শেষ সময়ও জমজমাট ঈদের বাজার
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: এত দিন অন্যের ঈদের বাজার করতে সহায়তা করেছেন রাজধানীর চাঁদনী চকের একটি পোশাকের দোকানের বিক্রয়কর্মী মো. মাহবুব। দোকানে একটানা দায়িত্ব পালনের পর আজ রোববার তাঁর মিলেছে ছুটি। আজ নতুন পোশাক কিনতে সপরিবারে বের হয়েছেন নিউমার্কেটে। কোলে তাঁর দুই বছরের শিশু আর সঙ্গে স্ত্রী। মো. মাহবুব বলেন, ‘দোকানে কাজ করি বইলা সারা বছর তো মানুষের কাপড় কিনে দিতে সহায়তা করি, আজ বাইর হইছি পরিবারের লাইগ্যা। সবার জন্য কাপড় কিনছি। খুব ভালো লাগতাছে।’
আজ চাঁদ দেখা গেলে কাল সোমবার পবিত্র ঈদুল ফিতর। আর তার ঠিক আগের দিন আজ রাজধানীর নিউমার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনী চক, হকার্স মার্কেট, এলিফ্যান্ট রোড, বসুন্ধরা সিটি ঘুরে দেখা গেছে বিভিন্ন দোকানে দোকানে এখনো জমজমাট কেনাকাটা চলছে। মানুষের ভিড় ঠেলে দোকানে ঢুকতে হচ্ছে। ঈদের কেনাকাটা করতে আসা মানুষদের কারণে এসব এলাকাতে যানজট চোখে পড়েছে। বিক্রেতারা জানালেন, আজকে চাঁদরাত ধরে ঢাকা ও আশপাশের এলাকার লোকজন ঈদের বাজার করতে এসেছেন। কেনাকাটা চলবে গভীর রাত পর্যন্ত।
আজ বিপণিবিতানগুলোতে আসা ক্রেতাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন খেটেখাওয়া মানুষ। মাসজুড়ে কাজে ব্যস্ত থাকায় এঁদের ফুরসত মেলেনি। আজ একেবারে শেষ মুহূর্তে সময় পেয়ে ছুটেছেন সাধ্য অনুযায়ী শখ মেটাতে। আনন্দের উৎসবকে বর্ণিল করে তুলতে।
নিউমার্কেটে কথা হয় কামরাঙ্গীরচর চর এলাকার বাসিন্দা একটি প্লাস্টিক সামগ্রী তৈরি পণ্যের কারখানায় কর্মরত মো. মাসুদের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘ঈদের ছুটি আজকেই পাইলাম। তাই পরিবার নিয়ে কেনাকাটা করতে এসেছি। পরিবারের সবার জন্যই কিছু না কিছু কিনছি।’
নিউমার্কেটের ডায়মন্ড ফ্যাশনে কথা হয় দোকানের বিক্রয়কর্মী আকরাম হোসেনের সঙ্গে। তাঁর চোখে ঘুম ঘুম ভাব। তিনি জানালেন, গত কয়েক দিন গভীর রাত পর্যন্ত খোলা রাখার কারণে ঠিকমতো ঘুমাতে পারেননি। তবে বিক্রি ভালো হওয়ায় দোকানের মালিক তাঁর ওপর খুশি বলে জানান তিনি।
নিউ সুপার মার্কেটের নূর ফ্যাশন হাউসের বিক্রয় কর্মী রুহুল আমিন বললেন, এখন মূলত ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা ও ঢাকার আশপাশের জেলার বাসিন্দারা কেনাকাটা করছেন। কেনাকাটা চলবে গভীর রাত পর্যন্ত। এরপর ফজরের নামাজের আজান দেওয়ার পরপর তাঁরা দোকান থেকে বাড়িতে যাবেন। তাঁদের আশা, এই রাতে প্রচুর মানুষ তাঁদের দোকানে আসবেন ও কেনাকাটা করবেন।
প্রেসিডেন্ট পার্ক নামের ব্যাগ ও লাগেজের দোকানে কথা হয় দোকানটির ব্যবস্থাপক আব্বাস উদ্দিনের সঙ্গে। তিনি জানান, গত কয়েক দিনে সবচেয়ে বেশি মানুষ দোকানে কেনাকাটা করতে এসেছেন। আজকেও তাঁরা ভালো সাড়া পাচ্ছেন।
ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটে গিয়ে দেখা গেছে সেখানের প্রায় প্রতিটি দোকানে ক্রেতাদের ভিড়। এখানে ঈদের কেনাকাটা করতে এসেছেন খিলগাঁও এলাকার বাসিন্দা সজীব করপোরেশনের কর্মী সাইদুর রহমান। পরিবারের সবার জন্য ঈদের কেনাকাটা করছিলেন তিনি। তাঁর গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীতে। তিনি বলেন, ঈদের পরদিন গ্রামের বাড়িতে যাব, তাই সবার জন্য পোশাক কিনছি।
বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সের সামনেও দেখা গেল গাড়ির দীর্ঘ সারি। বেশির ভাগই ক্রেতা। কেউ কিনে বের হচ্ছেন আর কেউ কিনতে ঢুকছেন। এই শপিং মলের লেভেল ৭-এর অবস্থিত দেশী দশ নামের দোকান। এখানে একই ছাদের নিচে দেশি দশটি ফ্যাশন হাউসের দোকান। প্রতিটি দোকানে পাঞ্জাবি, শাড়ি, শার্ট, ছোটদের পোশাকসহ নানান পোশাক বিক্রি হচ্ছে। মানুষের ভিড়ও চোখে পড়ার মতো।
ফ্যাশন হাউস রঙ বাংলাদেশের মিডিয়া ও কমিউনিকেশন ম্যানেজার তৌসিক আহমেদ বললেন, ‘আজও আমাদের বিক্রি বেশ জমজমাট।’
জুতার দোকানেও বেশ ভিড় দেখা গেল। বসুন্ধরায় বাটার আউটলেট থেকে জুতা কিনছিলেন পল্টনের বাসিন্দা আরাফাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘ঈদের পোশাক কেনা শেষ এখন এখান থেকে পছন্দের জুতা কিনে নিচ্ছি।’ বাটার বসুন্ধরা সিটির ব্যবস্থাপক ইকবাল হোসেন বলেন, ‘এখন পর্যন্ত অনেক ভালো সাড়া পাচ্ছি। মানুষ শেষ সময়ে এসে জুতা-স্যান্ডেল কিনছে। তবে গরমের দিন হওয়ার কারণে এবার স্যান্ডেল কেনার হার বেশি।
মুঠোফোনের দোকানেও বেশ ভিড় চোখে পড়ে। বসুন্ধরার লেভেল ৬-এ অবস্থিত স্যামসাংয়ের আউটলেটে দেখা গেল অনেকে পছন্দের মোবাইল সেট কিনে নিচ্ছেন। কথা হয় এই দোকানের ব্যবস্থাপক মো. ইসমাইলের সঙ্গে। তিনি বলেন, ১০ থেকে ২৪ হাজার টাকার মধ্যে যেসব মুঠোফোন সেগুলোর চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। শেষ সময় হলেও আজ দোকানে মানুষ আসছে প্রচুর আর বিক্রিও ভালো।