ট্রেনের টিকিটের লাইন দীর্ঘ হচ্ছে
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: পার্থক্য ২৪ ঘণ্টার। এরই মধ্যে পাল্টে গেল কমলাপুর রেলস্টেশনের দৃশ্যপট। গতকাল শুক্রবার কাউন্টারগুলোর সামনের জায়গাতে ছিল টিকিট-প্রত্যাশীদের লম্বা লাইন। কিন্তু আজ শনিবার সেই লাইনগুলো এঁকেবেঁকে টার্মিনাল ভবন ছাড়িয়ে স্টেশনের প্রবেশপথ পর্যন্ত চলে যায়। ২৮ আগস্টের অগ্রিম টিকিটের জন্য দীর্ঘ লাইন যেমন ছিল, তেমনি ছিল দীর্ঘ প্রত্যাশা। টিকিট হাতে পেয়ে তৃপ্তির হাসি থাকলেও, অনেকের মুখে ছিল অভিযোগের সুর।
লালমণি এক্সপ্রেসের টিকিট নেওয়ার পর তানজিমুর রহমান নামের যুবক বলেন, তিনি লাইনের সামনের দিকেই ছিলেন, তিনটি টিকিট চেয়েছিলেন। কিন্তু দুটি টিকিট দেওয়া হয়।
তানজিমুরের মতো আরও অনেক টিকিট-প্রত্যাশী একই অভিযোগ করেন। কেউ কেউ আবার বলেন, শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কামরার টিকিট (এসি) ও প্রথম শ্রেণির টিকিট দেওয়া হচ্ছে না। এসব অভিযোগ সম্পর্কে যোগাযোগ করা হয় রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের সঙ্গে। তিনি মুঠোফোনে বলেন, ‘যাত্রীদের টিকিট কম দেওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’ মন্ত্রী বলেন, লালমণি এক্সপ্রেসের প্রথম শ্রেণির টিকিট আজ আগে শেষ হয়ে গেছে। এখন শোভনের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে। যাঁরা লাইনে দাঁড়াবেন, তাঁরা টিকিট পাবেন।
এসি কামরার টিকিট না পাওয়ার ব্যাপারে কমলাপুর রেলস্টেশনের ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্ত্তী সাংবাদিকদের বলেন, সব কাউন্টারে এসির টিকিট বুকিং দেওয়ার সুযোগ নেই। যে কটা আছে, লাইনের প্রথমে যিনি দাঁড়ান, তিনিই পেয়ে যান।
টিকিটপ্রত্যাশীদের ভিড় আজ ভোরবেলা থেকেই বাড়তে থাকে। অনেকে আবার আগের দিন রাত ১০টা থেকে লাইনে অবস্থান নেন। উত্তরাঞ্চলে বন্যা ও সড়কব্যবস্থা খারাপ থাকার কারণে ঘরমুখী মানুষ ট্রেনের দিকে ঝুঁকেছে। এই চাপ রেল কর্তৃপক্ষের প্রত্যাশারও বাইরে বলে জানান সিতাংশু চক্রবর্ত্তী।
তবে প্রত্যাশা আর উচ্ছ্বাসের মাত্রা বোঝা যায় সকাল আটটায় কাউন্টারগুলোর জানালা খোলার সঙ্গে সঙ্গে। এ সময় চিৎকার করে ওঠেন সারিতে দাঁড়ানো লোকজন। কমলাপুর রেলস্টেশনের ২৩টি কাউন্টার থেকে অগ্রিম টিকিট দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে নারী ও প্রতিবন্ধীদের জন্য রয়েছে দুটি কাউন্টার। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন প্রায় ২২ হাজার ৪৯৬টি অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। টিকিট নেওয়ার পর যাত্রার সময় পরিবর্তন করা যাবে না। একসঙ্গে সর্বোচ্চ চারটি টিকিট দেওয়া হচ্ছে।
আজ টিকিট নিতে আসা রংপুরের বাসিন্দা শাহ আলম বলেন, ভোররাত সাড়ে চারটা থেকে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়েছেন তিনি। কাউন্টার খোলার সঙ্গে সঙ্গে টিকিট পেয়েছেন। তিনি রংপুর এক্সপ্রেসের টিকিট কিনেছেন। গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত তাঁর বাসে যাওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু গতকাল বাস কাউন্টারে গিয়ে টিকিট পাননি। পরে তিনি জেনেছেন, ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গের সড়কের অবস্থা খারাপ। তাই ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে সিদ্ধান্ত বদল করে তিনি ট্রেনের টিকিট কেটেছেন।
সিরাজগঞ্জের হেলাল উদ্দিন বলেন, রাজশাহীর সিল্ক সিটি ট্রেনের টিকিট কাটার জন্য তিনি এসেছেন। সিরাজগঞ্জের দূরত্ব বেশি না হলেও সড়কপথে দুর্ভোগ ও যানজটের আশঙ্কায় তিনি ট্রেনের টিকিটের জন্য এসেছেন।
রেলস্টেশনে টিকিট কালোবাজারি হচ্ছে না বলে দাবি করে ঢাকা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াসিন ফারুক বলেন, সাদাপোশাকে পুলিশ টহল দিচ্ছে। গতকাল ও আজ কাউকেই আটক করা হয়নি।