বাড়িতে অভিযুক্তদের আচরণ ছিল স্বাভাবিক

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: টাঙ্গাইলে চলন্ত বাসে তরুণীকে ধর্ষণের পর ঘাড় মটকে হত্যার ঘটনার পরও বাড়িতে স্বাভাবিক আচরণ ছিল অভিযুক্তদের। তাই গতকাল মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যম থেকে খবর শুনে তাই বিস্মিত হয়েছেন অভিযুক্ত ধর্ষকদের পরিবারের সদস্যরা। ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন গ্রামের মানুষ। আর দোষীদের বিচার চাইলেন বাসের মালিক।

তরুণীকে হত্যার ঘটনায় টাঙ্গাইলের মধুপুর থানায় করা মামলায় ২৮ আগস্ট বাসের চালক হাবিব (৪৫), সুপারভাইজার সফেদ আলী (৫৫) এবং বাসের তিন সহকারী শামীম (২৬), আকরাম (৩৫) ও জাহাঙ্গীরকে (১৯) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিন সহকারী তরুণীকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা স্বীকার করেন।

এই পাঁচজনের মধ্যে হাবিব, সফর আলী, আকরাম ও জাহাঙ্গীরের বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে। আর শামীমের বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার নন্দীপুর গ্রামে।

আজ বুধবার দুপুরে মির্জাপুর গ্রামে গিয়ে কথা হয় গ্রামবাসী ও অভিযুক্তদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে। অভিযুক্তদের পরিবারের সদস্যরা জানান, ২৫ আগস্ট রাতের ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা তাঁরা সংবাদমাধ্যম থেকে জেনেছেন। ওই ঘটনার পরও অভিযুক্তরা নিজেদের বাড়িতে খুবই স্বাভাবিক আচরণ করেন।

চালক হাবিবের মা জাহানারা বেগম বলেন, ২০ বছর আগে দুই ছেলে আর এক মেয়েকে রেখে স্বামী মারা যান। খুব কষ্ট করে সন্তানদের বড় করেছেন। তিনি বলেন, ‘সেই সন্তান আজ আমারে লজ্জায় ডুবাইল। বিশ্বাস করতে কষ্ট অইতাছে আমার ছেলে এমন কাম করতে পারে।’

জাহাঙ্গীরের মায়ের নামও জাহানারা। বাড়িতে যাওয়ার পর তিনি অস্ফুট স্বরে বললেন, ‘যদি আমার পোলা এই কাম কাইর‌্যা থাকে তাহলে আমার কোনো কিছু বলার নাই। আর সে যদি নির্দোষ হয় তাইলে যেন আমার ছেলেরে ফিরাইয়া দেওয়া হয়।’

আকরাম ও সফর আলী সম্পর্কে মামা-ভাগনে। লজ্জায় বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে চাননি পরিবারের সদস্যরা। জানালেন, এই দুজন জড়িত থাকলে যেন তাঁদের বিচার হয়।

মির্জাপুর গ্রামের মোড়ে মোড়ে মানুষের জটলা। এই ন্যক্কারজনক ঘটনা নিয়ে তাঁরা বিস্ময় ও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। মির্জাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে বসে থাকা এক পরিবহন শ্রমিক বলেন, যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন তাঁরা বাংলাদেশের সব পরিবহন শ্রমিকের মাথা নিচু করেছেন। তাঁদের ফাঁসি হওয়া উচিত।

ময়মনসিংহ-বগুড়া পথে চলাচলকারী ছোঁয়া পরিবহনের যে বাসে ধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে, সেই বাসের মালিক একজন নারী। তাঁর নাম আমেনা খাতুন। তিনি একজন স্কুলশিক্ষক। আমেনা খাতুনের স্বামী মো. খোকন চালক ও সুপারভাইজারের সঙ্গে বেশি যোগাযোগ করতেন। আমেনা খাতুন বলেন, ২০১১ সাল থেকে বাসটি ময়মনসিংহ-বগুড়ায় চলে। চালক হাবিব যোগ দেন ২০১৩ সালে। সফর আলী শুরু থেকেই আছেন। বাকি সহকারীদের ঠিকমতো তিনি চেনেন না। ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার পরও দুই দিন বাসটি চালিয়েছেন হাবিব ও সফর আলী। আমেনা খাতুন বলেন, ‘একজন নারী হিসেবে আমি এই ন্যক্কারজনক ঘটনার সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করছি।’

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ