চলতি অর্থবছরে বিদেশি সহায়তার রেকর্ড ২৭৯ কোটি ডলার
সিনিয়র রিপোর্টার, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ বিশ্বের বিভিন্ন দাতা দেশ ও সংস্থা চলতি (২০১২-১৩) অর্থবছরে ২৭৮ কোটি ৬১ লাখ ডলার ছাড় করেছে, যা, আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৭ শতাংশ বেশি। এর মধ্যে আগের নেয়া ঋণের সুদ-আসল পরিশোধে ব্যয় হয়েছে ৮৯ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। ফলে নিট বিদেশি সাহায্যের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৮৮ কোটি ৬৬ লাখ ডলার, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৩৪ শতাংশ বেশি। অর্থমন্ত্রনালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, বাংলাদেশের ইতিহাসে এর আগে আর কখনো এক বছরে এই পরিমাণ ঋণ-সহায়তা ছাড় করেনি দাতারা। নিট সাহায্যের দিক দিয়েও এটি রেকর্ড।
দেশের সবচেয়ে বড় অবকাঠামো প্রকল্প পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে নানা টানাপড়েনের মধ্যেও গত অর্থবছরে রেকর্ড পরিমাণ বিদেশি সাহায্য দেশে এসেছে, যাকে সরকার ও দাতাদের ‘সতর্কতার ফল’ হিসাবে দেখছেন বিশ্লেষকরা।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা আকবর আলি খান মনে করেন, পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়ন নিয়ে জটিলতার কারণে দুপক্ষই সতর্ক ছিল। সরকার স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সঙ্গে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। অন্যদিকে বিশ্ব ব্যাংকও সম্পর্কের নতুন করে অবনতি এড়াতে অন্যান্য প্রকল্পে অর্থ ছাড় অব্যাহত রেখেছে।
বিদেশি অর্থ প্রবাহের এ গতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এই প্রতিবেদককে তিনি বলেন, বিশ্ব ব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পে ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার ঋণ দিতে চেয়েছিল। দীর্ঘ সময় ধরে অনেক টানাপড়েনের পর সে ঋণ না নেয়ার কথা সরকার জানিয়ে দিয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘অনেকে ভেবেছিলেন, পদ্মা সেতুর ঋণ ফিরিয়ে দেওয়ার পর বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের অবনতি ঘটবে। আমাদের ফরেন এইড কমে যাবে। কিন্তু তা হয়নি। উল্টো আরও বেড়েছে। বিশ্ব ব্যাংকের পাশাপাশি অন্যরাও বেশি বেশি অর্থ ছাড় করেছে।’
মুহিত বলেন, ‘বাংলাদেশ পদ্মা সেতুতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থ না নিলেও অন্য তিন প্রকল্পে একই পরিমাণ অর্থ দিচ্ছে তারা। এথেকেই প্রমাণিত হয়, বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের কোনো অবনতি হয়নি।’
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১২-১৩ অর্থবছরে আসা ২৭৮ কোটি ৬১ লাখ ৪০ হাজার ডলার ঋণ-সহায়তার মধ্যে ২৭৬ কোটি ৬১ লাখ ৪০ হাজার ডলার ছিল প্রকল্প সাহায্য। আর ২ কোটি ডলার এসেছে খাদ্য সাহায্য হিসাবে।
এর আগের অর্থবছরে (২০১১-১২) মোট ২০৩ কোটি ডলার (প্রকল্প সাহায্য ১৯৬ কোটি ৪০ লাখ এবং খাদ্য সাহায্য ৬ কোটি ৯২ লাখ ডলার) ঋণ-সহায়তার মধ্যে বিভিন্ন সময়ে নেয়া ঋণের সুদ-আসল পরিশোধে খরচ হয়েছে ৭৮ কোটি ৫৫ ডলার। নিট সাহায্যের পরিমাণ ছিল ১২৭ কোটি ৭৮ লাখ ২০ হাজার ডলার। এ হিসাবে গত অর্থবছরে আগের বছরের চেয়ে ৩৭ শতাংশ বেশি ঋণ-সহায়তা ছাড় করেছে দাতারা। এতে নিট সহায়তা বেড়েছে ৩৪ শতাংশ।
একটি অর্থবছরে মোট যে সাহায্য আসে, তা থেকে বিভিন্ন সময়ে নেয়া ঋণ-সহায়তার সুদ-আসল পরিশোধের পর বাকি অর্থকেই নিট সাহয্য হিসাবে ধরা হয়।
বিশ্ব ব্যাংক ঢাকা অফিসের তথ্য অনুযায়ী, গত অর্থবছরের সংস্থাটি বিভিন্ন প্রকল্পে ৬২ কোটি ডলারের মতো ছাড় করেছে। এ অর্থ গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি।
এছাড়া বাংলাদেশে বিশ্ব ব্যাংকের ৪৫০ কোটি ডলারের ৩৬টি প্রকল্প চলমান রয়েছে বলে সংস্থার ঢাকা অফিসের এক কর্মকর্তা জানান।
গত ২০১০-১১ অর্থবছরে সবমিলিয়ে ১৭৭ কোটি ৭২ লাখ ডলারের বিদেশি সাহায্য এসেছিল। এর মধ্যে সুদ-আসল পরিশোধে চলে যায় ৭২ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। নিট সাহায্যের পরিমাণ ছিল ১০৪ কোটি ৯৬ লাখ ডলার।
২০০৯-১০ অর্থবছরে মোট ২১৬ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের ঋণ-সহায়তা এসেছিল। তার মধ্যে ৬৮ কোটি ৭৪ লাখ ডলার ব্যয় হয় দেনা পরিশোধে। নিট ঋণ-সহায়তা ছিল ১৪৭ কোটি ৭০ লাখ ডলার।
গত এক দশকের বিদেশি সাহায্যের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ১৯৯৯-২০০০ অর্থবছরে দেশে নিট বৈদেশিক সাহায্যের পরিমাণ ছিল ১১৭ কোটি ৯০ লাখ ডলার। ২০০০-০১ অর্থবছরে তা ৯৫ কোটি ২৩ লাখ ডলারে নেমে আসে।
২০০১-০২ ও ২০০২-০৩ অর্থবছরে এ সাহায্যের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১০১ কোটি ৯৮ লাখ ও ১১৩ কোটি ৩০ লাখ ডলার। ২০০৩-০৪ অর্থবছরে বৈদেশিক সাহায্য ৬১ কোটি ৩ লাখ ডলারে নেমে আসে। ২০০৪-০৫ অর্থবছরে আসে ১০১ কোটি ৫৮ লাখ ডলার, আর ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ১০৭ কোটি ৮৮ লাখ ডলার।
২০০৬-০৭ অর্থবছরে দেশে নিট বিদেশিক সাহায্য আসে ১০৯ কোটি ৯৫ লাখ ডলার। ২০০৭-০৮ অর্থবছর ও ২০০৮-০৯ অর্থবছরে এসেছিল যথাক্রমে ১৩৭ কোটি ৬৫ লাখ এবং ১০২ কোটি ২৮ লাখ ডলার।