তৃতীয় কোনো দেশের সেনা কাশ্মীরে ঢুকতে পারে !

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: পাকিস্তান অনুরোধ করলে কাশ্মীরে তৃতীয় কোনো দেশের সেনাবাহিনী ঢুকতে পারে। চীনের একটি পত্রিকায় লেখা নিবন্ধে দেশটির একজন বিশ্লেষক এ মন্তব্য করেছেন। ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, সিকিমের ডকলাম এলাকায় রাস্তা নির্মাণে চীনের সামরিক বাহিনীকে থামাতে যেসব যুক্তিতে ভারতীয় সেনাবাহিনী ভুটানের পক্ষ নিয়েছে, সেই একই যুক্তি পাকিস্তানও দেখাতে পারে।

চীনের ইংরেজি দৈনিক গ্লোবাল টাইমস পত্রিকায় প্রকাশিত ওই নিবন্ধ লিখেছেন চায়না ওয়েস্ট নরমাল ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ইন্ডিয়ান স্টাডিজের পরিচালক লং জিংচুন। নিবন্ধে তিনি বলেন, ভুটানের ভূখণ্ড রক্ষার জন্য যদি ভারতকে অনুরোধ করা হয়, তবে সেটা তাদের নিজস্ব অঞ্চলের জন্য করতে পারে, বিতর্কিত এলাকার জন্য নয়। তা না হলে ভারতের যুক্তি অনুযায়ী, যদি পাকিস্তান সরকার অনুরোধ জানায়, তবে তৃতীয় কোনো দেশের সেনাবাহিনী ভারত ও পাকিস্তানের বিতর্কিত অঞ্চলেও ঢুকতে পারে।

চীনের রাষ্ট্রীয় প্রচারমাধ্যমে ভারতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে প্রায়ই সমালোচনা করে নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়ে থাকে। বলা হচ্ছে, এবারই প্রথম তাতে পাকিস্তান ও কাশ্মীর প্রসঙ্গ উঠে এল। গত ৩০ জুন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জারি করা এক বিবৃতির উল্লেখ করে লং জিংচুন বলেন, ভারত বলছে তারা ভুটানকে সাহায্য করার জন্য ডকলাম এলাকায় গেছে। কিন্তু প্রকৃত ঘটনা হলো ভুটানকে ব্যবহার করে আসলে ভারত নিজের স্বার্থ সিদ্ধি করেছে।

ভুটানের ত্রি-জংশনের কাছাকাছি ডকলাম এলাকায় চীনা সেনাবাহিনী একটি রাস্তা নির্মাণের চেষ্টা চালালে তিন সপ্তাহ ধরে চীনা ও ভারতীয় সেনাবাহিনী মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। ভুটান যেটিকে ডকলাম বলে, ভারতীয় অঞ্চলে সেটিকে ডোকা লা বলা হয়। আর চীন ওই এলাকা তাদের ডংলাং অঞ্চলের অংশ হিসেবে দাবি করে আসছে। জম্মু ও কাশ্মীর থেকে অরুণাচল প্রদেশ পর্যন্ত ৩ হাজার ৪৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ ভারত-চীন সীমান্তের ২২০ কিলোমিটার সিকিমে পড়েছে।

নিবন্ধে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে ভারত আন্তর্জাতিক সমতা ও অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বাইরের কারও হস্তক্ষেপ না করা নিয়ে কথা বলছে। কিন্তু তারা নিজেরাই জাতিসংঘের সনদ গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করছে এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মৌলিক নীতিমালা অমান্য করেছে। এতে অভিযোগ করা হয়, ভারত সিকিমে লোক পাঠিয়ে সিকিম পার্লামেন্টের নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছে এবং সিকিমকে তার অন্তর্ভুক্ত করছে। এতে মনে হয়, ভারত ভয় পায় যে চীন উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ভারতকে দুই ভাগে বিভক্ত করে দিতে পারে। এ ক্ষেত্রে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল স্বাধীন হওয়ার সুযোগ নিতে পারে। আর এ কারণেই ভারতের বিরুদ্ধে ভূরাজনৈতিক অভিপ্রায়ের অভিযোগ তুলে তিব্বতে চীনের অবকাঠামো নির্মাণের বিষয়ে হস্তক্ষেপ করেছে ভারত।

নিবন্ধে বলা হয়, ভারত উত্তর-পূর্বাংশে এই কাজ করতে অক্ষম; তাই দেশটি চীনের রাস্তা নির্মাণ থামাতে চেষ্টা করেছে। ভারত তার নিজস্ব কৌশলগত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক আইন স্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করেছে। তবে চীনের সঙ্গে যৌথ স্বার্থ থাকায় পশ্চিমা দেশগুলো এ কাজে শর্তহীনভাবে ভারতকে সমর্থন করবে না বলে নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। লং জিংচুন বলেন, চীন ও ভুটানের মধ্যে সীমান্ত নিয়ে দ্বন্দ্ব নিজেদেরই সমাধান করা উচিত এবং ভুটানের সার্বভৌমত্বের প্রতি অবশ্যই ভারতের সম্মান দেখাতে হবে। আর চীন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে তাদের অবস্থান তুলে ধরতে পারে। তারা চাইলে প্রমাণ দিতে পারে যে চীন একটি বৃহৎ শক্তি হিসেবে শান্তি বজায় রাখার জন্য আন্তরিক। একেবারে শেষ পন্থা ছাড়া চীন কখনো শক্তি প্রদর্শনের পথে যাবে না।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ