ঢিল লাগলো ভাবমূর্তির কাচেও !

নিউজ ডেস্ক, এবিসি নিউজ বিডি, ঢাকা: বিস্ময় হয়েই এল খবরটা। গতকাল জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়াম থেকে চট্টগ্রাম টেস্টের প্রথম দিনের খেলা শেষ করে হোটেলে ফেরার পথে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলের বাসে কে বা কারা ঢিল মেরেছে! ঢিলের আঘাতে বাসের একটি কাচও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। নিরাপত্তা নিয়ে খুঁতখুঁতে অস্ট্রেলীয় ক্রিকেট দলের বাসে এই ‘হামলা’ অস্বস্তিতে ফেলেছে বাংলাদেশের নিরাপত্তাব্যবস্থাকে। বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে আয়োজক বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে। বজ্র আঁটুনির মধ্যে যে ফসকা গেরো থাকতে পারে, সেটিও বোঝা গেল। এই ঢিল বুঝিয়ে গেল, সামান্যতম ঢিলেমিরও সুযোগ নেই।

অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে এই সিরিজটা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল আজ থেকে দুই বছর আগে। কিন্তু নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে অস্ট্রেলিয়া সে সময় সিরিজটা স্থগিত করেছিল। দুই বছর পর অনেক হিসাব-নিকাশ করে অস্ট্রেলিয়া যখন বাংলাদেশে এল, ঠিক তখনই এই ‘ঢিল-কাণ্ড’ আমাদের ভাবমূর্তির বড় একটা ক্ষতি।

২০১১ সালে ঠিক এমনই একটা ঘটনার কথা নিশ্চয়ই মনে আছে ক্রিকেটপ্রেমীদের। বিশ্বকাপে ঢাকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশ মাত্র ৫৮ রানে গুটিয়ে যাওয়ার পর ক্যারিবীয় দলের টিম বাসেও ঢিল ছোড়া হয়েছিল। তখন ক্রিস গেইলের টুইট সারা ক্রিকেট বিশ্বে তোলপাড় ফেলেছিল। সে তুলনায় বাংলাদেশের ভাগ্য ভালো বলতেই হবে—অস্ট্রেলিয়া বিষয়টিকে নিরাপত্তাব্যবস্থার ঘাটতি হিসেবে নিচ্ছে না। তবে বাংলাদেশের অবশ্য সতর্ক হতে হবে। অতিথির দেখভালের সুনাম রক্ষার দায় তো বাংলাদেশেরই।

এই ঢিল কে কেন ছুড়েছে, তা এখনো জানা যায়নি। যে বা যারাই ঢিল ছুড়ুক, তাদের দায় আছে। দায় আছে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদেরও। এক-দুজনের এমন কাণ্ডের দায় পুরো বাংলাদেশকে নিতে হয়। এ রকম এক-দুটি ‌‘বিচ্ছিন্ন’ ঘটনায় দাগ পড়ে ক্রিকেটপাগল মানুষের খেলাটির প্রতি ভালোবাসার ওপর।

২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দলও বাংলাদেশে এসে ‘বর্ণবাদী’ মন্তব্যের অভিযোগ তুলেছিল। গ্যালারি থেকে তাদের নির্দিষ্ট কিছু ক্রিকেটারের গায়ের রং নিয়ে বাজে চিৎকার করা হয়েছিল; দক্ষিণ আফ্রিকার সংস্কৃতির জন্য যেটি খুবই স্পর্শকাতর। বাসে ঢিল ছোড়ার চেয়েও বড় ঘটনা।

কখনো কখনো সমর্থকদের অতি উৎসাহ ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠে দেশের ক্রিকেটের জন্য। অথচ বাংলাদেশের মানুষের ক্রিকেট প্রেম কিংবা আয়োজক বাংলাদেশের সুনাম সারা ক্রিকেট বিশ্বেই আছে।

১৯৮৮ সালে এশিয়া কাপের সফল আয়োজক হয়ে সুনাম কুড়িয়েছিল বাংলাদেশ। ১৯৯৮ সালে ইনডিপেন্ডেনস কাপ, এরপর নকআউট বিশ্বকাপের মতো বড় আসরের আয়োজন। এমনকি টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর বাংলাদেশ যখন একের পর এক ম্যাচ হারছে, তখনো গ্যালারি থেকে একটি বোতলও মাঠে উড়ে আসতে দেখা যায়নি। বাংলাদেশের ক্রিকেটের আজকের পর্যায়ে আসার পেছনে সমর্থকদের এই ভালোবাসা আর নিষ্ঠার আছে বড় ভূমিকা। অথচ বাংলাদেশ দল যখন আরও পরিণত হয়ে উঠছে, তখনই সমর্থকদের কিছু অংশ থেকে অপ্রত্যাশিত অপরিণত আচরণের নজির মিলেছে। কখনো কখনো যার শিকার হয়েছেন দেশের ক্রিকেটাররাও।

গত বছর গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলার পর অক্টোবরে ইংলিশ ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর হুমকির মুখেই পড়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সর্বোচ্চ নিরাপত্তার আশ্বাস পেয়ে তারা বাংলাদেশে আসে। আমাদের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে সে সময় ইংলিশ ক্রিকেটাররা বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে নিজেদের সন্তুষ্টির কথা জানিয়েছিলেন। ধন্যবাদ দিয়েছিলেন বাংলাদেশের মানুষকে নিরাপত্তার কড়াকড়ির কারণে দৈনন্দিন জীবনাচারে অসুবিধা মেনে নেওয়ার জন্য। ইংলিশ ক্রিকেট দলের সেই অভিজ্ঞতা অস্ট্রেলিয়ার এবারের সফরের পেছনে বড় ভূমিকা পালন করেছে।

এর মধ্যে এমন ঘটনা কিছুতেই প্রত্যাশিত নয়।

Leave a Reply

Facebook
ব্রেকিং নিউজ