ছুরি-চাপাতির ঠুং-ঠাং

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: মো. সোলায়মান হাতে ফর্দ নিয়ে এসেছেন। দোকানিকে বোঝাচ্ছেন কোনটার কেমন আকার হবে। এবার দরদামের পালা। তবে সোলায়মানের কাছে দামের চেয়ে মান বড়। যত যা-ই হোক, কোরবানির গরু ‘বানানো’র জন্য ভালো ছুরি-চাপাতি চাই। গরু কেনার পাশাপাশি অনেকেই ছুটছেন ছুরি-চাপাতির খোঁজে। কামারেরাও পার করছেন বছরের সবচেয়ে ব্যস্ত সময়।

তিন দিন পরেই ঈদুল আজহা। হাট জমে উঠেছে। গরু কেনার পাশাপাশি কোরবানির মাংস কাটার জন্য দা-ছুরি-চাপাতির চাহিদা বেড়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শের শাহ সুরী রোডের কাঠপট্টিতে দেখা যায় কামারেরা ব্যস্ত। ঠুং-ঠাং শব্দ তুলে তৈরি হচ্ছে একেকটি ধারালো উপকরণ। আবুল খায়ের তপ্ত লোহা পানিতে ডুবিয়ে নিচ্ছেন। কাঠপট্টির এই দোকানি কাজের ফাঁকেই বলেন, ‘১৫ দিন আগেই অর্ডার পাওয়া শুরু করছি। সারা বছরের এই সময়টাতেই আমরা যা একটু কামাই। এমনে তো খালি বঁটি বেচা হয়।’

ঈদ উপলক্ষে চাপাতি, ছুরি ও বঁটির চাহিদা এখন বেশি। আবুল খায়েরের পাশের দোকানের কামার মো. সালাম বলেন, কেজি হিসেবে এখানে বিক্রি হয়। চাপাতি কেজি হিসেবে মানভেদে দাম ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা পর্যন্ত। পিস হিসেবে বিক্রি হয় ছুরি। দাম ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত। আর দা-বঁটিরও কেজি হিসেবে দাম ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা।

কাঠপট্টির এই কামারের দোকানেই কথা হয় সোলায়মানের সঙ্গে। দোকান থেকে না কিনে নিজেই কামারের কাছে চলে এসেছেন। পছন্দমতো বানিয়ে নেবেন। মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে কামারদের একটি দোকান পাওয়া গেল। কামার বাশার মিয়া বলেন, পাইকারি ছাড়াও খুচরা বিক্রি করেন। আগেভাগেই অনেকে বানিয়ে নিয়েছেন। তবে বললেন, বৃহস্পতি ও শুক্রবারে বেশি বিক্রি হবে।

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে লাইন ধরে ছুরি-চাপাতি-বঁটির অনেকগুলো দোকান। রফিক এন্টারপ্রাইজের রফিকুল ইসলাম একটি বঁটিতে ধার দিচ্ছিলেন। তিনি বলেন, ‘নতুন জিনিস তো কিনেই। তয় আগেরবার যাঁরা কিইন্না নিছেন, তাঁরা এইবার ধারায়ে নিতাছেন।’ এ বাজারেও মানভেদে একেকটার একেক দাম। তিনি বলেন, চাপাতি অনেকে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায়ও বিক্রি করে। কিন্তু ভালো চাপাতি কিনতে গেলে দাম পড়বে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। বঁটি কেজি হিসেবে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। দেশি লোহার ছাড়াও বাজারে প্যাকেটজাত ‘চায়নিজ চাপাতি-ছুরি’ পাওয়া যায়। তবে রফিকুল বললেন, ওগুলোর চেয়ে দেশি চাপাতি-ছুরির চাহিদাই বেশি।

নেয়ামত উল্লাহ কারওয়ান বাজারে চাপাতি কিনতে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘গতবার কিনছি, কিন্তু এইবার গরুর সংখ্যা বাড়ায় চাপাতিও বেশি লাগবে। পরে ভিড় হয়, দামও বাড়ায়ে দেয়। তাই আগেই কিনে নিতেছি।’ বাজারের আরও কয়েকটি দোকান ঘুরে জানা গেল, মাংস কাটার এসব উপকরণ বিক্রি হবে ঈদের দিন সকাল ১০টা পর্যন্ত।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ