ষোড়শ সংশোধনীর রায়েই ঘুরপাক খাচ্ছে বিএনপি
নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে বক্তৃতা-বিবৃতির মধ্যেই আপাতত ঘুরপাক খাচ্ছে বিএনপির রাজনীতি। দলের অন্য কর্মসূচি চাপা পড়ে গেছে। এই রায় নিয়ে সরব থেকে সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে চায় দলটি।
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এক মাসের বেশি সময় ধরে চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান করছেন। ঈদুল আজহার পর তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তিনি ফেরার পর দলের পরবর্তী কর্মকৌশল ঠিক হবে।
এ ছাড়া সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে রিভিউ করা যায় কি না বা বর্তমান সংসদের ১৫৪ জন বিনা নির্বাচনে জয়ী সাংসদের বৈধতা নিয়ে রিট বা আদালতে যাওয়া যায় কি না, এ বিষয়গুলো নিয়ে দলে আলোচনা আছে। তবে দলের একজন নীতিনির্ধারক বলেন, এ বিষয়গুলো নিয়ে বিএনপি দলীয়ভাবে আদালতের দ্বারস্থ হবে না।
বিএনপি গত জুলাই থেকে সদস্য সংগ্রহ কর্মসূচির ওপর গুরুত্ব দিয়েছিল। কিন্তু ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর তাদের সেই কর্মসূচির দিকে নজর কমে গেছে।
গত ১ আগস্ট ষোড়শ সংশোধনী বাতিলসংক্রান্ত পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়কে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে বর্ণনা করে অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ দাবি করে আসছে বিএনপি। গতকালও বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার বৈধতা হারিয়েছে। তাদের পদত্যাগ করা উচিত।
দলটির উচ্চপর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপি মনে করছে, এই রায় সরকারকে বড় ধরনের চাপে ফেলেছে। এই অবস্থায় বিএনপি রায় নিয়ে সরব থেকে সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে চায়। বিএনপি সমর্থক বিভিন্ন সংগঠন এ রায় নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো আলোচনা সভার আয়োজন করছে, যেখানে দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা বক্তব্য দিচ্ছেন। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেও এ বিষয়ে কথা বলা হচ্ছে।
অবশ্য বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ দাবি করেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের মধ্যে বিএনপির রাজনীতি আবদ্ধ নয়। এটি একটি ‘কারেন্ট ইস্যু’। রায় নিয়ে সরকার ও উচ্চ আদালতের মধ্যে একটি সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হয়েছে। এতে বিএনপির হাত নেই। বিএনপি এ রায় নিয়ে রাজনীতি করতে চায় না। তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনকালীন সরকারের রূপরেখা দেবে, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে যাবে, সদস্য সংগ্রহের কাজ চলছে।
গতকাল বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সদ্য কারামুক্ত বরকত উল্লাকে নিয়ে জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দেওয়ার পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় নিয়ে আওয়ামী লীগ যে ধরনের কথাবার্তা বলছে এবং তারা যে কার্যক্রম করছে, তা আইনের শাসনের বিরোধী ও আদালত অবমাননার শামিল। এর উদ্দেশ্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নষ্ট করে একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তন করা। মানুষ তা কখনো মেনে নেবে না।
‘রায়ের পর বিএনপি যে স্বপ্ন দেখেছিল তা উল্টে গেছে’, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় মির্জা ফখরুল বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ের মাধ্যমে সরকারের আসল চেহারা বেরিয়ে গেছে। এ কারণে তাঁরা অমূলক কথাবার্তা বলছেন।
গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, প্রধান বিচারপতির পদত্যাগ চেয়ে রাস্তায় মানববন্ধন হচ্ছে। সরকার বা একটি দলের চাপে পড়ে যদি প্রধান বিচারপতিকে পদত্যাগ করতে হয়, তাহলে বিচার বিভাগ ধ্বংস হয়ে যাবে।
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির নেতারা মনে করেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে সরকার ও আওয়ামী লীগ বড় ধরনের মানসিক চাপে পড়েছে। এর ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার দিকে এখন বিএনপির মূল মনোযোগ।