স্পেনে হামলার ঘটনায় কী জানা গেল ?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: পর পর দুই দফা সন্ত্রাসী হামলায় স্পেন এখন সন্ত্রস্ত। গতকাল বৃহস্পতিবার বার্সেলোনার জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা লাস র‍্যামব্লাসে পথচারীদের ও গাড়ি চালিয়ে দিয়ে অন্তত ১৩ জনকে হত্যা করা হয়। ওই হামলার কয়েক ঘণ্টা পরই দেশটির উপকূলীয় শহর ক্যামব্রিলসে একই কায়দায় হামলা হয়েছে। এ সময় পাঁচজন সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীকে গুলি করে হত্যা করেছে পুলিশ।

ক্যামব্রিলস শহরে পথচারীদের ওপর গাড়ি তুলে দেওয়ার ঘটনায় নিহত হয়েছেন একজন, আহত ছয়। ইসলামিক স্টেট (আইএস) বার্সেলোনায় হামলার দায় স্বীকার করেছে। পুলিশ বলেছে, যেসব সন্দেহভাজন সন্ত্রাসীদের হত্যা করা হয়েছে, তারা নকল বিস্ফোরক শরীরে বেঁধে রেখেছিল।

কী হয়েছিল বার্সেলোনায়?
ঘড়ির কাঁটা সন্ধ্যা ছয়টা ছুঁই ছুঁই। একটি ভ্যান প্রচণ্ড গতিতে প্রতিবন্ধকতার ওপরে উঠে যায়। এতে গাড়িটির গতি কিছুটা কমে আসে। কিন্তু থেমে যায়নি। বিখ্যাত পর্যটন স্থান লা র‍্যামব্লাসে প্রায় ১ হাজার ৬০০ ফুট পর্যন্ত চলেছিল গাড়িটি। পেছনে পড়েছিল অনেক মানুষের রক্তাক্ত দেহ। থেমে যাওয়ার পর গাড়িটি থেকে নেমে হেঁটেই পালিয়ে যায় চালক।

ক্যামব্রিলসে কী ঘটেছিল?
বার্সেলোনায় হামলার ঠিক আট ঘণ্টা পর সমুদ্রতীরবর্তী শহর ক্যামব্রিলসে হামলার ঘটনা ঘটে। সেখানেও মানুষের ভিড়ে গাড়ি উঠিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় কাতালান পুলিশের অভিযানে পাঁচজন সন্দেহভাজন হামলাকারী নিহত হয়। একজন পুলিশ কর্মকর্তাও নিহত হন। কর্তৃপক্ষ বলছে, সন্ত্রাসীদের আরও বড় হামলা চালানোর পরিকল্পনা ছিল।
কাতালোনিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জোয়াকিম ফর্ন বলেছেন, দুই হামলার প্রকৃতি এক এবং এর মধ্যে যোগসূত্র আছে।

সন্দেহের তালিকায় কারা?
গত বৃহস্পতিবার দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কিন্তু এঁদের কেউ বার্সেলোনার হামলায় ব্যবহার করা গাড়িটি চালাননি। গ্রেপ্তার এক ব্যক্তির নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। বলা হচ্ছে, এর আগে একটি গ্যাস বিস্ফোরণের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি।
দ্বিতীয় ব্যক্তির নাম দ্রিস ঔকাবির। তিনি একজন ফরাসি নাগরিক। দ্রিস নিজেই রিপল শহরে (বার্সেলোনা থেকে ৬৫ মাইল উত্তরে) পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। বার্সেলোনায় যে গাড়ি দিয়ে হামলা করা হয়েছিল, তাতে তাঁর পরিচয়পত্র পাওয়া গেছে। দ্রিসের দাবি, তাঁর ভাই এগুলো চুরি করেছিল।
কর্তৃপক্ষ এখন গাড়ির চালককে খুঁজছে। এ ক্ষেত্রে সন্দেহ করা হচ্ছে মুসা ঔকাবিরকে। তাঁর বয়স হবে আনুমানিক ১৭ বা ১৮ বছর। ধারণা করা হচ্ছে, সে-ই দ্রিসের ছোট ভাই।
আজ শুক্রবার আরও দুই ব্যক্তিকে গ্রেপ্তারের খবর জানিয়েছে পুলিশ। তবে তাঁদের বিষয়ে কোনো পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেওয়া হয়নি।

হামলার শিকার কারা?
স্পেনের কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, নিহত ও আহত ব্যক্তিরা কমপক্ষে ৩৪টি দেশের নাগরিক। এর মধ্যে ২৬ জন ফরাসি নাগরিক আহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। এঁদের মধ্যে ১১ জনের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বেলজিয়ামের একজন নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। অন্যদিকে অস্ট্রেলিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, একজন অস্ট্রেলীয় নাগরিককে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। আর চীন বলছে, হংকংয়ের একজন বাসিন্দা আহত হয়েছেন।

যা এখনো অজানা
বার্সেলোনায় যে গাড়ি দিয়ে হামলা চালানো হয়েছিল, তার চালকের পরিচয় সম্পর্কে এখনো অন্ধকারে আছে কর্তৃপক্ষ। এ হামলার পরিকল্পনার পরিধি কতটা বড় ছিল, সেটিও জানা যায়নি।
এখনো হামলায় হতাহত ব্যক্তিদের পূর্ণাঙ্গ নাম-পরিচয় এ জাতীয়তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
তবে সবচেয়ে বড় প্রশ্নবোধক চিহ্ন আছে ইসলামিক স্টেটকে (আইএস) নিয়ে। বার্সেলোনায় হামলার ঘটনায় আইএস জড়িত থাকার কথা দাবি করা হলেও এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি হামলার নির্দেশ দিয়েছে, নাকি তাদের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে হামলা হয়েছে, তা নিয়ে সন্দেহ দূর হয়নি।

দ্য নিউইয়র্ক টাইমস অবলম্বনে

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ