রাজধানীতে কোচিংবাণিজ্য

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকাঃ

সম্প্রতি কোচিং সেন্টার নিয়ে গনমাধ্যমকর্মী নূরে আলম জীবনের রির্পোটি হুবাহু তুলে ধরা হল।

রাজধানীর মালিবাগ, বেইলী রোড, শাহজাহানপুর, কাকরাইলসহ বিভিন্ন এলাকায় চলছে শিক্ষকদের রমরমা কোচিংয়ের নামে বাণিজ্য। এ বাণিজ্যের তালিকায় রয়েছে স্ব-শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো শিক্ষক নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোচিং করাতে পারবে না। তবে সরকারি এ নিদের্শনাকে বৃদ্ধাআঙ্গুলি দেখিয়ে দাপটের সঙ্গে রমরমাভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের কোচিংবাণিজ্য।`

অনেক শিক্ষকই কোচিং সেন্টারের কোনো ধরনের সাইনবোর্ড ব্যবহার না করে চালিয়ে যাচ্ছেন এ ধরনের বাণিজ্য। অভিযোগ রয়েছে সিন্ডিকেট করে কোচিংবাণিজ্য করছেন শিক্ষকরা।অনেক শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিষয় অনুযায়ী শিক্ষকের কাছে না পড়লে পরীক্ষার খাতায় নাম্বার কম দেয়, ক্লাসে কোনো বিষয়ে ভালোভাবে বুঝতে চাইলে টালবাহানা করে এবং কোচিংয়ে যাওয়ারও চাপ দেয়। এদিকে, কোচিংয়ের বিষয়ে সরকারের কঠোর মনোভাবকে এড়িয়ে, আদর্শ মানুষ গড়ার শিক্ষাব্যবস্থাকে বাণিজ্যিকভাবে গড়ে তুলেছে কিছু সুবিধাবাদী।

অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষাব্যবস্থায় সরকারের আরও কঠোর অবস্থান দাবি তাদের। অভিভাবকদের অভিযোগ সন্তানকে স্কুলে ভর্তি, তাদের পড়াশুনার যাবতীয় খরচ দিন দিন বহুগুণে বেড়ে যাচ্ছে। যেখানে অভিভাবকদের উপার্জন তেমন বাড়ছে না। তবে সবকিছু যেনতেন থাকলেও কোচিংয়ের বিরুদ্ধে তাদের রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ। কোচিংয়ে অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে সন্তানকে পড়াতে বাধ্য হচ্ছেন অভিভাবকরা। কারণ হিসেবে বলছেন, বাইরের অন্য শিক্ষকদের দিয়ে পড়ালে অল্প খরচে পড়ানো যায়। তবে অনেক শিক্ষার্থী বাইরের শিক্ষকের কাছে পড়তে চায় না। তারা নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকের কাছেই পড়তে আগ্রহী। কারণ তাদের কাছে পড়লে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যাবে।

এদিকে, রাজধানীর কাকরাইলের ১০২নং বাড়িতে গিয়ে তৃতীয় তলায় ঘরোয়া পরিবেশে সন্ধান পাওয়া যায় একটি কোচিং সেন্টারের। জানা যায়, কোচিংটিতে ৮ জন শিক্ষক রয়েছেন। আমরা একটি কক্ষে উঁকি দিয়ে দেখি ৪০ থেকে ৪৫ জনকে এক সঙ্গে পড়াচ্ছেন একজন শিক্ষক। সুনামধন্য এক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই এখানে পড়ছে। উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল এন্ড ও কলেজের নাজিম উদ্দিন (৭ম-৮ম) শিক্ষকের বিরুদ্ধে রয়েছে নানা ধরনের গুঞ্জন। তিনি এ কোচিং সেন্টারে আটজন শিক্ষকের একজন। সূত্র মতে, এ কোচিংয়ে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। তিনটি কক্ষের এ কোচিং সেন্টারে রয়েছে চারজন স্টাফ। কেউ তাদের বেতনের তথ্য দেয়নি। শিক্ষক নাজিম উদ্দিনের বিষয়ে জানতে চাইলে একেকজন ভিন্ন তথ্য দিতে থাকে।

প্রথমে স্টাফ রাজিব বলেন, নাজিম উদ্দিন নামে এখানে কোনো শিক্ষক নেই, কথার একপর্যায় সেই রাজিবই বলে নাজিম উদ্দিন নামে স্যার আছেন তবে এখন সে নেই। ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম তাই নেই বলেছি। এ কোচিং সেন্টারের আরেক স্টাফ রোজি আক্তার বলেন, আমি গত মাসে এখানে জয়েন্ট করেছি, আমার বেতন কত ধরা হয়েছে আমি জানি না। এখানে কোন কোন শিক্ষক পড়াচ্ছেন আমি সঠিক বলতে পারব না। এ কোচিংয়ের এক শিক্ষক নিজের পরিচয় না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, নাজিম উদ্দিন স্যার এখানে আছে, তবে কেন তারা অস্বীকার বা বিষয়টি এড়িয়ে যাচ্ছেন বুঝতে পারছি না। আমরা এখানে ভালো মানের শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করছি। একসঙ্গে এত শিক্ষার্থীকে ভালোভাবে শিক্ষা দেওয়া যায় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, একটি ক্লাস আমি নিতে পারিনি সমস্যার কারণে, তাই দুটি ক্লাসের শিক্ষার্থী এখানে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে আকস্মিক তাদের ছুটি দিয়ে কোচিং সেন্টার খালি করে দেওয়া হয়।

অন্যদিকে, ৮৮/৪ কাকরাইল (৫ম তলায়) রয়েছে আরেকটি কোচিং সেন্টার। সেখানেও এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মশাল মন্ডল (৫ম-৬ষ্ঠ) শিক্ষকের বিরুদ্ধে রয়েছে কোচিংবাণিজ্যের অভিযোগ। শিক্ষক নাজিম উদ্দিন আমার সংবাদকে বলেন, আমরা ইংলিশ মিডিয়াম শিক্ষকরা সরকারকে টেক্স দেই। আমাদের কোন জাতীয় স্কেল নেই, আমাদের কোন নীতিমালা নেই, আমাদের কোন সুযোগ-সুবিধা নেই তাই কোচিং করাতে কোন বাধা নেই। তিনি বলেন, আমি নতুন বিয়ে করেছি, কোন ধরনের ঝামেলায় না গিয়ে কোচিং করানো থেকে সরে আসার চেষ্টা করছি।

শিক্ষক মশাল মন্ডল আমার সংবাদকে বলেন, আমরা শিক্ষক, শিক্ষকতা করেইতো আমাদের চলতে হবে। সরকার যদি কোচিংয়ের বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে নিষেধ করে তাহলে অবশ্যই আমরা তা মানতে বাধ্য। তবে শিক্ষাকে বাণিজ্যকরণে আমি বিশ্বাসী নই।

এ বিষয়ে উইলস লিটল ফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড ও কলেজের সিনিয়র শিক্ষক ও সমন্বয়ক এ.এস.এম. মাসুদ বলেন, কোচিং শিক্ষার কোনো বৈধ্যতা নেই। তবে দুর্বল শিক্ষার্থীদের অনেকেই কোচিংয়ে যায়। মাসুদ বলেন, আমাদের স্কুলের শিক্ষার্থীদের কোচিংয়ের তেমন প্রয়োজন হয় না। কারণ আমরা সুনামের সঙ্গে যত্নসহকারে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করে আসছি। আমাদের কোনো শিক্ষকের বিরুদ্ধে যদি কোচিংয়ের অভিযোগ আসে তাহলে কর্তৃপক্ষ অবশ্যই যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

এ.এস.এম. মাসুদ বলেন, আমরা প্রতিনিয়ত শিক্ষকদের কোচিং থেকে বিরত থেকে শিক্ষার্থীদের যেন যত্নসহকারে শিক্ষা দেওয়া হয়, বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে মনিটরিং করছি। মাঝে মাঝে কারও কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যায়। অভিযোগের ভিত্তিতে আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়ারও চেষ্টা করি।

 

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ