সাইমনকে নিয়ে গুগল-ফেসবুকের টানাটানি !

আন্তর্জাতিক ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: ১৩ বছর বয়সে মোবাইলের অ্যাপ বানান। ইউটিউবে আছে শিক্ষাবিষয়ক নানান ভিডিও। এরই মধ্য তিন বছর কাজ করেছেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। সেই ২১ বছর বয়সী মাইকেল সাইমনকে নিয়ে গুগল ও ফেসবুকের টানাটানি শুরু হয়েছিল। কিন্তু সাইমন নতুন প্রতিষ্ঠান, অর্থাৎ গুগলে যোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন।

মাইকেল সাইমন ১৭ বছর বয়সে শিক্ষানবিশ কর্মকর্তা হিসেবে কাজ শুরু করেন ফেসবুকে। পরের বছর প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি স্থায়ী হয় ফেসবুকে। তিন বছর ফেসবুকে কাজ শেষে যেই ফেসবুককে বিদায় জানাতে চাচ্ছিলেন মাইকেল, তখনই তাঁকে ছাড়তে নারাজ ফেসবুক। আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সাইমনের পেছনে ছুটেছে। কিন্তু তিনি বেছে নিয়েছেন গুগলকেই।

ফেসবুকে মাইকেল সাইমন একজন প্রোডাক্ট ম্যানেজার বা পণ্য ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেছেন। ফেসবুকে তাঁর অন্যতম কাজ ছিল নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা কীভাবে নিজেদের ফোন ব্যবহার করে, তা নিয়ে। কিশোর-কিশোরীদের জন্য ফেসবুকের পরীক্ষামূলক পণ্যগুলোর ব্যাপারেও পরামর্শ দিতেন তিনি। এ ছাড়া ফেসবুকের নির্বাহী কর্মকর্তাদের সময়ের চলমান ট্রেন্ড বা প্রবণতাগুলোর ব্যাপারেও বোঝাতেন সাইমন। ফেসবুকেরও কনিষ্ঠতম সদস্যও ছিলেন তিনি। শিক্ষানবিশ হিসেবে কাজ শুরুর পর মার্ক জাকারবার্গ নিজেই দেখা করেছিলেন সাইমনের সঙ্গে।

সাইমন ফেসবুকের কল্যাণে লাইমলাইটে আসেন। ইউটিউবে তাঁর টিউটোরিয়াল ভিডিওগুলো বেশ জনপ্রিয়। ১৩ বছর বয়সে মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করার পর তাঁর মাসিক আয় ছিল ১২ হাজার ডলার। এই বয়সে আইফোনের জনপ্রিয় অ্যাপসও বানান তিনি।

সাইমন গুগলের সবচেয়ে ছোট পণ্য ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ শুরু করবেন। সেখানে ভয়েসভিত্তিক এ সেবাকাজে তাঁর পদের নাম ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট’ বা সহকারী।

গুগলের পণ্য ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করার কথা সাইমন জানান ফেসবুকের এক পোস্টে।

এদিকে সার্চ ইঞ্জিন জায়ান্ট গুগল জানিয়েছে, তাদের নতুন ভয়েসভিত্তিক সেবা ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট’-এ যোগ দেবেন মাইকেল। মাইকেল চাকরিতে যোগ দিলে তিনিই হবেন সংস্থার ইতিহাসের কনিষ্ঠতম পণ্য ব্যবস্থাপক। এ মুহূর্তে ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট’-এর জন্য প্রচুর লোক নিয়োগ করা হচ্ছে গুগলে। মনে করা হচ্ছে, এই মুহূর্তে আমাজন, অ্যালেক্সা ও অ্যাপলের অন্যতম প্রতিপক্ষ এই ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট’। গুগলের প্রধান নির্বাহী সুন্দর পিচাইয়ের কাছে ‘অ্যাসিস্ট্যান্ট’ বা সহকারী পদটি শীর্ষ গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ। কারণ, এ পদটি নিজস্ব পণ্য এবং অন্যান্য কোম্পানির পণ্য নিয়ে কাজ করে। কারণ, আমাজন, আলেক্সা ও অ্যাপলের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরদের মধ্য কঠোর প্রতিযোগিতার সম্মুখীন।

ছোটবেলার সাইমন
সাইমনের বাবা-মা পেরু ও বলিভিয়ার অভিবাসী। সাইমনের বাবা-মা পেরুতে একটি রেস্তোরাঁ খোলেন। বাবা-মা রেস্তোরাঁয় ব্যস্ত থাকায় সময় কাটাতে সাইমন আশ্রয় নেন ইন্টারনেট ও কম্পিউটার গেমের। এক ফেসবুক পোস্টে সাইমন বলেন, ‘আমার কোনো দিনই সন্দেহ ছিল না যে ইন্টারনেটে সব প্রশ্নের উত্তর আছে।’ নতুন কিছু করার স্বপ্ন নিয়ে তাঁর বাবা-মা যুক্তরাষ্ট্রে আসেন।

সেই ছোটবেলা অনলাইন গেম নিয়ে ব্লগ লেখা শুরু করেন সাইমন। পরে এই গেমের মোবাইল অ্যাপ বানান। এই অ্যাপ প্রথম দিনে ৪২ কপি বিক্রি হয়। পরদিন ১০০ কপি এবং তৃতীয় দিনে বিক্রি গিয়ে ঠেকে ১৫০-এ। দ্রুতই এ অ্যাপ বিক্রির ক্ষেত্রে সেরা ১০-এর রেকর্ড ভেঙে দেয়। তবে মজার ব্যাপার হচ্ছে, বাবাকে এ খবর জানানোর পর কোনো বিকার ছিল না। কারণ, তাঁর বাবার এ ব্যাপারে খুব বেশি ওয়াকিবহাল ছিলেন না।

ওই সময়ের কথা বর্ণনা করে সাইমন বলছিলেন, ‘প্রথম মাসের পরই ঘটল আসল ঘটনা। অ্যাপল আমাকে পাঁচ হাজার ডলারের একটি চেক পাঠায়। মাকে এ কথা বললে তিনি বলেন, ‘চোখকে বিশ্বাসই করতে পারছি না।’ তিনি খুব গর্বিত ছিলেন এবং একই সঙ্গে আবার তিনি কিছুটা ধাক্কাও খান।

১৪ বছর বয়সে সাইমনের মাসিক আয় দাঁড়ায় ১২ হাজার ডলারে। ‘পুরো অর্থটাই আমি আমার পরিবারের কাছে দিয়ে দিতাম।’ এতটুকু বয়সে এত অর্থ আয়ের কারণে আশপাশে লোকজনের কাছে সাইমন রীতিমতো হিরো। সাফল্যর জন্য এই বয়সে গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিতে দিতে কিছু ক্লান্তও ছিলেন সাইমন।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ