নাঈমের বর্ণনায় রেইনট্রির সেই ঘটনা

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: বনানীতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীর ধর্ষণ মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানি আগামী বৃহস্পতিবার হবে। মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে আছেন অভিযোগপত্রভুক্ত পাঁচজন আসামি। অভিযোগপত্রে বলা হয়, জন্মদিনের পার্টির কথা বলে গত ২৮ মার্চ রাতে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে ডেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দুই তরুণীকে ধর্ষণ করেন আপন জুয়েলার্সের মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে শাফাত আহমেদ ও তাঁর বন্ধু নাঈম আশরাফ। আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন শাফাত ও নাঈম। জবানবন্দিতে তাঁরা ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দিয়েছেন।
সেদিন রাতে বনানীর রেইনট্রি হোটেলে কী হয়েছিল, তা বলেছেন নাঈম আশরাফ। শাফাত আহমেদ আপন জুয়েলার্সের অন্যতম মালিক দিলদার আহমেদের ছেলে, আর তাঁর বন্ধু নাঈম আশরাফ ওরফে এইচ এম হালিম ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ‘ই-মেকার্স’-এর কর্মকর্তা।

আদালতে নাঈম আশরাফ বলেন, তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজক। দেশ-বিদেশের বিভিন্ন শিল্পী এনে তিনি অনুষ্ঠান আয়োজন করতেন। কাজের সূত্র ধরে দেশের বিভিন্ন জনপ্রিয় ও উঠতি শিল্পী এবং মডেলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক হয়। শাফাত ও সাদমান সাকিফ তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ঢাকার বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে তাঁরা নিয়মিত আড্ডা দিতেন। একসঙ্গে মদ খেতেন। মাঝেমধ্যে তাঁরা বিভিন্ন নারীর সঙ্গে সম্পর্ক করতেন। এভাবে তাঁদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি হয়।

আদালতে নাঈম বলেন, ‘গত ২০ মার্চ রাত সাড়ে আটটার দিকে শাফাত আহমেদ আমাকে ফোন করে পিকাসো রেস্টুরেন্টে আসতে বলেন। আমি ঘণ্টা খানেক পর সেখানে পৌঁছাই। শাফাত মামলার বাদীর সঙ্গে আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। ২৭ মার্চ শাফাত আমাকে গুলশানে আসতে বলেন। আমি সেখানে গেলে শাফাত আমাকে মদ কিনে রেইনট্রি হোটেলে আসতে বলেন। শাফাতের কথামতো শেখ শাহরিয়ার নামের এক বড় ভাইকে নিয়ে বনানীতে মদ কিনতে যাই। সেখানে পূর্বপরিচিত মদ বিক্রেতা ফিরোজের কাছে মদ চাইলে তিনি গুলশান-২ যেতে বলেন। গুলশান-২-এ আপন হাউজিং প্রজেক্টের সামনে ফিরোজ তিন বোতল মদ দেন। রাত ১১টার দিকে আমি শাফাত, শাহরিয়ার ও ড্রাইভার বিল্লাল রেইনট্রি হোটেলের নিচে গিয়ে একজন ওয়েটারের কাছে মদের ব্যাগ রাখতে দিই। তারপর আমরা বাসায় চলে যাই।’

আদালতে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দিতে নাঈম বলেন, ২৮ মার্চ শাফাতের জন্মদিন ছিল। সেদিন দুজন উঠতি মডেলকে রেইনট্রি হোটেলে আসতে বলেন। টাকার বিনিময়ে তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক হয়। শাফাত বিকেলে ফোন করে সরাসরি রেইনট্রি হোটেলে যেতে বলেন। বিকেল চারটার দিকে তিনি ওই হোটেলে পৌঁছান। অন্যদের জন্য তিনি অপেক্ষা করছিলেন। হোটেলের সার্ভিসের লোকটাকে তিনি তাঁদের রেখে যাওয়া মদ রুমে দিয়ে যেতে বলেন। ওই লোকটি রুমে মদের বোতল দিয়ে যান। বিকেল পাঁচটার দিকে শাফাত ড্রাইভার বিল্লালসহ রুমে আসেন। ওই সময় বিল্লাল গুলশান থেকে দুজন উঠতি মডেলকে আনতে যান। রাত নয়টা, সাড়ে নয়টার দিকে মামলার বাদী ও তাঁর বান্ধবী হোটেলে আসেন। কিছুক্ষণ পর শাহরিয়ার ও তাঁর বান্ধবী আসেন। এর মধ্যে মামলার বাদী তাঁর পূর্বপরিচিত ছিলেন। এর কিছুক্ষণ পর সাদমান সাকিফ হোটেলে আসেন। আমরা তখন নাচগান শুরু করি।

নাঈম বলেন, রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে হোটেলে আসেন মাহির হারুন। তিনি সেখানে পাঁচ-সাত মিনিট ছিলেন। কেক টাকার পর তিনি চলে যান। তিনি রেইনট্রি হোটেলের মালিক ও শাফাতের বন্ধু। শাফাত আহমেদ, সাদমান সাকিফসহ আরও কয়েকজন সুইমিং পুলে যান। রাত সাড়ে ১২টার দিকে একজন মডেল হোটেল থেকে বাসায় চলে যান। আরেকজন মডেলকে নাঈম রাত ১২টা ৪৫ মিনিটের দিকে গাড়িতে করে পৌঁছে দেন। রাত ১টা ৩৫ মিনিটের দিকে তিনি আবার হোটেলে ফিরে আসেন। হোটেলে ফিরে এসে শাফাতের কক্ষের দরজায় কড়া নাড়েন। শাফাত তখন দরজা খুলে দেন। তখন তিনি (শাফাত) বলেন, মামলার বাদীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক হয়েছে। তখন তিনি বাদীকে পিল খাওয়ানোর পরামর্শ দেন। ড্রাইভার বিল্লালকে শাফাত ফোন করে পিল আনতে বলেন। বিল্লাল পিল নিয়ে আসেন। তিনি, শাফাত ও সাদমান ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে থাকেন। শাফাত বাদীকে পিল খেতে বললে তিনি অস্বীকার করেন। বাদী হোটেলের অন্য একটি কক্ষে থাকা তাঁর বন্ধু শাহরিয়ারের কাছে যান। তখন সাদমান শাহরিয়ারকে ডেকে নিয়ে আসেন। তিনি, শাফাত ও সাকিফ শাহরিয়ারকে মারধর করতে থাকেন। মারের ভয়ে শাহরিয়ার বলেন, ‘ভাই আমাকে পাঁচ মিনিট সময় দেন।’ শাহরিয়ার আবার মামলার বাদী ও তাঁর বন্ধু যে কক্ষে ছিলেন, সেখানে ঢোকেন। আবার শাহরিয়ারকে ডেকে নিয়ে মারধর করা হয়। রাত চারটার দিকে আবার শাহরিয়ারকে তৃতীয় দফায় মারধর করা হয়। শাহরিয়ারকে বলা হয়, ‘তুই বলবি আমি ইয়াবা ব্যবসা করি। ২০ পিস ইয়াবা আছে। জীবনে আর কোনো দিন ইয়াবা ব্যবসা করব না।’ এসব কথা তিনি বলতে থাকলে বিল্লাল তা ভিডিও করে। শাহরিয়ারকে বলা হয়, তিনি যেন এসব কথা মামলার বাদী কিংবা তাঁর বান্ধবীকে না বলেন। শাহরিয়ার তাঁর ও শাফাতের কথামতো কাজ করেন। শাফাত বাদীর সঙ্গে আবার সম্পর্ক করার চেষ্টা করতে থাকেন। এ সময় নাঈম বাদীর বান্ধবীকে নিয়ে আরেকটি কক্ষে ঢোকেন। তিনি তখন বাদীর বান্ধবীর সঙ্গে সম্পর্ক করার প্রস্তাব দেন। তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। এরপর তিনি বাদীর বান্ধবীর সঙ্গে জোরপূর্বক সম্পর্ক করেন।

নাঈম আশরাফ গ্রেপ্তার হন ১৮ মে। আদালতে জবানবন্দি দেন ২৫ মে। পরে তিনি জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেন। ওই আবেদনে তিনি বলেন, তিনি নির্যাতনের শিকার হন। স্বেচ্ছায় তিনি এই জবানবন্দি দেননি।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ