ষের দরজা কেউ খুলছেন না। পরদিন রাতে পুলিশ ডাকা হয়।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের সহকারী কমিশনার আরিফুল ইসলাম বলেন, যে কক্ষে মৃতদেহ পড়ে ছিল, সেখানে তাঁদের পরিচয় শনাক্ত করার মতো তেমন কোনো সূত্র নেই। তবে কক্ষে থাকা একটি ভ্যানিটি ব্যাগে চট্টগ্রাম থেকে নোয়াখালী আসার বাসের টিকিট আছে, কিন্তু যাত্রীর নাম নেই। আর আছে লক্ষ্মীপুরের রামগতির একটি জুয়েলারির কার্ড, একটি কাগজে লেখা ফোন নম্বর। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক শেখ সাইফুল ইসলাম জুয়েলারির কার্ডটি নিয়ে লক্ষ্মীপুরের রামগতির সেই দোকানটি খুঁজে বের করেন। কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। লাশের ছবি দেখালে দোকানি চেনেন না বলে জানান। এরপর পুলিশ লাশের ছবি দোকানিকে দিয়ে বলেন, এটা যেন সব খদ্দেরকে দেখানো হয়। এভাবে দেখাতে গিয়ে গত শুক্রবার এক নারী ছবিটি দেখে চিনে ফেলেন নিহত নারীকে। ওই নারী সেই খবর দেন নিহত নারীর পরিবারকে। পরে নিহত নারীর পরিবার পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে। গতকাল শনিবার চট্টগ্রাম থেকে টিপুকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রিনার মামা কামালউদ্দীন বলেন, রিনার পরিবার খুবই দরিদ্র। তিন বছর আগে চট্টগ্রামের একটি পোশাক কারখানায় কাজ নেন তিনি। সেখানে দোকানের কর্মচারী টিপুর সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। এরপর বছর দেড়েক আগে তাঁকে বিয়ে করেন। মাস তিনেক আগে অন্তঃসত্ত্বা রিনা স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে বাবার বাড়ি রামগতি যান। সেখানে তাঁর সন্তানের জন্ম হয়। এরপর ১৭ মে রিনাকে সেখান থেকে চট্টগ্রামে নিয়ে যান টিপু। এরপর থেকেই রিনার পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ ছিল না। গত শুক্রবার তাঁরা পান রিনা খুন হওয়ার খবর। তিনি জানান, রিনার মেয়েটি এখনো হাসপাতালে আছে।
মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম রব্বানী গতকাল রাতে বলেন, টিপুকে ঢাকায় আনা হচ্ছে।