পানির মূল্যবৃদ্ধি মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা !

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: পানির দাম আবার বাড়িয়েছে ওয়াসা। এই দাম বাড়ানো নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। কেউ কেউ বলছেন, সেবার মান না বাড়িয়ে এভাবে দাম বাড়ানো অযৌক্তিক। কেউ বলছেন, মিটার না দেখেই অনুমাননির্ভর বিল করে ওয়াসা। এ অবস্থায় নতুন করে দাম বাড়ানো যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।

রাজধানীর মিরপুর ১২ নম্বর এলাকার বাসিন্দা মিন্টু আলী। তিনি বলেন, গত জুন মাসে তাঁর পানির বিল এসেছে ৬ হাজার ১০০ টাকা। তাঁর বাড়িতে ১১টি ফ্ল্যাট আছে। বিল অনুযায়ী পানি ব্যবহার হয়েছে ৬ লাখ ১০ হাজার লিটার। হিসাব অনুসারে প্রতি ফ্ল্যাটে মাসে ৫৬ হাজার ৪৫৪ লিটার আর দিনে ১ হাজার ৮০০ থেকে ১ হাজার ৯০০ লিটার পানি ব্যবহার হয়েছে। কিন্তু তিনি বলছেন, এত পানি ব্যবহার হওয়ার কথা নয়। তাঁর পানির ট্যাংকে পানির ধারণক্ষমতা প্রায় ৫ হাজার লিটার। দৈনিক দুবার পানি ব্যবহার করলেও মাসে পানি ব্যবহার হয় ৩ লাখ লিটার। বাকি ৩ লাখ লিটার পানি কোথা থেকে ব্যবহার হলো, তিনি জানেন না।

গত ১৩ মাসের ব্যবধানে তৃতীয় দফায় পানির দাম ২৭ শতাংশ বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা। গত মঙ্গলবার থেকে পানির এই নতুন দাম কার্যকর হয়। ওয়াসার নতুন নির্ধারিত দাম অনুযায়ী, এখন থেকে আবাসিক সংযোগের ক্ষেত্রে প্রতি ১ হাজার লিটার পানির দাম হবে ১০ টাকা ৫০ পয়সা। আগে তা ছিল ১০ টাকা। আর বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে ৩২ টাকার জায়গায় হাজার লিটার পানির দাম হবে ৩৩ টাকা ৬০ পয়সা। গত বছরের জুলাইয়ে ৫ শতাংশ হারে দাম বাড়ানোর পর আবাসিক ক্ষেত্রে পানির দাম হাজার লিটারে হয় ৮ টাকা ৪৯ পয়সা। ওই বছরের নভেম্বরেই প্রায় ১৭ শতাংশ বাড়িয়ে যোগ করা হয় ১ টাকা ৫১ পয়সা। দাম দাঁড়ায় ১০ টাকা। বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে গত বছরের জুলাইয়ে ৫ শতাংশ বাড়ানোর ফলে দাম দাঁড়ায় ২৮ টাকা ২৮ পয়সা। আর নভেম্বরে দাম বাড়ানো হয় ৩২ টাকা।
ওয়াসার বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক উত্তম কুমার রায় বলেন, ‘পানির উৎপাদন খরচ ও পরিচালনা ব্যয় বেড়ে যাওয়াতেই এ দাম বাড়াতে হয়েছে। আমরা সব সময় মূল্যস্ফীতির বিষয়টি বিবেচনায় রাখি। এর নিরিখেই দাম বাড়ানো হয়েছে।’
ঢাকা ওয়াসার নিয়ম অনুযায়ী এর পরিচালনা বোর্ড প্রতিবছর ৫ শতাংশ দাম বাড়াতে পারে। জ্বালানির দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের প্রক্রিয়া থাকলেও পানির ক্ষেত্রে তা নেই।
পানির দাম বাড়ানোর বিষয়ে কথা হয় পুরান ঢাকার বাসিন্দা রওনক আফজার সঙ্গে। তিনি বলেন, এই এলাকার যাঁদের পুরোনো পানির সংযোগ, তাঁদের লাইনে পানি ঠিকমতো আসে না। সম্প্রতি তাঁরা সিটি করপোরেশন ও ওয়াসার অনুমতি নিয়ে ৪০ হাজার টাকা খরচ করে নতুন লাইন নিয়েছেন। কিন্তু এই লাইন দিয়েও ময়লা পানি আসছে। যে সময় ময়লা পানি আসে, সে সময় ওই পানি ব্যবহার করা যায় না। থালা-বাসনও ধোয়া যায় না। তাঁরা বাজার থেকে পানি কিনে খাওয়া ও অন্যান্য কাজ করেন। এ অবস্থায় পানির দাম বাড়ানোর সমালোচনা করেন তিনি। তিনি বলেন, এমনিতে পানি ব্যবহার করতে নানা সমস্যা। তারপরও কীভাবে পানির দাম বাড়ে? সেবা না বাড়িয়ে পানির দাম বাড়ানো ঠিক হয়নি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ইব্রাহিমপুরের বাসিন্দা শান্তা ইসলাম বলেন, তাঁদের এলাকায় পানির সমস্যা। ঠিকমতো পানি আসে না। আবার মাঝেমধ্যে ময়লা পানি আসে। এই সমস্যার কারণে প্রায় প্রতি মাসে ভাড়াটেরা বাসা ছেড়ে দেন। নতুন করে যাঁরা ভাড়া নিতে আসেন, তাঁরাও পানির সমস্যার কথা টের পেয়ে চলে যান। যেহেতু তাঁদের নিজেদের বাসা, তাই তাঁরা চলে যেতে পারেন না। পানি কিনে খেতে হয় তাঁদের। বাসায় আত্মীয়স্বজন এলে তাঁদের লজ্জায় পড়তে হয় কখনো কখনো।
এই অবস্থায় পানির দাম বাড়ানোর খবরে ক্ষুব্ধ শান্তা। তিনি বলেন, যে শহরে পানি ঠিকমতো আসে না, ময়লা পানি আসে, সে শহরে এসব সমস্যার সমাধান না করে কীভাবে পানির দাম বাড়ে, তা মাথায় আসে না। তিনি এটি নতুন করে বিবেচনা করার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান।
গ্রিন রোডের ক্রিসেন্ট রোডের বাসিন্দা সায়কা রিজওয়ানা বলেন, তাঁদের বাসায় গড় বিল আসে। ওয়াসা থেকে কেউ বিল দেখতে আসেন না। তাঁদের সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিল দেখতে আবেদন করতে বলেন। ব্যবহার অনুযায়ী বিল ঠিকমতো আসে কি না, তা-ও তিনি জানেন না। এই অবস্থায় পানির দাম বাড়ানোর কারণে দুর্ভোগ আরও বেশি হবে।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ