চোখ বেঁধে চলে ১৫ ঘন্টা নির্যাতন
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য পরিচয় দিয়ে তিনজনকে ঘর থেকে গাড়িতে তুলে নেওয়া হয়। এরপর গামছা দিয়ে বেঁধে ফেলা হয় চোখ। গাড়ি প্রায় দুই ঘণ্টা চলার পর থামে। তিনজনকে নেওয়া হয় একটি কক্ষে। সেখানেই চোখ বাঁধা অবস্থায় থেমে থেমে চলে শারীরিক নির্যাতন। এক গ্লাস পানিও দেয়নি। ১৫ ঘণ্টা পর ছেড়ে দেওয়া হয়।
এভাবে ঘটনার বর্ণনার দেন উদ্ধার হওয়া তিনজন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে আনোয়ারা উপজেলার ওয়াহেদ আলী চৌধুরীহাট এলাকায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তাঁরা এ বর্ণনা দেন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিচয়ে গত মঙ্গলবার রাত তিনটার দিকে তিনজনকে নিজ বাড়ি থেকে তুলে নেওয়া হয় বলে স্বজনেরা অভিযোগ করেছেন। ১৫ ঘণ্টা পর গত বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে নগরের পতেঙ্গা এলাকা থেকে তাঁদের উদ্ধার করা হয়। ওই তিন ব্যক্তি হলেন রায়পুর ইউনিয়নের পূর্ব গহিরা এলাকার মো. ইব্রাহীম (৪৫), মো. আলী (৩২) ও মো. আব্বাস (৩৬)। এর মধ্যে আলী ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনজনকেই মুমূর্ষু অবস্থায় পান স্বজনেরা। স্বজনেরা জানান, ইব্রাহীমকে পতেঙ্গা এলাকার কর্ণফুলীর ১৪ নম্বর ঘাট এবং আলী ও আব্বাসকে পাশের ১৫ নম্বর ঘাট থেকে উদ্ধার করা হয়। সেখানে তাঁদের কে বা কারা ফেলে যায়।
গতকাল সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন মো. ইব্রাহীমের ভাই ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিন শরীফ, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিজ চৌধুরী, মো. আলী ও মো. আব্বাস। উপস্থিত ছিলেন ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইসমাইল।
মো. ইব্রাহীম ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আমি ঘরে ঘুমিয়েছিলাম। রাত সাড়ে তিনটায় আইনের লোক পরিচয়ে ঘর থেকে ডাকলে আমি দরজা খুলি। এ সময় ৮ থেকে ১০ জনের মতো লোক আমাকে ধরে গামছা দিয়ে বেঁধে গাড়িতে তোলে। গামছা দিয়ে শক্ত করে বাঁধায় আমি কথা বলতে পারছিলাম না। চোখে কিছু দেখিনি। একই গাড়িতে আমরা তিনজনকে তোলা হয়।’ তিনি আরও বলেন, তাঁদের যে কক্ষটিতে নেওয়া হয় সেটি নিচতলায় হবে। এ ঘটনায় তাঁরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আলী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমি গরিব ঘরের সন্তান। রাজনীতি করার কারণে হয়তো আমাকে এভাবে কষ্ট দেওয়া হয়েছে।’ প্রশাসনের কাছে বিচার দাবি করে আমিন শরীফ বলেন, তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে হেয় করার জন্য কেউ এসব করেছে।
জানতে চাইলে আনোয়ারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুলাল মাহমুদ বলেন, উদ্ধার হওয়া তিনজনের বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা নেই। কারা কেন তাঁদের তুলে নিয়ে নির্যাতন করল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ব্যাপারে থানায় এখনো কোনো মামলা হয়নি।