পাউবোর জলবায়ু প্রকল্পে অনিয়ম হয়েছে: টিআইবি
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) জলবায়ু প্রকল্পগুলোতে রাজনৈতিক প্রভাব এবং বিভিন্ন অংশীজনের যোগসাজশে অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণা প্রতিবেদনে এ বিষয়টি উঠে এসেছে।
রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে আজ বুধবার সকালে ‘জলবায়ু অর্থায়ন ও প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসন: প্রেক্ষিত বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড’ শীর্ষক ওই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট তহবিলের (বিসিসিটিএফ) অর্থায়নে পাউবো বাস্তবায়িত ছয়টি জলবায়ু প্রকল্পের ওপর এ গবেষণা পরিচালিত হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্প প্রণয়ন-অনুমোদনের ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার তুলনায় কম ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বেশি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদার নিয়োগ হয়েছে রাজনৈতিক বিবেচনায়। সরকারের মূল্যায়ন ও নিরীক্ষা কর্তৃপক্ষও প্রকল্পগুলো মূল্যায়নের দায়িত্ব পালন করেনি।
২০০৯-১০ অর্থবছর থেকে জুলাই ২০১৭ পর্যন্ত বিসিসিটিএফের অর্থায়নে পাউবো ১৪১টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। পাউবোর জলবায়ু প্রকল্পগুলোতে অনুমোদিত অর্থের পরিমাণ ১১৩২ কোটি টাকা, যা বিসিসিটিএফের বরাদ্দ করা মোট অর্থের ৪০ শতাংশ। ২০০৮ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত পানিসম্পদ খাতে টিআইবির পরিচালিত গবেষণায় পাউবোর কার্যক্রমে সুশাসনের ঘাটতি পাওয়া গেছে।
২০১৫ সালের মার্চ থেকে ২০১৭ সালের জুলাই সময়কালে পরিচালিত এই গবেষণার ফলাফলে বলা হয়, গবেষণাধীন ছয়টি প্রকল্পের চারটিতেই অনুমোদনের ক্ষেত্রে সচিব, স্থানীয় সংসদ সদস্য, সাবেক মন্ত্রীর আত্মীয় বা ক্ষমতাসীন দলের নেতা প্রভাব খাটিয়েছেন। এতে জলবায়ু বিপন্নতা ও বরাদ্দের মধ্যে অসামঞ্জস্য দেখা দিয়েছে। পাউবোর বাস্তবায়িত জলবায়ু প্রকল্পে ঢাকা ও চট্টগ্রামের জন্য যথাক্রমে ১৯ ও ২৪ শতাংশ অর্থ বরাদ্দ করা হয়, যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা খুলনার বরাদ্দ ১০ শতাংশ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রতিটি প্রকল্পেই দেখা গেছে ঠিকাদার ও উপঠিকাদারেরা রাজনৈতিক সূত্রে ক্ষমতাবান। আইন অমান্য করে সাব-কন্ট্রাক্টভিত্তিক কাজ হয়েছে। নিম্নমানের কাজের জন্য স্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে ঠিকাদারদের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।
জবাবদিহি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের গাফিলতির কথাও উঠে এসেছে এই প্রতিবেদনে। পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পাউবো, বিসিসিটিএফ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, স্থানীয় প্রশাসন—কেউই প্রকল্পের তদারকি বা মূল্যায়নের কাজটি করেনি। এই প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে কম্পট্রোলার ও অডিটর জেনারেলের কার্যালয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগও তাদের দায়িত্ব পালন করেনি।
এ ছাড়া স্বচ্ছতার জন্য ছয়টি প্রকল্পের কোনোটির কার্যক্রমই জনগণের সামনে প্রকাশ করা হয়নি। কোনো প্রকল্পের তদারকিতে স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ ছিল না বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
অনুষ্ঠানে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এই ব্যর্থতা বেশ উদ্বেগজনক। যখন মৌলিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক বিবেচনা চলে আসে, তখন পুরো প্রক্রিয়াতেই এর প্রভাব পড়ে। এই প্রকল্পগুলোর ক্ষেত্রে কম্পট্রোলার ও অডিটর জেনারেলের কার্যালয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগও তাদের দায়িত্ব পালন করেনি। তিনি বলেন, ‘আমাদের গবেষণায় পাউবোর যে অনিয়মের কথা উঠে এসেছে, তাদের অন্যান্য প্রকল্পের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হবে, এটা ধারণা করা যায়।’
টিআইবির এই গবেষণা দলে ছিলেন গোলাম মহিউদ্দিন, মহুয়া রউফ ও রাজু আহমেদ।