বাংলাদেশে গরু ঢোকা কমেছে, কোটি কোটি রুপি হারাচ্ছে ভারত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) কড়া নজরদারি রয়েছে। এ কারণে ভারত থেকে বাংলাদেশে গবাদিপশু, বিশেষ করে গরু ঢোকা কমে গেছে শতকরা ৭৫ ভাগ। ঈদুল আজহা সামনে রেখে ভারতের গবাদিপশুর বাজার ও ব্যবসা নিয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদনে এসব কথা উল্লেখ করেছে দ্য হিন্দু বিজনেস লাইন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ২ সেপ্টেম্বর পবিত্র ঈদুল আজহা উদ্যাপিত হবে বাংলাদেশে। সাধারণত এই ঈদের সময় পশ্চিমবঙ্গের অ্যাংরাইল সীমান্ত দিয়ে অবৈধ পথে গবাদিপশু চালানে ব্যস্ত থাকেন গোপাল বোস (৩০)। কিন্তু এ বছরের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। অব্যাহত প্রচারণা ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর কঠোর নজরদারির কারণে এ বছর বাংলাদেশে ভারতীয় গবাদিপশু পাঠানো কমে দাঁড়িয়েছে চার-পাঁচ লাখে। আগে পাঠানো হতো ২০-২২ লাখ গবাদিপশু। ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাংলাদেশে গরু পাঠিয়ে ভারত বছরে আয় করে প্রায় নয় হাজার কোটি রুপি। টাকার অঙ্কে এ বছর সেই বাণিজ্য কমে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৬০০ কোটি রুপিতে।
এ প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বিএসএফ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) কঠোর নজরদারির ফলে এটা সম্ভব হয়েছে।
পশু-বাণিজ্যের মৃত্যু
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর পবিত্র ঈদুল আজহায় গবাদিপশুর চাহিদা প্রায় ৮৮ লাখের মতো (তবে বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মতে পবিত্র ঈদে বাংলাদেশে ৫০-৫৫ লাখ পশু লাগে)। কয়েক বছর ধরে এই চাহিদার এক-চতুর্থাংশের জোগান যায় ভারত থেকে। বেশির ভাগ গবাদিপশু (গরু) বাংলাদেশে পাঠানো হয় হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ ও রাজস্থান থেকে। সীমান্তের ফাঁকফোকর দিয়ে এসব গরু পাঠানো হয়। কয়েক বছর আগেও বাংলাদেশে এই ঈদের সময়ে গড়ে প্রতিদিন পাঁচ হাজার গবাদিপশু পাঠানো হতো। এভাবে গরু বা গবাদিপশু বাংলাদেশে পাঠানোর একটি মোক্ষম পথ হলো পশ্চিমবঙ্গের উত্তর ২৪ পরগনা জেলার অ্যাংরাইল। এটি কলকাতা থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরের একটি এলাকা। বাধা না থাকলে ইছামতী নদী দিয়ে গোপাল বোস গবাদিপশু বাংলাদেশে পাঠানোর চেষ্টা করতেন এবারও। ইছামতী নদীটি অ্যাংরাইল সীমান্তে বাংলাদেশ ও ভারতকে ভাগ করেছে। কিন্তু অ্যাংরাইল সীমান্তসহ অন্য রুটগুলোর চিত্র একটু ভিন্ন রকম, অর্থাৎ সীমান্তে রুটগুলো চেহারা এবার পাল্টে গেছে। এখন বাংলাদেশে গরু পাঠানো কমতে কমতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৫০০-তে। বিএসএফ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিশেষ তৎপরতার কারণে এ বছর গোপাল বোস গরুর ব্যবসা থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন।
বিএসএফের দক্ষিণবঙ্গের আইজি পিএসআর অঞ্জনয়েলু বলেন, মহাসড়কগুলোতে নজরদারি বাড়ানোর ফলে কাজ হয়েছে। নজরদারি বাড়িয়েছে বিএসএফ। স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে তারা (বিএসএফ) আস্থার সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন। ফলে গরু পাচারসংক্রান্ত সব খবর তাদের কাছে চলে আসছে নিয়মিত।
গবাদিপশুর ব্যবসা ও বিভিন্ন অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সীমান্তের জেলাগুলোতে বড় উদ্বেগের বিষয়। বিএসএফের গুলিতে সীমান্তে ‘পাচারকারী’ হত্যার ফলে দুই দেশেরই মানবাধিকার সংগঠনগুলো এর তীব্র সমালোচনা করে আসছে।
সমর্থন বাংলাদেশেরও
বাংলাদেশে গবাদিপশু ঢোকা বন্ধে সীমান্ত ব্যবস্থাপনা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে বাংলাদেশ সরকারও। গত তিন বছর ধরে স্থানীয় পর্যায়ে গবাদিপশুর খামারিদের উৎসাহিত করার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ। ভারত থেকে গবাদিপশু ঢোকা বন্ধ করে বাংলাদেশ এ সুযোগকে কাজে লাগাতে চাইছে।