গরু ফিরিয়ে নিয়ে যাব কিন্তু বিক্রি করব না
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: বছরখানেক আগে ৮০ হাজার টাকায় দুটি গরু কেনেন এম এ সৈকত। প্রতিদিন দুটি গরুর খাওয়ানো বাবদ খরচ হয়েছে দেড় শ থেকে ২০০ টাকা। চার দিন আগে সেই গরু দুটি নিয়ে ঝিনাইদহ থেকে ঢাকার ধূপখোলা হাটে এসেছেন সৈকত। তাঁর স্বপ্ন, এক লাখ টাকা করে দুটি গরু তিনি বেচবেন দুই লাখ টাকায়। এখন পর্যন্ত ১০ জন ক্রেতা তাঁর গরুর দামদর করেছেন। কিন্তু প্রতিটি ৫০ হাজারের বেশি কেউ বলছেন না।
এমন দাম শুনে হতবাক সৈকত। হাসতে হাসতেই বলেন, ‘ক্রেতা এখন ডিমের দামে মুরগি কিনতে চাচ্ছেন। আমি কিন্তু ডিমের দামে মুরগি বেচব না। গরু ফিরিয়ে নিয়ে যাব কিন্তু বিক্রি করব না।’
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গরু নিয়ে ট্রাকে ওঠেন সৈকত। আর ঢাকায় নামেন পরদিন বুধবার সন্ধ্যায়। ২৪ ঘণ্টা ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছে তাঁকে। ঘুমাতে পারেননি। কোনোমতে খেয়েছেন। শনিবার দুপুরে ধূপখোলা মাঠে দেখা গেল, সৈকত তিনজনকে সঙ্গে নিয়ে তাস খেলছেন। ক্রেতার আনাগোনা বেশ কম। তাই সময় কাটাতেই খেলার আয়োজন। সৈকত বলেন, লাভে যদি গরু দুটি বিক্রি করতে পারেন, তাহলে সব কষ্ট ভুলে হাসতে হাসতে বাড়িতে যাবেন।
ধূপখোলা মাঠে তখন মাঠভর্তি গরু। ক্রেতা আসছেন। দামদর করছেন। তবে বেচাকেনা এখন পর্যন্ত শুরু হয়নি। তবে ঝিনাইদহের সিরাজুল ইসলাম নামের এক ব্যবসায়ীরা দুটি গরু দেখতে ভিড় করছিল কিছু মানুষ। দুটি গরুর দাম তিনি হাঁকিয়েছেন ১১ লাখ টাকা। এ ছাড়া নজরুল নামের ঝিনাইদহের আরেক ব্যবসায়ী গরু এনেছেন ১৬টি। এর মধ্যে একটি গরুর দাম চাইছেন ৫ লাখ টাকা।
একটি গরু নিয়ে ঢাকায় ফরিদপুরের রহিম
৮ মাস আগে ৭০ হাজার টাকায় একটি গরু কেনেন শেখ রহিম। কালো রঙের সেই গরুটি নিয়ে ফরিদপুর থেকে ট্রাকে করে ঢাকার শনির আখড়ার গরুর হাটে এসেছেন। এখন গরুটি তিনি ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করতে চাইছেন। তাঁর ভাষ্য, গরুর খাওয়ানো বাবদ প্রতিদিন তাঁর খরচ হয়েছে ২০০ টাকা। সেই হিসাবে প্রতি মাসে তাঁর খরচ ৬ হাজার টাকা। এত কষ্ট করে গরুটি পুষে যদি লাভ না হয়, তাহলে এর থেকে আর কী দুঃখ থাকতে পারে? রহিমের আশা, বিদেশের গরু যদি বাজারে না আসে, তাহলে লাভে গরু বিক্রি করে বাড়ি যেতে পারবেন।
রহিমের মতো আরেকজন শুক্কুর ব্যাপারী। ফরিদপুর থেকে ১৬টি গরু নিয়ে এসেছেন শনির আখড়া বাজারে। তাঁর মনেও বড় ভয়। বাইরের দেশ থেকে যদি গরু আসে, তাহলে পথে বসে যাবেন তিনি। মন খারাপ করে ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরতে হবে।