বাংলাদেশিরা আরও ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: গত সপ্তাহে সেমিফাইনালে ভারতের কাছে হেরে বিদায় নিলেও চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশের দুর্দান্ত খেলা এ কথাই মনে করিয়ে দেয় যে দলটি নজরে পড়ার মতো উন্নতি করছে। তারা তাদের প্রাপ্য প্রশংসা কুড়িয়েছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করা তুলনামূলকভাবে নবীন এই দেশ প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে বিজয়ের জন্য খুব কমই বাহবা পায়। উপনিবেশবাদের জের টানাসহ বাংলাদেশের প্রতিবন্ধকতা অনেক। গত সপ্তাহেই ভূমিধসে অন্তত ১৫০ জন মানুষ নিহত হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র ও সতর্কব্যবস্থা উন্নত করার মাধ্যমে যদিও বাংলাদেশ ঘূর্ণিঝড়ে প্রাণহানি কমিয়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও দারিদ্র্য দূরীকরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ দারুণ অগ্রগতি সাধন করেছে।

তর্ক সাপেক্ষে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শত্রু তার রাজনীতিবিদেরা, যাঁরা আক্রোশ ও নিষ্ফলা বিরোধে আটকে আছেন। এতে বহু লোকের প্রাণ গেছে। দেশকে শক্তিশালী করার সুযোগ নষ্ট হয়েছে। ১৯৯১ সাল থেকে দেশটির ক্ষমতা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে। দল দুটির নেতৃত্বে থাকা শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া পারিবারিক নেতা। ব্যাপক সহিংসতায় ২০১৪ সালের সবশেষ নির্বাচনে ক্ষতচিহ্ন লেগে আছে। আর বিরোধীদের ওপর আরও হামলা হচ্ছে। খুব কম লোকই মনে করেন, খালেদা জিয়া ও তাঁর ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মামলায় রাজনীতির কোনো ভূমিকা নেই। আদালতের আদেশের পর চলতি মাসের শুরুর দিকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী মওদুদ আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী হাসনা জসীমউদ্দিন মওদুদকে বাড়িছাড়া করা হয়েছে। ৭৭ বছর বয়সী মওদুদ কেবল বিএনপি প্রবীণ নেতাই নন, তিনি একজন আইনজীবীও। যিনি বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা ও শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমানের হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে পাকিস্তান আমলের রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় লড়েছেন। বাংলাদেশের নেতৃত্ব কীভাবে দেশটির মূল প্রত্যাশাকে নষ্ট করেছে, তা বোঝার জন্য এই ঘটনাই যথেষ্ট। কারণ, নেতারা বিভক্তিতে আচ্ছন্ন। তাঁরা অভিন্ন স্বার্থকে অবহেলা করেছেন।

দমনপীড়ন শুধু রাজনৈতিক চৌহদ্দির মধ্যেই থেমে নেই; ভিন্ন মতাবলম্বী লেখক, শিক্ষক, অধিকারকর্মীরাও সরকারের লক্ষ্যবস্তু হচ্ছেন। রানা প্লাজা ধসে হাজারো পোশাকশ্রমিক নিহত হওয়ার চার বছর পরও পোশাকের আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডগুলো বাংলাদেশে শ্রমিক ইউনিয়ন বিষয়ে অভিযোগ করছে। শত্রুতা, সন্দেহ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাড়াবাড়ির মধ্যেই সহিংস ইসলামি জঙ্গিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। উদার ব্লগার, শিক্ষাবিদ ও সংখ্যালঘু হত্যার বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে সরকার লজ্জাজনকভাবে ব্যর্থ হয়। গত বছর ঢাকার একটি রেস্তোরাঁয় জঙ্গিদের হাতে ২০ জন জিম্মি নিহত হওয়ার পর শেষমেশ সরকার সমস্যা মোকাবিলায় নড়েচড়ে বসে। নির্বাচনের এখনো ১৮ মাস বাকি। ভোট ও বিরোধীদের প্রতিরোধে আওয়ামী লীগ রক্ষণশীল শক্তিগুলোকে তুষ্ট করার চেষ্টা করছে বলে মনে হচ্ছে।

গণতন্ত্র ও জন-অধিকার বিষয়ে উভয় দলের সক্রিয় হওয়া দরকার। বলপ্রয়োগ ও অসহিষ্ণুতায় উৎসাহ আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যাগ করা উচিত। জনগণের চাহিদার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া উচিত। দেশটির লাখ মানুষ এখনো গরিব। জলবায়ু পরিবর্তন একটি আসন্ন ও গুরুতর হুমকি। রপ্তানি প্রবৃদ্ধি ও রেমিট্যান্স কমছে। তৈরি পোশাক খাতের ওপর মাত্রাতিরিক্ত নির্ভরতা দেশটিকে বাহ্যিক অর্থনৈতিক দুরবস্থার প্রতি প্রান্তিক করে তুলেছে। বাংলাদেশের মানুষ যা কিছু অর্জন করেছে, তা কঠোর পরিশ্রমের মধ্য দিয়েই করেছে। তারা তাদের নেতাদের কাছ থেকে আরও ভালো কিছু পাওয়ার যোগ্য।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ