২০ লাখ যাত্রীর ভরসা পৌনে দুইশ নৌযান
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: চার বছরের শিশু তাসফিয়াকে কোলে নিয়ে সুন্দরবন-৬ নামে লঞ্চের ডেকের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে হাঁটছিলেন আবিদা সুলতানা। তাঁর সাত বছর বয়সী ছেলে তানহাকে সামলাচ্ছিলেন কলেজপড়ুয়া ছোট ভাই মেহেদি হাসান। এই চারজনই আজ শনিবার রওনা দিচ্ছেন পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে গ্রামের বাড়িতে। লঞ্চ ছাড়ার কথা সন্ধ্যা ছয়টায়। কিন্তু ঢাকার যানজট এড়াতে বেলা ১১টায় সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে ভাই-সন্তানদের নিয়ে চলে এসেছেন আবিদা সুলতানা।
আগেভাগে ঢাকা ছাড়ার কারণ সম্পর্কে আবিদা বলেন, দুই দিন পর গেলে ভিড় বাড়বে। কষ্ট হবে বেশি। তাই ভাই ও ছেলেমেয়েকে নিয়ে ঈদ করতে আগেই বাড়ি ফিরছি। আমার স্বামী ঈদের আগের দিন রওনা দেবেন।
আবিদা সুলতানা ভোগান্তি এড়াতে ঈদের সাত দিন আগে ঢাকা ছাড়লেও নৌপথে ঘরমুখী মানুষের ঢল সদরঘাটে নামবে আর কয়েক দিন পর। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগ এবং নৌযান মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, কোরবানির ঈদ উপলক্ষে পৌনে দুই শ নৌযান যাত্রী পরিবহন করবে। ঈদের আগে ২৭ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ছয় দিনে এসব নৌযান ২০ লাখ যাত্রী বহন করবে। এর মধ্যে ৩০ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতিদিন গড়ে পাঁচ লাখ যাত্রী ঢাকা ছাড়বে।
মালিকদের দাবি, ঈদ সামনে রেখে তাঁদের প্রতিটি নৌযানই যাত্রী পরিবহনের উপযোগী করা হয়েছে। বর্ষাকালে বৃষ্টি, ঝড়-ঝঞ্ঝার মতো প্রতিকূল অবস্থাও সামাল দেওয়া যাবে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট লুৎফর রহমান বলেন, ‘ঈদের সময় চাপ বেশি থাকে। নৌযানে বাড়তি যাত্রী কিছুটা উঠবেন। তবে এটি সহনশীল পর্যায়ে রাখা হবে। তা ছাড়া আমরা যখন দেখব যে কুলিয়ে উঠতে পারছি না, তখনই লঞ্চ ছেড়ে দেব। আমাদের লঞ্চে যাত্রীদের জন্য পর্যাপ্ত বয়া, লাইফ জ্যাকেট রয়েছে। কোনো অসুবিধা হবে না।’
বর্তমানে বেসরকারি নৌযান মালিকদের কাছে ১৬০টি নৌযান রয়েছে। এর সঙ্গে সম্প্রতি বড় আকারের আরও ১৩টি নতুন নৌযান এসেছে। এসব নৌযানে যাত্রী চাপ সামাল দেওয়া যাবে বলে দাবি করেন লুৎফর রহমান।
মালিকেরা যাত্রী পরিবহনে অসুবিধা হওয়ার দাবি করলেও এখনো ২০ শতাংশ নৌযানের ফিটনেস পরীক্ষা শেষ হয়নি বলে জানান নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম পরিচালক জয়নাল আবেদীন। তিনি বলেন, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে নৌযান চলাচল করে। ঈদের আগে যাত্রী বহন নির্বিঘ্ন করতে নৌযানগুলোর ফিটনেস পরীক্ষা করা হচ্ছে। কিছু নৌযানে কিছু ত্রুটি ধরা পড়েছে। ঈদের আগে সারিয়ে ফেলতে বলা হয়েছে। আনফিট নৌযান চলাচল করতে দেওয়া হবে না। ঈদের আগে বাকি ২০ শতাংশ নৌযানের ফিটনেস সম্পন্ন হয়ে যাবে। এ ছাড়া নৌযানচালকদের সনদ পরীক্ষা করা হচ্ছে।
নৌপথে টহলসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে উল্লেখ করে জয়নাল আবেদীন বলেন, ২৭ আগস্ট থেকে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে একটি উদ্ধারকারী জাহাজ প্রস্তুত রাখা হয়েছে। দুটি স্পিড বোট টহল দেবে। সদরঘাটে ফায়ার সার্ভিস ও বিআইডব্লিউটিএর দুটি উদ্ধারকারী দল সব সময় ঘাটে থাকবে। এখানে ঢাকা মহানগর পুলিশ, নৌপুলিশ, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, র্যাব, আনসার ও স্বেচ্ছাসেবক মিলিয়ে প্রায় পাঁচ শ সদস্য নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবেন।
সদরঘাট নৌবন্দর ভবনের দ্বিতীয় তলায় চার শ যাত্রীর জন্য বিশ্রামাগার রাখা হয়েছে। পুরো বন্দর ২৮টি সিসি ক্যামেরা দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হবে। বিআইডব্লিউটিএ, জেলা প্রশাসন ও নৌপরিবহন অধিদপ্তরের চারজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালত দায়িত্ব পালন করবেন।
এদিকে ৩০ আগস্ট থেকে বিআইডব্লিউটিসিও নিয়মিত রকেট সার্ভিস (স্টিমার) ছাড়াও বিশেষ সার্ভিসের ব্যবস্থায় যাত্রী বহন শুরু করবে।