সিনেট পূর্ণাঙ্গ করেই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা যেত

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট পূর্ণাঙ্গ না করে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তা নিয়ে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক দুই উপাচার্য এবং দুই অধ্যাপক অভিমত ব্যক্ত করেছেন। আজ সোমবার থেকে তাঁদের মন্তব্য জানতে চাইলে তাঁদের কেউ বলেছেন, যেহেতু সুযোগ ছিল, তাই সিনেট যতটুকু সম্ভব পূর্ণাঙ্গ করেই উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন করা যেত। আর এভাবে করতে পারলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মতো অত্যন্ত সম্মানজনক পদটির নির্বাচন বিতর্কিত হতো না। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাও সমুন্নত হতো। শিক্ষকেরা বলেছেন, এভাবে প্যানেল নির্বাচন বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করেছে। এর জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে।

এ কে আজাদ চৌধুরী, সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট, ৫ জন গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধি, ৫ জন অধিভুক্ত কলেজের অধ্যক্ষদের প্রতিনিধিসহ ১০৫ জন সদস্য নিয়ে সিনেট গঠিত। এই সিনেট তিন সদস্যের উপাচার্যের প্যানেল নির্বাচন করে মহামান্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠান। মহামান্য রাষ্ট্রপতি এর মধ্যে থেকে একজনকে নিয়োগ দেন। ২৫ সদস্য হলেই সিনেটের কোরাম হয়। কোরাম পূর্ণ করেই এবার প্যানেল নির্বাচন করা হয়েছে। কোন প্রতিনিধি ছিল বা ছিল না, তা নিয়ে কোনো কথা বলার অবকাশ নেই। এবার উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে প্রতিনিধি ছিল কি না বা তা নিয়মবহির্ভূত কি না, তা নিয়ে আমি কোনো মন্তব্য করতে চাই না। আবার এটি অনৈতিক হয়েছে, তা বলতে পারি না।

এস এম এ ফায়েজ, সাবেক উপাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সিনেট পূর্ণাঙ্গ করার সব সুযোগ ছিল বলে আমি মনে করি। ২৫ রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট নির্বাচনের জন্য তিন মাস সময়ই যথেষ্ট ছিল। তা করা হয়নি। ১০ জন শিক্ষক প্রতিনিধি এবং অধিভুক্ত কলেজের অধ্যক্ষের ৫ জন প্রতিনিধি সাত দিনের নোটিশে নির্বাচন করা যেত। আর যেকোনো দিন সিন্ডিকেট ডেকে পাঁচ গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধি নির্বাচন করা যেত। এর কোনো সুযোগই কাজে লাগানো হয়নি। ডাকসুর প্রতিনিধির বিষয়টি বলতে চাই না। কারণ, এটি নিয়ে অন্য বিতর্ক হতে পারে। আমি যদি থাকতাম, তবে আমি পূর্ণাঙ্গ সিনেট নিশ্চিতের চেষ্টা করতাম। আর এবারও যদি তা হতো, তবে আমি অত্যন্ত খুশি হতাম। এর কারণ হলো, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পদটি অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন, সম্মানের। এর নির্বাচনের ক্ষেত্রে আস্থা, পরিচ্ছন্নতা থাকা দরকার। সমগ্র দেশের মানুষের কাছে এর একটি গুরুত্ব আছে।
সিনেটের কোনো সভা ২৫ সদস্যের উপস্থিতিতে হতে পারে। তবে উপাচার্য নির্বাচনের মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে যত দূর সম্ভব সিনেট পূর্ণাঙ্গ করা দরকার ছিল। তাতে এ পদটির মর্যাদা বাড়ত, মানুষের প্রত্যাশা পূরণ হতো। এবার যেভাবে হলো, তাকে আমি বেআইনি বা অনৈতিক বলব না। তবে এতে আমি খুশি হতে পারিনি।

মুহাম্মদ সামাদ, অধ্যাপক, সমাজকল্যাণ ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
যেভাবে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন হলো তা অগ্রহণযোগ্য, অনৈতিক ও বেআইনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩ সালের অধ্যাদেশ ছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া উপহার। বিশ্ববিদ্যালয়ের চেতনা সমুন্নত রাখতে এর ভূমিকা অপরিসীম। তবে এবার যে প্রক্রিয়ায় প্যানেল নির্বাচন হলো, তা ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করেছে। সর্বশেষ রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটদের মেয়াদ শেষ হয়েছে গত বছরের ২৩ নভেম্বর। আজ আট মাসের বেশি সময় চলে গেল। এ নির্বাচন করতে দুই মাস সময় নেওয়া দরকার ছিল। তা করা হলো না। আমাদের ৪৪ হাজার রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট আছেন। অথচ তাদের কোনো প্রতিনিধি থাকল না। এটা লজ্জাজনক। সামান্য সময় নিয়ে সিনেটে গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধিদের নির্বাচন করা সম্ভব হতো। অথচ তা করা হলো না। এই সবই করা হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে। আমাদের ৩৫ জন শিক্ষক প্রতিনিধির প্রার্থিতা বেআইনিভাবে বাতিল করলেন উপাচার্য। শিক্ষকদের স্বাধীন মতপ্রকাশের স্বাধীনতার চরম পরিপন্থী এটি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার। গণতন্ত্র, মুক্ত ভাবনা, উদারতা এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তবে এবার যেভাবে প্যানেল নির্বাচন হলো, তা আগে দেখা যায়নি।

সাদেকা হালিম, অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
অগণতান্ত্রিক একটি প্রক্রিয়া অবলম্বন করে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন হলো। যুক্তি দেওয়া হয়, সিনেটের ২৫ সদস্য হলেই কোরাম হয়। আমার প্রশ্ন হলো, তাহলে নির্বাচনেরই বা কী দরকার ছিল? বর্তমান উপাচার্য আট বছর আট মাস ধরে উপাচার্য হিসেবে আছেন। এটি অনৈতিক। ১৯৭৩-এর অধ্যাদেশের এটি পরিপন্থী। এই অধ্যাদেশ আমাদের মুক্তিযুদ্ধের ফসল। আর উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে বর্তমান উপাচার্য ছাড়া আর যে দুজনকে বেছে নেওয়া হয়েছে, তাঁদের সম্পর্কে নানা বিষয়ে সীমাবদ্ধতা আছে।
নানা গণতান্ত্রিক আন্দোলনের উৎসস্থল হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে এমন অগণতান্ত্রিক চর্চা চলতে পারে না। জাতির কাছে এর ফলে এ প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান অভিভাবক মহামান্য রাষ্ট্রপতি। তিনি আচার্য। তিনিই উপাচার্য নিয়োগ করবেন। তাঁর কাছে আমার এখন দাবি থাকবে, এবারের ভিসি প্যানেল নির্বাচন নিয়ে মামলা বিচারাধীন রয়েছে। মহামান্য রাষ্ট্রপতি গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে বিবেচনায় নেবেন, এটা আমার প্রত্যাশা।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ