আয়কর বিবরণী দেওয়ার প্রস্তুতি নিন এখন থেকেই
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: এখনই বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দেওয়া যাবে। ১ জুলাই থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত এই পাঁচ মাস সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। হাতে আরও পাঁচ মাস বাকি আছে। কিন্তু শেষের দিকে রিটার্ন জমার ভিড়ের কথা চিন্তা করে এখনই প্রস্তুতি নেওয়া ভালো। সংগ্রহ করতে হবে নানা ধরনের কাগজপত্র।
মনে রাখতে হবে, এবার আপনি দেবেন ২০১৬-১৭ আয় বর্ষের কর ও আয়কর বিবরণী। ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত আপনি যে আয় ও সম্পদ অর্জন করেছেন; এর ওপরই রিটার্ন তৈরি করবেন।
করমুক্ত আয়সীমা আগের মতোই আড়াই লাখ টাকা রয়েছে। আড়াই লাখ টাকার বেশি করযোগ্য আয় হলেই আপনাকে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা কর দিতে হবে। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন; অন্যান্য সিটি করপোরেশন এবং সিটি করপোরেশন এলাকার বাইরে ন্যূনতম কর যথাক্রমে ৫ হাজার, ৪ হাজার ও ৩ হাজার টাকা বহাল রাখা হয়েছে।
প্রতিবারের মতো এবারও করদাতাদের সুবিধার্থে ‘আয়কর বিষয়ে অগ্রিম প্রস্তুতি নির্দেশিকা’ প্রকাশ করেছে আয়করবিষয়ক বেসরকারি প্রতিষ্ঠান গোল্ডেন বাংলাদেশ। নির্দেশিকা বইটি সম্পাদনা করেছেন প্রতিষ্ঠানটির নির্বাহী পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম। একজন করদাতা আয়কর বিবরণী তৈরি করবেন, এর বিস্তারিত রয়েছে এই প্রকাশনায়।
একজন চাকরিজীবীর মূল বেতনের ওপর কর বসে। এ ছাড়া বোনাসও করের আওতায় আছে। তবে চিকিৎসা, বাড়িভাড়াসহ বিভিন্ন খাতে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পর্যন্ত কর রেয়াত মিলবে। নির্দিষ্ট কিছু খাত যেমন সঞ্চয়পত্র, শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ার, ট্রেজারি বন্ড ইত্যাদিতে বিনিয়োগ করলেও কর রেয়াত পাওয়া যায়।
ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের রিটার্ন জমায় ১৫টি পরামর্শ দিয়েছে গোল্ডেন বাংলাদেশ। রিটার্ন দেওয়ার আগে যেসব কাগজপত্র সংগ্রহ করতে হবে; সেসব নিয়ে পরামর্শ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। কাগজপত্রগুলো হলো গতবারের রিটার্ন জমার কপি; সংশ্লিষ্ট সার্কেলের রসিদ; জমি, ফ্ল্যাট কেনাবেচার দলিলের ফটোকপি; সঞ্চয়পত্র, এফডিআর, ডিপিএস ভাঙানোর নগদায়ন সনদ; গাড়ির ফিটনেস জমার সময় অগ্রিম কর দেওয়ার রসিদ; উৎসে আয়কর দিলে এর রসিদ; সব ধরনের ব্যাংক হিসাবের বিবরণী; শেয়ার কেনাবেচা, লভ্যাংশ পাওয়ার দলিল ইত্যাদি।
গোল্ডেন বাংলাদেশের অন্য পরামর্শগুলো হলো বিনিয়োগে কর রেয়াত পেতে ৩০ জুনের আগেই নির্দিষ্ট খাতে বিনিয়োগ করা এবং হিসাব রাখা; বাড়িভাড়া থেকে মাসে ২৫ হাজার টাকার বেশি আয় হলে এর ব্যাংক হিসাব বিবরণী সংগ্রহ। মনে রাখতে হবে, ৫ লাখ টাকার বেশি ঋণ বা দান ব্যাংকের মাধ্যমে গ্রহণ না করলে আয় হিসেবে গণ্য হবে। ৪ লাখ টাকার বেশি আয় হলে অগ্রিম কর হিসাব করে ৩০ জুনের আগে পরিশোধ করা যায়।
এবার যা যা পরিবর্তন হলো
চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেটে আয়কর খাতে বেশ কিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। ব্যবসা বা পেশার নির্বাহী বা ব্যবস্থাপনা পদে নিয়োজিত বেতনভোগী কর্মীর রিটার্ন দেওয়া বাধ্যতামূলক। গতবার বাজেটে এমন কর্মকর্তাদের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল।
তবে প্রতিবন্ধী করদাতারা কিছুটা স্বস্তি পাবেন। তাঁদের ন্যূনতম করমুক্তসীমা ২৫ হাজার টাকা বাড়িয়ে ৪ লাখ টাকা করা হয়েছে। প্রতিবন্ধী সন্তানের পিতামাতা ও আইনানুগ অভিভাবকদের করমুক্ত আয়সীমা সব শ্রেণির ক্ষেত্রে ২৫ হাজার টাকা বেশি হবে।
মোট সম্পদের পরিমাণ ২৫ লাখ টাকার কম হলে তা আয়কর বিবরণী জমার সময় সম্পদ বিবরণী ঐচ্ছিক করা হয়েছে। এখন এই সীমা ২০ লাখ টাকা। তবে সম্পদের পরিমাণ যা-ই হোক না কেন, মোটরগাড়ি, ফ্ল্যাট কিংবা গৃহসম্পত্তি থাকলে বার্ষিক রিটার্নের সঙ্গে সম্পদ বিবরণী জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক।
৩১ ধরনের কাজের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে ১২ ডিজিটের কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নিতে হবে। এই তালিকায় এবার নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসা; মোবাইল ব্যাংকিং; পরিবেশক এজেন্সি; বিভিন্ন ধরনের পরামর্শক, কাটারিং, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, জনবল সরবরাহ, সিকিউরিটি সার্ভিস। এমনকি আমদানি-রপ্তানির বিল অব এন্ট্রি জমা দিতে হলেও টিআইএন লাগবে।