চিকুনগুনিয়া সেরেছে তবে ?
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: চিকুনগুনিয়া রোগটার নাম এত দিনে প্রায় সবার জানা হয়ে গেছে। মশাবাহিত এই রোগে ঢাকাবাসীর ভোগান্তি এবার ছিল চরমে। রোগটির উপসর্গ জ্বর, র্যাশ, অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশির প্রচণ্ড ব্যথা, ফুলে যাওয়া ইত্যাদি। পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যেই এগুলো সেরে যাওয়ার কথা। কিন্তু কেউ কেউ এক থেকে দেড় মাসেও সুস্থ হতে পারেননি।
অনেকে ঘাবড়ে যাচ্ছেন রোগটা চিরকালের মতো পঙ্গু করে দেবে নাকি? আমাদের দেশে চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব কিছুটা নতুন। তবে এর ধরন নিয়ে এখনো অস্পষ্টতা রয়েছে। আফ্রিকা, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ, দক্ষিণ ভারত, থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়ায় এর আগে চিকুনগুনিয়া মহামারি আকারে দেখা দেয়। এসব দেশের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, উপসর্গগুলো দীর্ঘদিন, এমনকি তিন মাস থেকে এক বছর অবধিও রয়ে যেতে পারে।
রিইউনিয়ন দ্বীপের বাসিন্দাদের নিয়ে এক গবেষণা বলছে, ৫০ শতাংশ আক্রান্ত ব্যক্তির কিছু না কিছু উপসর্গ দীর্ঘস্থায়ী হয়েছে। সেটা ১৮ মাস পর্যন্ত স্থায়ী হতে দেখা গেছে। এখন দেখা যাক, কী ধরনের উপসর্গ পরবর্তী সময়েও রয়ে যেতে পারে। সে জন্য কী করা উচিত।
ব্যথা যখন সারছে না
পোস্ট চিকুনগুনিয়া বা আর্থরাইটিস বলা যায় এই সমস্যাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দীর্ঘদিন ধরে হাড়ের জোড়ে ব্যথা থাকে। কারও কারও ফোলাও থাকতে পারে। তিন সপ্তাহ পর্যন্ত এই ব্যথা স্বাভাবিক। ব্যথা কমাতে প্যারাসিটামল বা ট্রামাডল-জাতীয় ওষুধ খাওয়া যেতে পারে। তবে জ্বর থাকলে স্টেরয়েড খাওয়া যাবে না।
কারও কারও ক্ষেত্রে এই ব্যথা ১২ সপ্তাহ ধরে চলতে পারে। এরা ক্রনিক রোগী। এদের বেলায় অন্যান্য লুকায়িত বাতরোগ নির্ণয় করার জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। মনে রাখা উচিত, চিকুনগুনিয়া কিন্তু অপ্রকাশিত বাতরোগকে প্রকাশ করে দিতে পারে। বিশেষ করে রিউমেটিক আথ্রাইটিসকে।
বয়স্কদের বেলায় ব্যথা জটিল ও দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে। ডায়বেটিস রোগীদেরও সমস্যা বেশি হচ্ছে। হালকা ব্যায়াম ও ফিজিওথেরাপি করা যায়। দীর্ঘ সময় একই জায়গায় বসে থাকা ঠিক নয়। ঠান্ডা সেঁক কাজে দেয়। তবে সরাসরি না লাগানোই ভালো।
ত্বকের সমস্যা
চিকুনগুনিয়ার র্যাশ লালচে, হামের মতো। পিঠ, বুক, কাঁধ, মুখ সবখানেই হতে পারে। কারও র্যাশ জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে হয়। কারও আবার পরে হয়। জ্বর সেরে যাওয়ার পর ত্বকের অন্যান্য সমস্যাও থাকতে পারে। ত্বকের রং কালচে হতে পারে (হাইপার পিগমেন্টেশন)। চুলকানি বা অ্যালার্জি-জাতীয় দানা হতে পারে। এমনকি লালচে বড় দানা হতে পারে। ত্বক সংবেদনশীল হয়ে পড়তে পারে। অনেক সময় পরিস্থিতি এমন হয় যেন ধরলেই ব্যথা লাগে। ত্বকের নিচে পানিও জমতে পারে। এসব ক্ষেত্রে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। অ্যান্টিঅ্যালার্জি-জাতীয় ওষুধ খাওয়া যায়। কিন্তু কোনো মলম লাগানোর আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে হবে।
স্নায়ু জটিলতা?
চিকুনগুনিয়ার পর অনেকের জ্বালাপোড়া, ঝিনঝিন বা কামড়ানোর মতো ব্যথা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
বিষণ্নতা
অনেক দেশে চিকুনগুনিয়ার পর রোগীরা বিষণ্নতায় ভোগেন। প্রচণ্ড ব্যথা, কাজে ফিরতে না পারা, দৈনন্দিন কাজগুলোও ঠিকভাবে করতে না পারা এই ঝুঁকি বাড়ায়। তবে মন শান্ত রাখতে হবে। আশা থাকতে হবে যে শিগগিরই এ সমস্যা কেটে যাবে।
রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতায় আঘাত
আরও অনেক ভাইরাস সংক্রমণের মতোই চিকুনগুনিয়াতেও দেহের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে নতুন করে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, ডায়রিয়া হতে পারে। তরল ও পুষ্টিকর খাদ্যগ্রহণ, পরিচ্ছন্নতা বোধ এবং যথেষ্ট বিশ্রাম এই ঝুঁকি থেকে বাঁচাতে পারে।