প্রেমের বিয়ের ছয় মাসেই লাশ হলো নিরমা
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: প্রেম করে বিয়ে করেছিলেন জয়দেব ও নিরমা ওরফে লিমা (১৯)। কিন্তু ছয় মাস যেতে না-যেতেই লাশ হলেন নিরমা। গলায় ছিল ওড়নার ফাঁস। আর স্ত্রীর মরদেহের ওপর পড়ে ছিলেন স্বামী জয়দেব। তবে পরে জয়দেব নিজেই স্ত্রীকে হত্যা করেছেন বলে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা লালমনিরহাট সদর থানার এসআই আমিনুল ইসলাম এ তথ্য জানিয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার লালমনিরহাট সদর উপজেলার চিনিপাড়া এলাকার লালমনিরহাট-বুড়িমারী জাতীয় মহাসড়কের পাশ থেকে নিরমার মরদেহ পুলিশ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিরমার বাবা জয়দেবকে আসামি করে মামলা করেন। সেদিনই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ ও মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, ছয় মাস আগে লালমনিরহাট সদর উপজেলার হিরামানিক গ্রামের জয়দেব বর্মণের সঙ্গে জেলা শহরের শুরকি মিল এলাকার নিমাই চন্দ্র রায়ের মেয়ে নিরমার বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে নিরমাকে জয়দেব বিভিন্ন কারণে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করেন। একপর্যায়ে ৭ জুলাই নিরমা সদর উপজেলার তিস্তায় তাঁর মামার বাড়িতে চলে যান। জয়দেব সেখানে গিয়েও নিরমাকে মারধর করেন। নিরমা মামার বাড়ি থেকে তিন দিন পর বাবার বাড়িতে আসেন। সেখানেও দুজনের মধ্যে ঝগড়া হয়। এখানে চার দিন থাকার পর ১৩ জুলাই নিরমা লালমনিরহাট শহরের পুটিমারীতে তাঁর খালার বাড়িতে যান। জয়দেবও সেই বাড়িতে যান। এখানে দুই দিন থাকার পর ১৫ জুলাই জয়দেব তাঁর গ্রামের বাড়িতে চলে যান। ১৭ জুলাই বিকেলে জয়দেব সেখানে গিয়ে রাত আটটার দিকে নিরমাকে নিয়ে সাইকেলে চেপে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। পরের দিন গতকাল চিনিপাড়া এলাকা থেকে পুলিশ নিরমার লাশ উদ্ধার করে। এ সময় নিরমার গলায় ওড়না দিয়ে ফাঁস লাগানো ছিল, আর জয়দেব নিরমার ওপর পড়ে ছিলেন।
পুলিশ নিরমার মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। আর জয়দেবকে হাসপাতালে পাঠায়।
লালমনিরহাট সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক আজমল হক বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৫টা ২০ মিনিটের দিকে পুলিশ জয়দেবকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। এ সময় তিনি কিছুটা অস্থির ছিলেন এবং অজ্ঞান ভাব দেখা যায়। তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে স্যালাইন, ব্যথার ওষুধ ও গ্যাসট্রিকের ওষুধ দিলে তিনি আধা ঘণ্টা পরই স্বাভাবিক হয়ে ওঠেন। তাঁর শরীরে কোথাও আঘাতের চিহ্ন ছিল কি না, জানতে চাইলে চিকিৎসক বলেন, জয়দেবের বাঁ হাতের তালুতে সামান্য আঁচড় ছিল।
হাসপাতালের মর্গের সামনে কথা হয় নিরমার বাবা নিমাই চন্দ্র রায়ের সঙ্গে। তিনি কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, মেয়েটা প্রেম করে বিয়ে করলেও দুই পরিবারই মেনে নেয়। কিন্তু তাঁর মেয়েকে জামাই প্রথমে মারধর, এরপর মেরেই ফেললেন। তিনি এ ঘটনায় বিচার চান।
লালমনিরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম ও পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) উদয় কুমার মণ্ডল বলেন, এ ঘটনায় জয়দেব বর্মণকে আদালতের মাধ্যমে লালমনিরহাট জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।